মুখ থুবড়ে পড়া স্কটল্যান্ডের ব্যাটিং শিবিরে ত্রাণকর্তা হিসেবে এসেছিলেন ক্রিস গ্রিভস। ব্যাট হাতে দুর্দান্ত ইনিংসের পর লেগ স্পিন ঘূর্ণিতে বাংলাদেশের দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান সাকিব-মুশফিকের উইকেট তুলে নিয়ে স্কটল্যান্ডকে ম্যাচে ভীত গড়ে দেন। ব্যাকফুটে থাকা দলকে খাদের কিনারা থেকে টেনে তুলে নিজের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে একা হাতেই জেতালেন দলকে।
ওমানের আল আমেরাত স্টেডিয়ামে টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে সাকিব-মেহেদিদের স্পিন জাদুতে মাত্র ৫৩ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে স্কটিশরা। ধ্বংসস্তুপে দলের জন্য আশার আলো হয়ে আসেন গ্রিভস। একপ্রান্তে ধরলেন দলের হাল!
বাংলাদেশি বোলারদের পাত্তা না দিয়ে খেললেন ৪ চার ও ২ ছয়ে ১৬০ স্ট্রাইক রেটে ২৮ বলে ৪৫ রানের অনবদ্য এক ইনিংস। তাসকিন-মুস্তাফিজদের একা হাতেই সামলে নিয়ে মেরেছেন বাউন্ডারি। লোয়ার অর্ডারে তাঁর অবিশ্বাস্য ইনিংসই দলকে পুঁজি এনে দেয় ১৪০ রানের!
পরবর্তীতে বল হাতে সাকিব-মুশফিকের ৪৭ রানের জুটি ভাঙেন গ্রিভস। সাকিবের পর বোল্ড করে ফেরান মুশফিককেও। ব্যাট হাতে দাপুটে ইনিংসের পর বল হাতে ৩ ওভারে ১৯ রানে ২ উইকেট! নিজেদের প্রথম ম্যাচে খেলতে নেমেই বাংলাদেশকে ৬ রানে হারিয়ে দারুন সূচনা স্কটল্যান্ডের। ম্যাচ থেকে ছিটকে যাওয়া দলকে ম্যাচে ফিরিয়ে একক আধিপত্য বিস্তার করে জয় এনে দেওয়া গ্রিভস ছিলেন ম্যাচ সেরা।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এটি গ্রিভসের প্রথম ম্যাচ! স্রেফ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপই নয়, আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে এটি ছিলো তার মাত্র দ্বিতীয় ম্যাচ। ক্রিকেট আসার আগে ছিলেন ডেলিভারিম্যান! বিশ্বব্যাপি জনপ্রিয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আমাজনের পার্সেল ডেলিভারি করতেন তিনি। সেখান থেকেই আসেন ক্রিকেট! আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পদচারণার এখনো দশ দিন হয়নি!
গেলো সপ্তাহে ৮ অক্টোবর পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে দুবাইতে একমাত্র টি-টোয়েন্টিতে অভিষিক্ত হন ক্রিস গ্রিভস। ঘরোয়া ক্রিকেটে পথচলাটাও খুব বেশি সময় হয়নি। ২০১৯ সালে লিস্ট এ তে অভিষেক! ঘরোয়া ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত খেলেছেন মোটে ৭ ম্যাচ। বল হাতে ৫ উইকেট আর ব্যাট হাতে করেছেন ৯৫ রান! এখনো স্কটল্যান্ডের সাথে তিনি অফিসিয়ালি চুক্তিবদ্ধও হননি।
ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস কিংবা স্পেল বলতে বাংলাদেশের বিপক্ষে নিজের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক ম্যাচটি! পাওয়ার হিটিং অ্যাবিলিটি থাকলেও খুব বড় ইনিংস তেমন দেখা যায়নি তার কাছ থেকে। তবে বিশ্বকাপের মঞ্চে সুযোগ পেয়েই করলেন বাজিমাত। এক ম্যাচ দিয়েই ক্রিকেট বিশ্বের কাছে হয়ে গেলেন পরিচিত এক নাম!
আর ম্যাচ শেষে তিনি জানালেন দলের জয়ে অবদান রাখতে পারাটা তিনি বেশ উপভোগই করেছেন। গ্রিভস বলেন, ‘সত্যি বলতে আমরা খুব কঠিন অবস্থায় ছিলাম। ওই জায়গা থেকে পুনরায় ইনিংস বিল্ডআপ করে শেষ পর্যন্ত কতটুক যাওয়া যায় সেটাই ছিলো লক্ষ্য। আমি বেশ খুশি সেই দায়িত্বটা পালন করতে পেরে। ওই স্কোর করার কারণে বোলারদের জন্যও কিছু করাটা সহজ হয়ে যায়। এটা অসাধারণ একটা ম্যাচ ছিলো। আমি মনে করি এটা আমার দিন ছিলো। যেকোনো দিন আমাদের স্কোয়াডের অন্য কেউ এটা করতে পারতো। আমি বেশ খুশি যেভাবে দলের জয়ে অবদান রাখতে পেরেছি। সত্যি অবিশ্বাস্য! আমি এটা সত্যি খুব উপভোগ করেছি। আশা করি এমন দিন আরো আসবে।’
স্কটল্যান্ডের সামনে বড় সুযোগ বিশ্বকাপের মূল পর্বে যাওয়ার। পরের দুই ম্যাচের দু’টিতে সহজ জয় কিংবা একটিতে ভালো রান রেটে জিততে পারলেই স্কটিশরা পৌঁছে যাবে বিশ্বকাপের মূল পর্বে। আর সেই যাত্রার সারথি হতে চান গ্রিভস। নিজের সেরাটা দিয়ে বিশ্বকাপ মঞ্চে দেখাতে চান নিজের সামর্থ্যের সবটুকু।