আইপিএল শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট চেন্নাইয়ের

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) ১৪ তম আসরের ফাইনালে কলকাতা নাইট রাইডার্সকে ২৭ রানে হারিয়ে চতুর্থ বারের মত আইপিএলের শিরোপা জিতেছে চেন্নাই সুপার কিংস। চেন্নাই সর্বশেষ শিরোপা জিতেছিল ২০১৮ সালে। এর আগে ২০১০ সালে প্রথম বার ও ২০১১ সালে দ্বিতীয় বার শিরোপা জিতেছিল মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বাধীন দলটি।

চেন্নাইয়ের চতুর্থ শিরোপা জয়ে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছেন ফাফ ডু প্লেসিস। ইনিংসের শেষ বলে আউট হওয়ার আগে ৫৯ বলে ৮৬ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেন প্রোটিয়া এই ব্যাটসম্যান। প্লেসিসের ব্যাটেই ১৯৩ রানের বড় পুঁজি পেয়েছিল চেন্নাই। এরপর সেই পুঁজি নিয়ে লড়াই করে দলের জয় নিশ্চিত করেন শার্দুল ঠাকুর ও রবীন্দ্র জাদেজারা।

তবে বড় রান তাড়া করতে নামা কলকাতাকে উড়ন্ত শুরু এনে দিয়েছিলেন দুই ওপেনার শুভমান গিল ও ভেঙ্কটেশ আইয়ার। উদ্বোধনী জুটিতে ১০.৪ ওভারে দু’জন তুলে ফেলেন ৯১ রান। দারুণ খেলতে থাকা আইয়ার শার্দুল ঠাকুরকে ছক্কার চেষ্টায় সীমানায় ধরা পরলে ভাঙে এই জুটি। ৩২ বলে ৫০ রান আসে আইয়ারের ব্যাট থেকে।

এই জুটি ভাঙার পরই পথ হারায় কলকাতার ইনিংস। উইকেটে এসে রানের খাতা খোলার আগেই ঠাকুরের দ্বিতীয় শিকার হয়ে নীতিশ রানা ফিরে যাওয়ার পরের ওভারেই বিদায় নেন সুনীল নারাইন। ২ বলে ২ রান করে নারাইন ফিরে যাওয়ার এক ওভার পর প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন গিলও। তবে আউট হওয়ার আগে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন গিল।

৪৩ বলে ৫১ রান আসে এই ওপেনারের ব্যাট থেকে। এরপর ১০৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলা কলকাতার হাল ধরতে পারেননি দীনেশ কার্তিক ও সাকিব আল হাসান। ইনিংসের ১৫ তম ওভারে রবীন্দ্র জাদেজার জোড়া আঘাতে ফিরে দু’জনই। সাকিব রানের খাতা খুলতে না পারলেও ৭ বলে ৯ রান করেন কার্তিক।

কার্তিকের বিদায়ের পর উইকেটে এসে দলের হাল ধরতে পারেননি গত ম্যাচের নায়ক রাহুল ত্রিপাঠিও। ৩ বলে ২ রান করে ঠাকুরের তৃতীয় শিকার হয়ে ফিরে যান তিনি। ১২৩ রানে ৭ উইকেট হারানো কলকাতার তখনো জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ২৬ বলে ৭০ রান। এরপর ৮ বলে ৪ রান করে ইয়ন মরগ্যান ফিরে গেলে ম্যাচ থেকে পুরোপুরি ছিটকে যায় কলকাতা।

শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৬৫ রান সংগ্রহ করে ২৭ রানে ম্যাচ হারে তাঁরা। চেন্নাই সুপার কিংসের বোলারদের ভিতর তিনটি উইকেট শিকার করেন শার্দুল ঠাকুর। এছাড়া দুটি করে উইকেট পেয়েছেন রবীন্দ্র জাদেজা ও জশ হ্যাজলেউড।

এর আগে টসে হেনে প্রথমে ব্যাট করতে নামা চেন্নাই সুপার কিংসকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন দুই ওপেনার রুতুরাজ গায়কড় ও ফাফ ডু প্লেসিস। উদ্বোধনী জুটিতে ৮.১ ওভারে দু’জন যোগ করেন ৬১ রান। সুনীল নারাইনের প্রথম শিকার হয়ে গায়কড় ফিরে গেলে ভাঙে এই জুটি। তবে উদ্বোধনী জুটি ভাঙলেও রানের গতি থেমে যায়নি চেন্নাইয়ের।

উইকেটে এসেই ঝড় তোলেন রবিন উথাপ্পা। ডু প্লেসিসকে নিয়ে দ্বিতীয় উইকেটে মাত্র ৩২ বলে ৬৩ রান যোগ করেন তিনি। তবে এই ঝড়ও বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে দেননি নারাইন। তাঁর দারুণ এক ডেলিভারিতে এলবিডাব্লিউয়ের ফাঁদে পড়ে বিদায় নেন উথাপ্পা। ১৫ বলে ৩১ রান আসে তাঁর ব্যাট থেকে। উথাপ্পা আউট হয়ে গেলেও হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন ডু প্লেসিস।

হাফ সেঞ্চুরির পরেও ডু প্লেসিসকে থামাতে পারেননি কলকাতার বোলাররা। ১২৪ রানে ২ উইকেট হারানো চেন্নাই দ্রুত গতিতে এগিয়ে যায় মঈন আলী ও ডু প্লেসিসের ব্যাটে। তৃতীয় উইকেট জুটিতে দু’জন যোগ করেন ৬৮ রান। ইনিংসের শেষ বলে আউট হওয়ার আগে ৫৯ বলে ৮৬ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন ডু প্লেসিস। ২০ বলে ৩৭ রান করে অপরাজিত থাকেন মঈন।

নির্ধারিত ২০ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ১৯২ রান সংগ্রহ করে চেন্নাই। কলকাতা নাইট রাইডার্সের বোলারদের ভিতর সবচেয়ে সফল ছিলেন সুনীল নারাইন। চার ওভারে ২৬ রান দিয়ে ২ উইকেট শিকার করেন এই পেসার। বাকি উইকেটটি পেয়েছেন শিভাম মাভি। তিন ওভারে ৩৩ রান দিয়ে উইকেট শূন্য ছিলেন সাকিব আল হাসান।

  • সংক্ষিপ্ত স্কোর

চেন্নাই সুপার কিংস: ১৯২/৩ (ওভার: ২০; ডু প্লেসিস- ৮৬, গায়কড়- ৩২, উথাপ্পা- ৩১, মঈন- ৩৭*; নারাইন- ৪-০-২৬-২, মাভি- ৪-০-৩২-১, সাকিব- ৩-০-৩৩-০)

কলকাতা নাইট রাইডার্স: ১৬৫/৯ (ওভার: ২০; গিল- ৫১, আইয়ার- ৫০, রানা- ০, নারাইন- ২, মরগ্যান- ৪, কার্তিক- ৯, সাকিব- ০, রাহুল- ২; ঠাকুর- ৪-০-৩৮-৩, জাদেজা- ৪-০-২৭-২, হ্যাজেলউড- ৪-০-২৯-২)

ফলাফল: চেন্নাই সুপার কিংস ২৭ রানে জয়ী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link