আত্মবিশ্বাস-ধৈর্য্য-পরিশ্রম-সাফল্য!

সবশেষ আন্তর্জাতিক ওয়াডে ম্যাচ খেলেছিলেন ২০১৭ সালের অক্টোবরে। প্রায় ১১৬৪ দিন পর সুযোগ পেলেন জাতীয় দলে, ওয়ানডেতে! মাঝে নিদাহাস ট্রফি খেললেও আরেকটু সহজ ভাবে বললে প্রায় তিন বছরের লম্বা বিরতি কাটিয়ে ওয়ানডে একাদশে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। চোটের সাথে সাথে ভালো যাচ্ছিলো না ফর্মটাও। সব মিলিয়ে ২৫ জানুয়ারির ম্যাচটা ছিল তার জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

হ্যাঁ, বলছিলাম তিন বছর চোট, বাজে ফর্ম সবকিছু পাশ কাটিয়ে জাতীয় দলে ফেরা তাসকিন আহমেদের কথা।

শুধু চোঁট কিংবা বাজে ফর্ম নয় ভাগ্যটাও তার সহায় হচ্ছিলো না! গেলো বিশ্বকাপে আগে ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিরেই নজরকাড়া পার্ফরমেন্স করলেও বিশ্বকাপের স্কোয়াডে তিনি ছিলেন উপেক্ষিত। বিশ্বকাপের স্কোয়াডে সুযোগ না পেয়ে মিডিয়ার সামনে আবেগ ধরে রাখতে না পেরে অশ্রসিক্ত হয়েছিলেন তিনি!

এরপর বিশ্বজুড়ে করোনার হানায় ক্রিকেট তো বটেই থমকে গেলো পুরো বিশ্ব। সবকিছু থেমে গেলেও তাসকিন চালিয়ে যান অনুশীলন। নিয়মিত জিম সেশন সহ নিয়মিত বোলিং প্র‍্যাকটিস করতেন নেটে। স্বপ্ন একটাই আবার যখন বাংলাদেশ জাতীয় দলের জার্সি গায়ে মাঠে নামবেন তখন তিনিও হবেন সে দলের সদস্য। প্রয়োজন শুধু নিজেকে প্রমাণের একটি সুযোগ। সেট পেতে অবশ্য বেশি দেরি হয়নি!

করোনার মধ্যেই জৈব সুরক্ষা বাবলে ক্রিকেটারদের রেখে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত হয় বিসিবি প্রেসিডেন্ট কাপ ও বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ! আর সুযোগ পেয়েই নিজেকে প্রমাণ করলেন তাসকিন।

বিসিবি প্রেসিডেন্ট কাপে পাঁচ ম্যাচ খেলে ৪১ ওভার করে রান দিয়েছেন ১৮৪। ৪.৪৮ ইকোনমিতে নিয়েছেন সাত উইকেট। সেরা বোলিং ফিগার ৩৬ রানে ৪ উইকেট! সবচেয়ে দেখার বিষয় ছিলো ১৪০ এর আশেপাশে গতি আর টাইট লাইন এবং লেংথ। প্রেসিডেন্ট কাপে ঈর্ষনীয় পার্ফরমেন্স করে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপেও সুযোগ পেলেন ফরচুন বরিশালের হয়ে খেলার। ৯ ম্যাচে ৩৫.৫ বল করে ৩০৩ রানের বিনিময়ে নিয়েছেন ৭ উইকেট। ইকনোমি ৮.৪৫, সেরা ফিগার ২ উইকেটে ৩৩ রান।

পরিসংখ্যান বিচারে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে সেভাবে ছন্দ ধরে রাখতে না পারলেও প্রায় ম্যাচেই বেশ কিছু ওভারে তিনি দূর্দান্ত বল করেছেন, তবে ডেথ ওভার গুলোতে বেশ মারও খেয়েছেন। তবে সবমিলিয়ে সন্তুষ্ট করতে পেরেছিলেন কোচ, নির্বাচক সহ বিসিবি প্রধানের। আর জায়গাও পেয়ে গেলেন উইন্ডিজের বিপক্ষে জাতীয় দলে।

আত্ববিশ্বাস, ধৈর্য্য, পরিশ্রম সব মিলিয়ে জাতীয় দলে ঢোকার যে লড়াই টা গত তিন বছর করেছেন তা সার্থক হলো সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেতে। বাদ পড়ার ম্যাচে স্টেডিয়ামে দর্শকে টুইটুম্বুর হলেও প্রর্তাবর্তনের ম্যাচে দর্শকশূন্য গ্যালারি আর নিস্তব্ধ স্টেডিয়াম। রুবেল হোসেনের জায়গায় শেষ ওয়ানডেতে সুযোগ পেলেন খেলার।

দীর্ঘদিন পর দলে ফেরার ম্যাচে নিজেকে উজাড় করে দিতে চাইবেন সেটাই স্বাভাবিক। তবে খর্ব শক্তির এই উইন্ডিজ দলের বিপক্ষে ৮.২ ওভারে ১ মেইডেনে ৩২ রানে নিয়েছেন একটি উইকেট। শুধু লাইন-লেংথই নয়, ১৪৫+ গতিতেও করেছেন বোলিং! সাকিব-তামিম-মিরাজদের পার্ফরমেন্সের কাছে এটি নগন্য হলেও তাসকিনের জন্য এ যেনো স্বস্তির ম্যাচ।

তরুণ হাসান মাহমুদ, শরিফুল ইসলাম, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন কিংবা অভিজ্ঞ মুস্তাফিজুর রহমান, রুবেল হোসেনদের সাথে এক প্রকার প্রতিযোগিতা করেই সুযোগ পেয়েছেন দলে। দলে জায়গা টিকিয়ে রাখতে হলে ঈর্ষনীয় পার্ফরমেন্স দেখিয়ে মন জয় করতে হবে নির্বাচকদের, সব মিলিয়ে দীর্ঘ বিরতির পর তাসকিনের বোলিং পারফরম্যান্স অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার।

২০১৭ সালে ইস্ট লন্ডনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেতে বাদ পড়ার আগের ম্যাচে ৭ ওভারে ৬৬ রানে দুই উইকেট নেন তাসকিন! সে ম্যাচে ২০০ রানের বিশাল ব্যবধানে প্রোটিয়াদের কাছে হার মানে বাংলাদেশ দল। ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশের লজ্জায়ও পড়ে। এরপরের সিরিজেই দলে নেই তাসকিন, এরপর চোট আর ভাগ্য সহায় না হওয়ায় তিন বছর গায়ে জড়াতে পারেননি ওয়ানডে দলের জার্সি।

আসন্ন টি-টেন লিগে খেলার সুযোগ পেলেও যাচ্ছেন না তাসকিন। বিসিবি থেকে পাননি অনাপত্তিপত্র! কারণ তিনি থাকছেন উইন্ডিজের বিপক্ষে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের দলে। ওয়ানডের পর সুযোগ পেলে টেস্টেও দূর্দান্ত পার্ফরমেন্স দেখিয়ে প্রত্যাবর্তন ম্যাচে সবার নজর কাড়বেন প্রত্যাশা থাকবে ক্রিকেট ভক্ত ও সমর্থকদের। তাসকিনের ক্যারিয়ারের এই দ্বিতীয় ধাপ সফল হলে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে বাংলাদেশ দলেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link