ভাঙা স্বপ্নে তুমি উঠে দাঁড়িয়েছো ঠিকই

পুনের মাঠে জীবন দিয়ে দেওয়া বাদে আর যা যা সম্ভব - তার সবটাই তিনি করেছেন। সেটাও নিজের সীমিত সামর্থ্য দিয়ে, বিরুদ্ধ এক পরিবেশে। শেষ অবধি হয়তো জয়ের বন্দরে নিয়ে যেতে পারেননি দলকে - তবে যা করেছেন - সেটা ম্যাচ জয় না হোক হৃদয় জয়ের জন্য যথেষ্ট।

খেলাধুলা জীবন নয়। ক্রিকেট তো নয়ই। স্রেফ বিনোদন। তবে, যারা জীবন দিয়ে ক্রিকেটটা খেলতে জানেন – তাঁদের সুবাদেই খেলাটা হয়ে ওঠে উপভোগ্য।

এই যেমন স্যাম কুরান। পুনের মাঠে জীবন দিয়ে দেওয়া বাদে আর যা যা সম্ভব – তার সবটাই তিনি করেছেন। সেটাও নিজের সীমিত সামর্থ্য দিয়ে, বিরুদ্ধ এক পরিবেশে। শেষ অবধি হয়তো জয়ের বন্দরে নিয়ে যেতে পারেননি দলকে – তবে যা করেছেন – সেটা ম্যাচ জয় না হোক হৃদয় জয়ের জন্য যথেষ্ট।

দেখা যায়, ব্যাটিং অর্ডারের ছয় কিংবা সাত নম্বর পজিশন পর্যন্ত ব্যাটসম্যানরা বড় ইনিংস খেলার সামর্থ্য রাখেন। বাকিদের ক্ষেত্রে বড় ইনিংস প্রত্যাশা থাকেই না বলা যায়। কারণ, তাঁদের মূল ভূমিকাটা তো বোলিংয়ে। স্যাম এখানেই আলাদা। কারণ, তিনি পুরোদস্তর বোলার।

ব্যাট করতে নেমেছিলেন আট নম্বরে। পুনের মাঠে সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে করেন ৮৩ বলে ৯৫ রান। কি বিষম দারুণ এক লড়াই! সঙ্গীর ওভাব, স্বাগতিকদের তুখোড় সব বোলার, রান রেটের সাথে পাল্লা দেওয়া। এই ইনিংসটা মহাকাব্যের চেয়ে কম কোনো ভাবেই নয়।

ভারতের বিপক্ষে ৩৩০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে বেশ দ্রুতই উইকেট হারিয়ে বসে ইংল্যান্ড। স্যাম কুরান যখন উইকেটে আসেন তখন ইংল্যান্ডের সংগ্রহ মাত্র ১৬৮ রান। সেখান থেকে ইনিংসের শেষ ওভার পর্যন্ত দলকে টেনে নিয়ে যান কুরান। ভুবেনশ্বর কুমার, শার্দুল ঠাকুরের বলে ধস নেমেছিলো ইংল্যান্ড টপ অর্ডারে।

এই ম্যাচে কুলদ্বীপ যাদবকে বসিয়ে মাঠে নামানো হয়েছিলো থাঙ্গারাসু নটরাজনকে। টসের সময়ই ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলি বলেছেন এটা ছিলো একটি ট্যাকটিক্যাল পরিবর্তন। আর সেই পরিবর্তনে সফল হয়েছিলো ভারতীয় দল। শেষ ওভারে ম্যাচ জিতিয়ে আস্থার প্রতিদান নটরাজন।

ব্যাটিংয়ে নেমে ভয়ডরহীন ভাবে ব্যাটিং করছিলেন স্যাম কুরান। চাপ সামলে নিয়ে ভারতের হাতের মুঠো থেকে ম্যাচ বের করে আনছিলেন তিনি। কিন্তু ক্যারিয়ারের মাত্র দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নামা নটরাজন শেষ ওভারে বেশ দূর্দান্ত এক বোলিং করে ম্যাচ বের করে নিয়ে আসেন।

টসে জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় ইংল্যান্ড। ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা বেশ ভালোই করেন দুই ভারতীয় ওপেনার রোহিত শর্মা এবং শিখর ধাওয়ান। ১০৩ রানের ওপেনিং জুটির পর ১২১ রান করতেই প্যাভিলিয়নে ফেরেন টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যনান। এরপর ঋষাভ পান্ত এবং হার্দিক পান্ডিয়ার ঝড়ো হাফ সেঞ্চুরিতে বড় সংগ্রহ পায় ভারত। সংগ্রহটা আরো বড় হতে পারতো কিন্তু লোয়ার অর্ডারের ফেরার মিছিলে ১০ বল আগেই অল আউট হয় ভারত।

ব্যাটিংয়ের নেমে ভারতের মতই ঠিক মত কোনো জুটি গড়তে পারেননি ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা। বলার মত রান যা হয়েছে তাঁর বেশিরভাগ টাই এসেছে আট নাম্বারে ব্যাটিং করতে নামা স্যাম কুরানের কল্যাণে। ৮৩ বলে ৯৫ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। এই ইনিংস খেলার পথে তিনি নয়টি চার এবং চারটি ছক্কা হাঁকান। এছাড়া ইংলিশ পেসার মার্ক উডের সাথে গড়েন ৫৭ রানের জুটি।

১৬৮ রানে ৬ উইকেট যাওয়ার পর মাত্র ২৫ ওভার চলাকালীন সময়ে ব্যাটিংয়ে আসেন স্যাম কুরান। এখান থেকে দলকে টেনে নিয়ে যান ম্যাচের শেষ ওভার পর্যন্ত। ৪৭ তম ইংল্যান্ড দলের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিলো মাত্র ২৩ রান। ৪৮ তম ওভারে ভুবনেশ্বর কুমার দুইটি ওয়াইড দিলেও এই ওভারে ইংল্যান্ড দল তুলতে পারে মাত্র চার রান।

ভুবনেশ্বরের করা ৪৮ তম ওভারের আগের ওভারে শার্দুল ঠাকুরের করা ওভারে ১৮ রান তুলে ইংল্যান্ডকে জয়ের স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছিলেন স্যাম কুরান। কিন্তু এরপরের ওভারে হার্দিক পান্ডিয়ার ওভারে আসে মাত্র পাঁচ রান।

শেষ ওভারে ইংল্যান্ডের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিলো ১৪ রান। কিন্তু আইপিএলে বেশ ডেথ ওভারগুলোতে তুখোড় বোলিং করা থাঙ্গারাসু নটরাজনের করা শেষ ওভারে ইংল্যান্ড তুলতে পারে মাত্র ৬ রান। আর মাধ্যম্যেই ৭ রানের ব্যবধানে ম্যাচ হেরে বসে ইংল্যান্ড।

স্যাম কুরান ভারতের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডে খেলতে নামার আগে তাঁর ওয়ানডে ক্যারিয়ারের খেলেছিলেন মাত্র ৭ ওয়ানডে। এই সাত ওয়ানডেতে এক ইনিংসে তাঁর ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ সংগ্রহ ছিলো মাত্র ১৫ রান। এছাড়াও পেশাদার ক্যারিয়ারে কখনো সেঞ্চুরির দেখা পাননি তিনি।

৯৫ রানের এই ইনিংস খেলার সময় ২২ রানে একবার জীবন পান স্যাম কুরান। ক্যাচ ছাড়েন অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়া। সেই জীবন পেয়েই ইংল্যান্ডকে নিয়ে জয়ের বন্দরে ভিড়তে চেয়েছিলেন তিনি। তবে, শেষ রক্ষা হয়নি।

স্যাম কুরান এসেছেন একটি ক্রিকেটীয় পরিবার থেকে। স্যাম কুরানের বড় দুই ভাই টম কুরান এবং বেন কুরানও ক্রিকেট খেলছেন। এর মধ্যে টম কুরান ইংল্যান্ড দলকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তাদের বাবা কেভিন ম্যালকম কুরান জিম্বাবুয়ের হয়ে বিশ্বকাপও খেলেছেন। দাদা কেভিন প্যাট্রিক কুরানও ক্রিকেটার ছিলেন, খেলেছেন রোডেশিয়ার হয়ে।

বলা যায়, বেশ ক’দিন ধরেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে থাকা স্যাম পরিবারের আড়ালেই ছিলেন এতদিন। সেই আড়ালটা তিনি ভেঙে নায়ক হলেন পুনের মাটিতে। হোক সেই নায়ক হওয়াটা জয় দিয়ে পূর্ণতা পেল না, তারপরও তাঁকে ও তাঁর ব্যাটকে স্যালুট করতে একটুও দ্বিধা নেই ক্রিকেট বিশ্বের!

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...