আইপিএল দানব ও একজন পূজারা

যত সময় গড়াচ্ছে ক্রিকেট যেনো ততই তাঁর গতি বাড়াচ্ছে। বলা হয় চার ছক্কার ক্রিকেটেই অধিক আগ্রহ ক্রিকেটপ্রেমীদের, টেস্ট ক্রিকেট সেখানে বাসি।

আর ফ্রাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট গুলো ক্রিকেটের গতি বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুন। আর সেটা যদি হয় ইন্ডিয়ান প্রিমিয়াল লিগের (আইপিএল) মত আসর তাহলে তো কথাই নেই। কোটি কোটি রূপি দিয়ে দল গুলো কিনে নিচ্ছে দুনিয়ার মারকুটে সব ব্যাটসম্যানদের। এখানে বোলারের একটি বাউন্সারের জবাব যে পুল করেই দিতেই হয়।

ভারতের অন্যতম সেরা টেস্ট ব্যাটসম্যান চেতেশ্বর পূজারা অবশ্য সেই মারাকাটারি ক্রিকেট দুনিয়া থেকে বেশ দূরে। হয়তো তিনি কখনো আসতেও চাননি সেভাবে। ভারতের হয়ে লম্বা সময় টেস্ট খেলাটাই তাঁর ধ্যান-জ্ঞান। ফলে আইসিসি টেস্ট র‍্যাংকিংয়েও তিনি উঠে এসেছেন ছয় নম্বরে। ভীষণ রকমের টেকনিক্যাল এই ব্যাটসম্যান ধৈর্য্য ধরে ব্যাট করতে পারেন লম্বা সময় ধরে।

তাই খুব স্বাভাবিকভাবেই আইপিএলে তাঁকে নিয়ে কোনো মাতামাতি নেই। প্রতিটা দল জানে পূজারা ভারতের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান কিন্তু এই মঞ্চটা তাঁর জন্য নয়। টানা সাত বছর নিলামে কোনো দল পাননি পূজারা। তবে এবার নিলামে তাঁর নাম উঠলে চেন্নাই সুপার কিংস ভিত্তি মূল্য ৫০ লক্ষ রূপিতে তাঁকে কিনতে আগ্রহ দেখায়। তবে অন্য কোনো দল পূজারা জন্য লড়াই না করলে চেন্নাইয়েই বিক্রি হন এই ব্যাটসম্যান।

কেও লড়াই না করলেও নিলামঘরের প্রতিটা ফ্র্যাঞ্চাইজি হাততালি দিয়ে পূজারার এই বিক্রি হওয়াটাকে রীতিমত উদযাপন করে। সুন্দর ব্যাপার হচ্ছে প্রতিটা দল যে জানে পূজারা সেরাদের সেরা, তাঁর প্রতি যে দলগুলোর সম্মানবোধ, টেস্ট ক্রিকেটের প্রতি যে সম্মানবোধ সেটাই প্রকাশ পায় তখন।

নিলামে বিক্রি হওয়ার পর একটি ভিডিও বার্তায় পূজারা বলেন, ‘আইপিএলে ফিরতে পেরে বেশ ভালো লাগছে। হলুদ জার্সিতে মাঠে নামার জন্য মুখিয়ে আছি। বিশেষ করে মাহি ভাইয়ের (মহেন্দ্র সিং ধোনি) দলে খেলতে পারবো ভেবে আরো ভালো লাগছে। উনিই আমার প্রথম টেস্ট ক্যাপ্টেন ছিলেন।’

তবে পূজারা মনে করেন টি-টোয়েন্টিতে একটু মনোযোগ দিতে পারলে আইপিএলেও ভালো করা সম্ভব। তিনি আরো বলেন, ‘এটা আসলে টেস্ট ক্রিকেটের মাইন্ডসেট চেঞ্জ করে আইপিএলের মাইন্ডসেটে শিফট করার ব্যাপার। এটা পুরোপরি মানসিক ব্যাপার। এই প্রস্তুতিটুকু নিতে পারলে আইপিএলেও ভালো খেলতে পারব।’

চেতেশ্বর পূজারা সর্বশেষ আইপিএল খেলেন ২০১৪ সালে। এর আগে তাঁর খেলা ৩০ টি আইপিএল ম্যাচে করেন ৩৯০ রান। ব্যাটিং গড় বিশের ওপরে। স্ট্রাইক রেট ১০০’র কাছাকাছি। তাই, এরপর আর তাঁকে দেখা যায়নি ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক এই টি-টোয়েন্টি আসরে।

ভারতের হয়ে পূজারার টেস্ট অভিষেক হয় ২০১০ সালে। এখন পর্যন্ত ভারতের হয়ে মোট ৮৩ টি টেস্ট খেলেছেন। যেখানে ৪৭ গড়ে তাঁর সংগ্রহ ৬২২৭ রান। টেস্টে তাঁর ১৮ টি সেঞ্চুরি ও তিনটি ডাবল সেঞ্চুরির ইনিংস রয়েছে।

যতই টেস্টকে ধ্যানজ্ঞান মানুন না কেন, পূজারা বরাবরই চান আইপিএলে নিয়মিত হতে। পুজারার বাবা ও সাবেক ক্রিকেটার অরবিন্দ পূজারা বলেন, ‘অনেকদিন ধরেই ওর আইপিএল খেলার খুব ইচ্ছা। এটা ভাল ব্যাপার যে, অবশেষে ও সুযোগ পাচ্ছে। কেউ যখন এই মঞ্চটা পায়, তখন সে অবশ্যই নিজেকে উজাড় করে দেওয়ার চেষ্টা করে। আমি জানি সে মানসিক ভাবে প্রস্তুত। ওর দারুণ একটা ক্রিকেট মস্তিষ্ক আছে।’

সেই মস্তিষ্কের প্রভাব পড়ুক এবার আইপিএলেও!

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link