একদম প্যাড স্পর্শ করে ব্যাটিং স্ট্যান্স নেওয়া, পপিং ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে শট খেলা, হাঁটু গেড়ে স্লগ সুইপ- সবকিছুতেই যেন ডি ভিলিয়ার্সের ছায়া। স্বয়ং ডি ভিলিয়ার্স ব্যাটিং করছেন কিনা সেটি নিয়েও দৃষ্টিভ্রম হতে পারে যে কারোর। তবে ব্যাটারের নাম ডেওয়াল্ড ব্রেভিস। ‘বেবি এবি’ নামে ক্রিকেট পাড়ায় পরিচিতি বছর খানেক আগে থেকেই।
ডি ভিলিয়ার্সের কার্বন কপি বলেই কিনা নিজের নাম হারিয়ে এবি নাম জুড়ে গিয়েছিল তাঁর সাথে। তবে এবার নিজের নামটাই যেন নতুন করে ফুটিয়ে তুললেন ব্রেভিস। দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরোয়া আসর টি-টোয়েন্ট চ্যালেঞ্জ কাপে খেললেন ৫৭ বলে ১৬২ রানের ইনিংস। ১৩ চার আর ১৩ ছক্কায় সাজানো ইনিংস খেলার পথে গড়লেন বহু রেকর্ড। ১৯ বছর বয়সী ব্রেভিসের গড়া সে রেকর্ডগুলোর দিকেই আলোকপাত করা যাক।
- দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটার হিসেবে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস (১৬২ রান)
ব্রেভিসের ১৬২ রানের এই ইনিংসটিই দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটার হিসেবে সর্বোচ্চ। এর আগের রেকর্ডটি যুগ্মভাবে ছিল পিটার মালান আর কুইন্টন ডি ককের। ২০১৪ সালে কেপ টাউনে পিটার মালান ১৪০ রানের একটি ইনিংস খেলেছিলেন। আর এ বছরের আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে ১৪০ রানের ইনিংস খেলেছিলেন কুইন্টন ডি কক।
- টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ইতিহাসের দ্রুততম দেড়শ রানের ইনিংস (৫২ বল)
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সবচেয়ে কম বলে দেড়শ রানের ইনিংস খেলার রেকর্ডটা এখন ব্রেভিসের। ১৬২ রানের ইনিংস খেলার পথে তিনি ১৫০ রান স্পর্শ করেছিলেন ৫২ তম বলে। এর আগের রেকর্ডটি ছিল ক্রিস গেইলের। ২০১৩ সালের আইপিএলে ১৭৫ রানের ইনিংস খেলার পথে তিনি ১৫০ রান পূরণ করেছিলেন ৫৩ বলে।
- দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে সেঞ্চুরি (১৯ বছর ১৮৫ দিন)
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ক্যারিয়ারের ব্রেভিস প্রথম সেঞ্চুরিটি পেলেন, যখন তাঁর বয়স ১৯ বছর ১৮৫ দিন। আর এর মধ্য দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে সেঞ্চুরির নতুন রেকর্ড গড়েন তিনি। এর আগে এ কীর্তিটি ছিল কুইন্টন ডি ককের দখলে। ২০১৩ সালে কেপ কোবরার বিপক্ষে তিনি ২০ বছর ৬২ দিন বয়সে সেঞ্চুরি করেছিলেন।
- দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ছয়ের রেকর্ড (১৩)
১৬২ রানের ইনিংস খেলার পথে ব্রেভিস এ ম্যাচে ছক্কা হাঁকিয়েছেন ১৩ টা। যা দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে সর্বোচ্চ। ব্যাটিংয়ে ব্যাকরণ মেনে ব্যাট করবার পাশাপাশি তিনি পেশিশক্তি ব্যবহারেও বেশ পটু। এই ১৩ খানা ছক্কা অন্তত তারই প্রমাণ।
- দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরোয়া লিগে সর্বোচ্চ রানের জুটি (১৭৯)
ব্রেভিস আর জিভেশান পিল্লাই এ ম্যাচে জুটি গড়েছিলেন ১৭৯ রানের। যেটি দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরোয়া টূর্ণামেন্টগুলোর মধ্য সর্বোচ্চ। আর দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে যে কোনো টি-টোয়েন্টি ম্যাচের বিবেচনায় এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ২০২১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এক ম্যাচে ১৯৭ রানের জুটি গড়েছিলেন বাবর আজম আর মোহাম্মদ রিজওয়ান।
ব্রেভিসের ব্যাক্তিগত এত রেকর্ডের দিনে দলগত দুটি রেকর্ডেও সাক্ষী হয়েছে ক্রিকেট। এ ম্যাচে টাইটান্স আর নাইটস, দুই দল মিলে রান করেছিল ৫০১। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এর মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো দুই দলের সম্মিলিত স্কোর ৫০০ ছাড়ায়। এর আগে এ রেকর্ডটি ছিল সুপার স্ম্যাশ চ্যাম্পিয়নশীপে সেন্ট্রাল ডিস্ট্রিক্ট আর ওটাগো মিলে করা ৪৯৭ রানের স্কোরটি।
আর ব্রেভিসের করা ১৬২ রানের ইনিংসের বদৌলতে এ দিন তাঁর দল টাইটান্স স্কোরবোর্ড তুলেছিল ২৭১ রান। যা দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে করার কোনো দলের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। এর আগের রেকর্ডটি ছিল নর্থ ওয়েস্টের। ২০১৮ সালে লিমপোপোর বিপক্ষে তারা করেছিল ২৬২ রান।
ডেওয়াল্ড ব্রেভিসের রেকর্ড ভাঙার গল্পের শুরু আরো বেশ আগে থেকেই। ২০০৪ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে শিখর ধাওয়ান করেছিলেন এক আসরে সর্বোচ্চ ৫০৫ রান। সেই রেকর্ড টিকেছিল ১৮ বছর। তবে তাঁর সে রেকর্ডটি ভেঙ্গে যায় এই ব্রেভিসের কাছেই। ২০২২ সালে এবারে হওয়া যুব বিশ্বকাপে তিনি রান করেন ৫০৬ রান।
খুব অল্প বয়সেই ক্রিকেট নামক বৃত্তের কেন্দ্রে চলে এসেছেন ব্রেভিস। ব্রেভিসও নিশ্চয় সেই কেন্দ্র থেকে ছিটকে যেতে চাইবেন না। কারণ রেকর্ডই তো তাঁর ভবিষ্যতের পথ দেখাচ্ছে। এখন শুধু দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাওয়ার পালা।