‘সাইলেন্ট’ এবার সরব হোন

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে সামনে রেখে খেলা ৭১-এর বিশেষ আয়োজন বিশ্বসংসারে বাংলাদেশ। এই বিশ্বকাপে পুরো বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করবেন ১৫ জনের একটি দল। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের নেতৃত্বে এই দলের সাথে গেছেন একজন বিকল্প ক্রিকেটারও। সবমিলিয়ে ১৬ জনের এক খণ্ড বাংলাদেশ, যারা বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করবেন বিশ্ব সংসারে। তাঁদের নিয়েই ধারাবাহিক বিশ্লেষণের এবারের পর্বে থাকছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বাংলাদেশের ক্রিকেটে একটা লম্বা সময় ধরে জেমি সিডন্স হয়ে ছিলেন।

জেমি সিডন্সকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার খুব আফসোস, সুযোগ পেলে তিনি অনেক কিছু করতে পারতেন। কিন্তু সুযোগটাই পেলেন না। কিন্তু রিয়াদ এই জায়গাটায় এগিয়ে গেলেন। তিনি সুযোগ পেলেন। কিন্তু সুযোগ পাওয়ার পর একটা প্রশ্ন তৈরি হলো, আসলেই কী রিয়াদকে নিয়ে করা আফসোস যথার্থ ছিলো।

রিয়াদকে নিয়ে আফসোসের শুরুটা সেই অভিষেক থেকেই। তিনি বল করতেন পার্ট টাইমার হিসেবে। তাতেই যা করতেন, আমরা ভাবতাম, নিয়মিত বোলিং পেলে আরও ভালো করবেন। তিনি ব্যাট করতেন ৭-৮ নম্বরে। সুনীল গাভাস্কার অবধি বললেন, তিনি বেস্ট নম্বর সেভেন। আমরা ভাবতাম, তিনি প্রমোশন পেলে অনেক কিছু করবেন। কিন্তু তা হলো না।

কালক্রমে রিয়াদ বোলিংটা প্রায় ছেড়ে দিলেন। ব্যাটিংয়ে প্রমোশন পেলেও সেরকম কার্যকর ইনিংস খেলতে পারছিলেন না।

রিয়াদকে নিয়ে আরেকটা আফসোস ছিলো, অধিনায়কত্ব। তিনি ছিলেন সেরা ‘হবু’ অধিনায়ক। ঘরোয়া ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে তিনি দারুণ অর্জন করা একজন অধিনায়ক ছিলেন। ফলে ধরে নেওয়া হচ্ছিলো, তিনি হবেন সেরা জাতীয় দলের অধিনায়ক। সেটাও হলেন।

সেখানেও কী রিয়াদকে খুব সফল বলা চলে?

হ্যা, সর্বশেষ তিনটে সিরিজে তিনি অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছেন। কিন্তু রিয়াদের অধিনায়কত্বে যেরকম আক্রমনাত্মক দল আমরা দেখতে চেয়েছি, তা কী পেলাম?

অনেক প্রশ্ন এখন রিয়াদকে নিয়ে। অনেকে তার একাদশে জায়গাকেই প্রশ্ন করতে শুরু করেছেন। অনেকে তার ব্যাটিংকে প্রশ্ন করছেন-এমন গা বাচানো ব্যাটিং কেনো? আর এইসব প্রশ্নেরই উত্তর রিয়াদকে দিতে হবে এই বিশ্বকাপে।

বিশ্বকাপটা বাংলাদেশের জন্য এক মহা অভিযান। বাছাইপর্ব পার করে গ্রুপপর্বে গিয়ে একটা দুটো ম্যাচ জিতলেই হয়তো বাংলাদেশকে আমরা সফল বলবো। কিন্তু রিয়াদের জন্য চ্যালেঞ্জটা এর চেয়ে বড়। তাকে অধিনায়ক হিসেবে ন্যুনতম এই প্রাপ্তি এনে দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে একটুও ছাড় রিয়াদ পাবেন বলে মনে হয় না।

তবে আসল চ্যালেঞ্জ খেলোয়াড় রিয়াদের।

তিনি টেস্ট এরই মধ্যে ছেড়ে দিয়েছেন। এখন টি-টোয়েন্টিতে নিজের জায়গাটা ধরে রাখা নিয়েও ভাবতে হবে তাকে। আগের সেই মারকুটে রিয়াদ ফিরে না এলে আরেকটা বিশ্বকাপ তার খেলা কঠিন হয়ে যেতে পারে। কারণ, তাকে চ্যালেঞ্জ করার মত বেশ কিছু মারকুটে খেলোয়াড় এখন দলের আশেপাশেই আছে।

রিয়াদ ইতিমধ্যে নিজের মত দল সাজাতে গিয়ে কিছু নির্বাচকদের মতের বিরুদ্ধেও গেছেন বলে গুজব আছে। তাতে অন্তত একজন জনপ্রিয় খেলোয়াড় কাটা পড়েছেন। ফলে রিয়াদ যদি নিজের দল গঠনকে সঠিক বলে প্রমাণ না করতে পারেন, তাহলে তাকে বেশ জবাবদিহি করতে হবে বলেও অনুমান করা যায়।

তবে রিয়াদ খাটি ফাইটার, এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। এই জায়গা থেকে সবকিছু নিজের পক্ষে আনার ক্ষমতা কারো থাকলে, সেটা রিয়াদেরই আছে। আশা করতে দোষ নেই যে, এই অবস্থা থেকে রিয়াদ ফিরে দাড়াবেন। আবার বিশ্বকাপে ঝড়ো কিছু ইনিংস খেলবেন এবং সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবেন। তাহলেই অন্তত প্রশ্নগুলো সব বন্ধ হবে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...