প্রথমে আপনার জন্য একটি কুইজ।
বলুন, মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে কতদিন যাবৎ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারের পা পড়েনি? ভাবুন, দিন সংখ্যা বের করুন।
কী পেরেছেন? না পারলে বলে দেই, ৩০৮ দিন!
হ্যাঁ, ১১ মার্চ ২০২০ তারিখে সেই জিম্বাবুয়ের সাথে শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। তারপর থেকে হয়নি কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ।
আহা! যে মিরপুর স্টেডিয়াম গমগম করতো দর্শকে, খেলার আধিক্যে অক্ষরের পর অক্ষর সাজানো হতো তুমুল সমালোচনায়, সে স্টেডিয়ামে খেলা হয়না প্রায় ১ বছর যাবৎ! হুমায়ূন আহমেদের অনবদ্য সৃষ্টি তারা তিনজনের মামার ভাষায় বলতে হয়, ‘আপনারাই বলেন, এটা কি বিশ্বাস করার মতো ঘটনা?’
সেই অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটিয়ে দিয়েছে কোভিড-১৯ মহামারি। মিরপুরের একটা বড় বিরতি দরকার, কথাটা অনেক আগে থেকেই বলা হচ্ছে, আমিও বলেছি। কিন্তু এরকম বিরতি তো কেউ চাইনি। চাইনি কোনো অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ পাওয়ার বিরতি।
অথচ হওয়ার কথা ছিল কত কিছু। মুজিববর্ষ উপলক্ষে এশিয়া একাদশ বনাম বিশ্ব একাদশের ম্যাচ, বিপিএল- আরো কত কিছু। কথা ছিল শফিউল নাকি রুবেল তা নিয়ে ফেসবুকে দর্শকদের ‘ভার্চুয়াল মারামারি’, বিসিবির নানান অনিয়ম নিয়ে সাংবাদিকদের রিপোর্ট, দলের পারফরম্যান্স নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ, টাইগারদের জয়ে পুরো দেশের এক হয়ে যাওয়া।
এসব কিছু না হয়েও হয়ে গেল অনেক কিছু।
করোনা দেখিয়ে দিল খেলার জগতের বাইরের অন্য এক মাশরাফি-সাকিবদের, যারা ব্যাট-বলের আঁচড়ে ক্রিকেটের ক্যানভাস আঁকতে জানেন বটে; কিন্তু সাথে গাইতে জানেন মানবতার জয়গান। মুশফিকরা নিলামে উঠিয়ে দেন তাদের পছন্দের বস্তু, যা দুর্যোগ নিপীড়িত মানুষদের অভয় দেয়, ‘আমরাও আছি তোমার পাশে’।
তামিম তাঁর ওপেনিংয়ে স্লো স্ট্রাইক রেটে খেলার ক্লান্তি ভুলিয়ে দেন কোহলি-ডু প্লেসিদের সাথে ফেসবুক লাইভ করে, যা অবসরের বিনোদনের খোরাক জুগিয়ে পাথেয় হয়ে থাকে সকল তরুণ ক্রিকেটারদের। তাসকিন-নাসিরদের ঘটানো ড্রেসিং রুমের সেসব দুষ্টুমি মাখা কাজগুলো হাসি ফুটিয়ে তোলে দিন শেষে ক্লান্ত হয়ে বিশ্রাম নেয়া চিকিৎসকদেরও।
এ বিরতিতে আমরা সাক্ষী হয়েছি সে মুহুর্তটির, যে মুহুর্তের অপেক্ষায় ছিলাম গোটা বাঙালি জাতি। আমাদের নবাব, সাকিব আল হাসানের ক্রিকেটে ফেরা। হয়তো এখনো আগের ফর্মে ফিরেননি, কিন্তু আমরা জানি; নায়করা সময় হলে ঠিকই জ্বলে উঠেন। এবং বছর শেষের প্রাক্কালে জানিয়ে দিলেন, আসছে তাঁর আরেক উত্তরসূরী।
এত কিছু ঘটার মাঝেও যেটার অভাব, সেটা হচ্ছে ক্রিকেট। বলতে পারেন, কই ওইতো প্রেসিডেন্টস কাপ আর বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ হলো! তা হয়েছে বৈকি, তবে ক্রিকেটের আসল মজা তো ক্লাব লেভেলে না, সেটা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। ক্রিকেটের মাহাত্ম্যই যে লুকিয়ে আছে দেশের জার্সিতে খেলা আয়োজনে, দেশের হয়ে গলা ফাটানোতে।
‘কোভিড-১৯ পরবর্তী’ সময়কালে দুয়েকটি দেশ ছাড়া প্রায় সকল দেশই নেমে পড়েছে ব্যাট-বল হাতে। ব্যতিক্রম বাংলাদেশে। দর্শকদের অপেক্ষা যে আর ফুরায় না, কবে ক্রিকেটে ফিরবে বাংলাদেশ!
আনন্দের ব্যাপার, অপেক্ষার পালা শেষ হচ্ছে।
কাল, ২০ জানুয়ারি ওয়েস্ট ইন্ডিজ-বাংলাদেশ ওয়ানডে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, মিরপুরে পা পড়তে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারদের। আতাহার-শামীমরা নিজেদের গলা বর্ষণের সুযোগ পাচ্ছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে।
হ্যাঁ, পাল্টে গেছে অনেক কিছুই। যে দর্শকের জন্য বিখ্যাত উপমহাদেশ, সে দর্শকের পা পড়বে না স্টেডিয়ামে। বলে ছোঁয়ানো হবে না মুখের লালা। ক্রিকেটাররা যখন তখন বাইরে গিয়ে ঘোরাফেরার সুযোগও হারাচ্ছেন। টেস্ট পরিচালিত হবে দেশী আম্পায়ারদের দ্বারা। আরো অনেক অনেক পরিবর্তন এসে গিয়েছে ক্রিকেটে।
কিন্তু তারপরও সবচেয়ে বড় বিষয়, ক্রিকেট ফিরছে বাংলাদেশে। আমরা আবার সুযোগ পাচ্ছি দেশের জার্সিতে তামিম-মুশফিকদের দেখার সুযোগ, ফেসবুকে নিজের পছন্দের ক্রিকেটারের পক্ষে তর্কের সুযোগ, পারফরম্যান্স বিশ্লেষণের সুযোগ, ‘জিতলে তালি হারলে গালি’ প্রবাদ ব্যবহারের সুযোগও কিন্তু আবার এসেই গেল!
২০শে জানুয়ারি ২০২১।
ক্যালেন্ডারে দাগিয়ে রাখুন। ‘কোভিড-১৯ পরবর্তী’ ক্রিকেটে বাংলাদেশকে স্বাগতম জানাবেন না?