জীবন বাউন্সার সামলে…

১৯৯৭ সাল। দক্ষিণ মুম্বাইয়ের ময়দানে এক স্থানীয় ক্রিকেট ম্যাচে বল হাতে দৌড়ে আসছে বছর পঁচিশের পেশীবহুল গড়নের অধিকারী দ্রুতগামী এক পেস বোলার। পেস বোলার ছেলেটি ময়দানে ‘আন্না’ নামেই পরিচিত। ছেলেটি সকালে ময়দানে ক্রিকেট খেলে সোজা চলে যায় স্থানীয় এক রেস্তোরাঁয় পরিচারকের কাজ করতে।

১৯৯৭ সাল। দক্ষিণ মুম্বাইয়ের ময়দানে এক স্থানীয় ক্রিকেট ম্যাচে বল হাতে দৌড়ে আসছে বছর পঁচিশের পেশীবহুল গড়নের অধিকারী দ্রুতগামী এক পেস বোলার। পেস বোলার ছেলেটি ময়দানে ‘আন্না’ নামেই পরিচিত। ছেলেটি সকালে ময়দানে ক্রিকেট খেলে সোজা চলে যায় স্থানীয় এক রেস্তোরাঁয় পরিচারকের কাজ করতে।

আন্নার দ্রুতগামী বল খেলার জন্য স্টান্স নিল এক বছর নয়েকের ছেলে – তিনি আজিঙ্কা রাহানে । বেঁটেখাটো চেহারার ছেলেটার ব্যাটটা তার পক্ষে যথেষ্টই বড়। আন্না ছুটে এসে প্রথম বলটাই করলো বাউন্সার। আর, সেই বাউন্সার আছড়ে পড়লো ওই খুদে ব্যাটসম্যানটির মাথায় ঢলঢল করতে থাকা হেলমেটে। তৎক্ষনাৎ মাঠে উপস্থিত সবাই মিলে ছুটলো ছেলেটার কাছে।

রাহানে ততক্ষণে চিৎকার করে কাঁদতে লেগেছে। সতীর্থরা ছেলেটিকে জল খাওয়ালো এবং ব্যাটিং ছেড়ে বাইরে গিয়ে পড়ে বল নরম হয়ে গেলে আবার ব্যাট করতে নামতে উপদেশ দিল। বোলার আন্নাও বললো যে সে এই বাচ্চাটাকে আর বোলিং করতে চায় না, কারণ আরো বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।

খুদে রাহানে একটা রান পর্যন্ত করলো না। শুধু মিনিট পনেরো ধরে টানা কেঁদে চললো। একসময় বিরক্ত হয়ে আম্পায়ার ছেলেটিকে বললেন যে হয় আবার ব্যাট ধরো না হয় বিদায় নাও। ছেলেটা আম্পায়ারের চূড়ান্ত নির্দেশ শুনেই উঠে দাঁড়ালো, মুখটা জল দিয়ে ধুলো, জামার হাতা দিয়ে ভেজা মুখটা মুছে নিয়ে মাথায় হেলমেটটা গলিয়ে নিয়ে আবার স্টান্স নিল।

আন্না আবার বল হাতে ছুটে আসলো। পরপর ওভারের বাকি পাঁচটা বল করলো। প্রত্যেকটা বলের একই পরিণতি হলো – বাউন্ডারি, বাউন্ডারি বাউন্ডারি, বাউন্ডারি, বাউন্ডারি। কোনটা কভার ড্রাইভে তো কোনটা ফ্লিকে বাউন্ডারিতে আছড়ে পড়ল।

এবার ২০১৩ সাল। সেদিনের সেই খুদে তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের মাত্র তৃতীয় টেস্ট খেলতে নেমে পেসারদের স্বর্গরাজ্য ডারবানে সমকালীন বিশ্বের শ্রেষ্ঠ পেস বোলার ডেল স্টেইনের বাউন্সার ডাক করতে গিয়ে হেলমেটে খেল। মাত্র পাঁচ রানে ব্যাটিংরত ছেলেটা এবার আর কাঁদলো না। ঠিক চার বলের মাথায় বোলার আবার বাউন্সার দিল। ছেলেটা বাউন্সারটাকে পুল করে বাউন্ডারিতে আছড়ে ফেললো।

কাট টু ২০২০ সাল। কঠিনতম অজি সফরে প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৩৬ রানে অলআউট হয়ে নাস্তানাবুদ হয়ে সিরিজে পিছিয়ে পড়া ভারতীয় দলের অধিনায়ক বিরাট কোহলি পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী ব্যক্তিগত কারণে দেশে ফিরে আসায় দুর্বলতর হয়ে পড়া কাঁধ ঝুঁকে যাওয়া দলের দিকে ধেয়ে আসা সমালোচনার বাউন্সারকে সেদিনের সেই রাহানেই অস্থায়ী অধিনায়কের কণ্টকাকীর্ণ মুকুট পরে ব্যাট হাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে জয়ের বাউন্ডারিতে আছড়ে ফেলে সিরিজে অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তন ঘটালো।

আসলে, মুম্বাইয়ের ময়দান হোক বা ডারবানের চিরহরিৎ বাইশ গজ কিংবা দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া কঠিনতম অজি সফর, প্রত্যাবর্তনটা তো ছেলেটার স্বাভাবিক প্রতিবর্ত ক্রিয়া। আজিঙ্কা রাহানের এই সময়টা ভাল যাচ্ছে না। এবার হবে নাকি মোহনীয় কোনো প্রত্যাবর্তন?

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...