লিওনেল মেসি কিংবা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, মহেন্দ্র সিং ধোনি কিংবা ‘দাদা’ মানে সৌরভ গাঙ্গুলি বা স্বয়ং শচীন রমেশ টেন্ডুলকার বা সাকিব আল হাসান, মাশরাফি বিন মুর্তজাদের জন্মদিন হলে যে পরিমাণ লেখার চাপ আসে, নিউজ পোর্টাল বা প্রিন্ট মিডিয়া কিংবা পেজের বা পার্সোনাল ইনবক্সে, সকলে যেভাবে লেখা চান – তেমনটা ঠিক হয় না ডেনিস বার্গক্যাম্পের জন্য। তাঁর জন্মদিনের সারাটা দিন একটা বারের জন্যও কেউ লেখার দাবি তোলেন না। আমি অবাক হই না একটুও।
আমার চিরকালই মনে হয়েছে বার্গক্যাম্প সেই মফ:স্বলের কবি, তাঁর অল্পই স্রোতা পাওয়া। অল্পর মধ্যেই নিজের একটা গণ্ডী বানিয়ে রেখেছেন তিনি।
যারা নেদরল্যান্ডসের তারকা বার্গক্যাম্পের খেলা লাইভ দেখেছেন পুরো ক্যারিয়ার আমি অন্তত ব্যক্তিগতভাবে তাঁদের হিংসা করি। আমি যেটুকু দেখেছি তা তো পড়ন্ত সূর্য। আটানব্বই বিশ্বকাপ কিংবা ইনভিন্সিবল আর্সেনালের এই ১০ নম্বরকে অনেকেই বলেন ‘দ্য মোস্ট কমপ্লিট প্লেয়ার’। আজকের মেসি রোনালদো পৃথিবীর বাইরে রোনালদিনহো গাউচো – রোনালদো নাজারিও কিংবা রিকার্ডো কাকা, অথবা ফ্রান্সের জিনেদিন জিদানকে নিয়ে যে পরিমান আলোচনা হয় বার্গক্যাম্পকে নিয়ে হয় না।
থিয়েরি অঁরি বলেছিলেন আমার স্বপ্ন বার্গক্যাম্পের মত স্ট্রাইকার হওয়া। এক, দুই কিংবা তিনের ইঁদুর দৌড়ে বার্গক্যাম্প নেই, এই অপার শান্তি নিয়ে রাতে চোখ বুজলে আটানব্বই-এর কোয়ার্টার ফাইনালের গোল বা প্রিমিয়ার লিগের নিউক্যাসলের বিপক্ষে করা সর্বশ্রেষ্ঠ গোলটা ভেসে উঠবে, মখমলের মত সবুজে বার্গক্যাম্প দোলা দেন, সেই দোলাতে আড়ম্বর নেই। স্ট্যাটিস্টিক্স বলছে এই অদ্ভুত গোল বা অ্যাসিস্টের ধারাবাহিকতা বিরল।
একটা সময় আসে যখন কোনো কিছুতেই কিছু যায় আসে না আমাদের, কারও থেকে কোনো প্রত্যাশার ওপর আর নির্ভর করে না আমাদের দিনলিপি, সম্পাদকের তাড়ার তোয়াক্কা করেন না কোনো কবি – সেই মুহুর্তেই বার্গক্যাম্পের জীবন শুরু, দৌড় শুরু, সেই ঠান্ডা হয়ে আসা রাতে আলতো করে চোখ বুজলে পৌঁছে যাওয়া যায় এক গোলাপ উপত্যকায় – অবলীলায় যার ভেতর কবিতা লিখতে বসেন বার্গক্যাম্প আর কোলহলবিহীন এক পৃথিবীতে চোখ বন্ধ করে অঁরিকে সাজিয়ে দেওয়া পাসগুলো আজও ইতিহাস হয়ে থেকে যায়।
তিনি সত্যিকারের জিনিয়াস। কেউ বাকিদের মত মাতামাতি হুল্লোড় কিচ্ছু করবে না তোমায় নিয়ে, তা দিয়ে তোমার কোনোকালেই কিছু যায় আসে নি, কোনো জন্মদিনেও আসেনি। কখনোই এর ব্যতিক্রম হবে না, এভাবেই থেকো।