চার বছর আগের কথা।
২০১৭ সালের আগস্টে ২৬ বছর বয়সে ডেভন কনওয়ে খেলছিলেন ল্যাঙ্কাশায়ার লিগে; নেলসনের প্রো ক্রিকেটার হিসেবে। ইংল্যান্ডের ক্লাব ক্রিকেট তার কাছে নতুন নয়। সেই ২০১০ সাল থেকেই খেলছেন সেখানে। সমারসেটের দ্বিতীয় একাদশে খেলেছেন।
এরপর ডার্বিশায়ার লিগ, বোল্টন লিগ, ইস্ট অ্যাংলিয়ান প্রিমিয়ার লিগ। কনওয়ের মতে, জীবনে অনেক কিছু শিখিয়েছে তাকে। সেসব লিগে খেলার অভিজ্ঞতা- দায়িত্ব নেওয়া, যেটির জন্য টাকা পাচ্ছেন, সে কাজটা ঠিকঠাক করা, কোথায় খরচ করতে হবে, কোথায় জমাতে হবে।
জন্ম দক্ষিণ আফ্রিকায়, বেড়ে ওঠা দক্ষিণ আফ্রিকায়। পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরুও সেখানেই। গউটেংয়ের হয়ে প্রথম শ্রেণিতে অভিষেকের সময় তার সতীর্থ ছিলেন টেমবা বাভুমা; এখনকার দক্ষিণ আফ্রিকার সীমিত ওভারের অধিনায়ক। গউটেং ছাড়া ডলফিনস, নাটাল, লায়নসদের হয়ে খেলেছিলেন। এমনিতেই ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক সিস্টেমে সেখানে সুযোগ পাওয়াটা কঠিন। গউটেং ছাড়া অন্য দলগুলির হয়ে রেকর্ডও খুব একটা সুবিধার নয় তার।
ল্যাঙ্কাশায়ার লিগে খেলার সে বছরই হুট করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন- নিউজিল্যান্ড পাড়ি জমাবেন। পার্টনার কিমকে গলফ খেলার সময় কথাটা বলেছিলেন; কিম সেটি সিরিয়াসলি নেবেন ভাবেননি। ঘরবাড়ি বিক্রি করে বিমানে উঠে পড়লেন, ওয়েলিংটনের হয়ে চুক্তি নিশ্চিত নয় তখনও। নিউজিল্যান্ডের রাজধানীতে এসে বেশ কয়েকটি ক্লাবে যোগাযোগ করেছিলেন। ক্রিকেট নয়, নিউজিল্যান্ড বসবাসের জন্য কেমন- সেদিকেই নজর ছিল বেশি। অবশ্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলার স্বপ্নটা ছিল সবসময়ই।
সেই ২০১৭ সালেই সুপার স্ম্যাশে অভিষেক হয়ে গেল কনওয়ের, পরের বছর প্লাঙ্কেট শিল্ডে। ফায়ারবার্ডসের হয়ে শিল্ডে করলেন ট্রিপল সেঞ্চুরি, নিউজিল্যান্ডের মাটিতে যা মাত্র ৮ম প্রথম শ্রেণির ট্রিপল সেঞ্চুরি। ওয়েলিংটনের এই দলের হয়ে কনওয়ের প্রথম শ্রেণিতে গড় এখন ৬৬.২৫, লিস্ট ‘এ’-তে ৪৭.১৯, টি-টোয়েন্টিতে ৫৬.৫১।
কনওয়েকে নিয়ে উচ্চাশা এমনই ছিল, নিউজিল্যান্ডের হয়ে খেলার যোগ্যতা অর্জনের তিন মাস আগেই বোর্ডের কেন্দ্রীয় চুক্তিতে এসে পড়েছিলেন তিনি। এরপর এই গ্রীষ্মে অভিষেক। টি-টোয়েন্টিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৯৯ রানে অপরাজিত থাকার পর রবি আশ্বিন টুইট করেছিলেন, ‘ডেভন কনওয়ে মাত্র চার দিন দেরি করেছেন, তবে কী অসাধারণ ইনিংস!’
চারদিন আগে আইপিএলের নিলামের কথা বলছিলেন আশ্বিন।
কনওয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেঞ্চুরির আক্ষেপ মেটালেন তৃতীয় ওয়ানডেতে এসে, তার ‘ঘরের মাঠ’ বেসিন রিজার্ভে। নিউজিল্যান্ডে এসেছিলেন নতুন এক জীবন শুরু করতে, এসে পেয়েছেন অনেক কিছু। হয়তো সামনে অপেক্ষা করছে টেস্ট অভিষেক, অথবা আইপিএল দল পাওয়া। নিউজিল্যান্ডে আসার পর কাজ, থাকার জায়গা– নিশ্চিত ছিল না কিছুই।
আপাতত কনওয়ের জায়গা নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটে বেশ দৃঢ়, যিনি চার বছর আগেও খেলছিলেন ল্যাঙ্কাশায়ার লিগে। অবশ্য এখনও বিদেশী ‘প্রো’ ক্রিকেটার হিসেবে ইংল্যান্ডে খেলার অভিজ্ঞতাটা মিস করেন তিনি, আর মিস করেন ম্যাচের পর সতীর্থদের সঙ্গে নাইট-আউট।
হয়তো সেই ইংল্যান্ডে সামনেই যাবেন কনওয়ে, এবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার হিসেবে। এবং যিনি এই ৩০ বছর বয়সে এসে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের রোমাঞ্চে মাতেন; চার দিন বা চার বছর – তাঁর কাছে কোনোটিই দেরী নয়।