সবুরে মেওয়া ফলে

৩৭ বছর বয়স। তবে ব্যাটার কার্তিককে দেখে বয়সটা বোঝার কোনো উপায় নেই। নান্দনিক সব শট, দুর্দান্ত ফিনিশিং, বিধ্বংসী ব্যাটিংয়েও এখনও ২২ গজ মাতিয়ে রেখেছেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার। গায়ের জোরটা যেন আগের চেয়েও বেড়েছে, চেহারায় বয়সের ছাপ কিংবা ক্লান্তির রেশ মাত্র নেই। বলকে বাউন্ডারি ছাড়া করতেই ব্যস্ত তিনি। ঘরোয়া ক্রিকেটে দ্যুতি ছড়িয়ে ফিরেছেন জাতীয় দলের সোনালি মঞ্চে।

সাল ২০০৬, জোহানেসবার্গ। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে প্রথমবার মুখোমুখি ভার‍ত। ভারতের প্রথম টি-টোয়েন্টি একাদশে সেদিন এই ফরম্যাটে অভিষেক হওয়া এগারো ক্রিকেটারের একজন ছিলেন দীনেশ কার্তিক। ওই দলের বাকি দশজনই এখন ক্রিকেটের বাইরে। কেউ ক্রিকেটের সাথে অন্য ভূমিকায়, কেউ পরিবার নিয়ে ব্যস্ত। কিন্তু মুদ্রার উল্টোপাশে দিব্যি এখনও খেলে চলেছেন কার্তিক।

৩৭ বছর বয়স। তবে ব্যাটার কার্তিককে দেখে বয়সটা বোঝার কোনো উপায় নেই। নান্দনিক সব শট, দুর্দান্ত ফিনিশিং, বিধ্বংসী ব্যাটিংয়েও এখনও বাইশ গজ মাতিয়ে রেখেছেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার। গায়ের জোরটা যেন আগের চেয়েও বেড়েছে, চেহারায় বয়সের ছাপ কিংবা ক্লান্তির রেশ মাত্র নেই। বলকে বাউন্ডারি ছাড়া করতেই ব্যস্ত তিনি। ঘরোয়া ক্রিকেটে দ্যুতি ছড়িয়ে ফিরেছেন জাতীয় দলের সোনালি মঞ্চে।

প্রতিপক্ষ সেই দক্ষিণ আফ্রিকা। যে দলটার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি অভিষেক, সেই দলটার বিপক্ষেই আবার প্রত্যাবর্তন। নতুন রূপে, নতুন শুরু; ক্যারিয়ারের একদম অন্তিম মূহুর্তে এসে নিজেকে প্রমাণের চ্যালেঞ্জ।

সর্বশেষ ভারতের জার্সি গায়ে টি-টোয়েন্টি খেলেছিলেন প্রায় বছর তিনেক আগে। জাতীয় দলে ফেরার রাস্তাটা প্রায়ই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। অনেকেই কার্তিকের ক্যারিয়ারের শেষ দেখে ফেলেছিলেন, কার্তিকের ক্যারিয়ারে ‘ফুলস্টপ’ বসিয়ে দিয়েছিলেন অনেকে। কার্তিক অবশ্য আশা হারাননি। নিজের উপর আস্থা আর ভরসা দুটোই ছিল। নিজেকে নতুন করে প্রস্তুত করেছেন, সবাইকে চমকে দিয়ে ফিরেছেন নয়া বিধ্বংসী রূপে।

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) পঞ্চদশ আসরে কমপক্ষে দুইশো রান করা ক্রিকেটারদের মধ্যে ছিলেন সর্বোচ্চ স্ট্রাইকরেটধারী। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর হয়ে ফিনিশার হিসেবে ব্যাট হাতে চালিয়েছেন ধ্বংসযজ্ঞ। পাওয়ার হিটিং সামর্থ্য, নান্দনিক আর নিঁখুত সব শটে ক্রিকেট পাড়ায় নতুন করে জানান দিয়েছেন তিনি ফুরিয়ে যাননি।

সেখান থেকে জাতীয় দলের সবুজ গালিচার আরও একবার। একটা ফুলস্টপের পাশে আরও ফুলস্টপ বসিয়ে বুঝিয়ে দিলেন তিনি ছুঁটছেন এখনও দুরন্ত গতিতে। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে দলের ব্যাটিং বিপর্যয়ে খেলেছিলেন  ২১ বলে ৩০ রানের অপরাজিত এক ইনিংস। এরপর তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে দেখা মিলল সেই ঘুরে দাঁড়ানোর সফল নায়ক কার্তিকের।

১৬ বছর আগে সেই টি-টোয়েন্টি অভিষেকে ৩১ রানের অপরাজিত এক ইনিংস খেলে দলকে জিতিয়েছিলেন। এরপর থেকে তিনি অধারাবাহিক মুখ। তবে, এবার যেন ভাগ্য-বিধাতা সহায় হল। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ ম্যাচে এসে দেখা পেয়েছেন আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি।

২৭ বলে দুই ছক্কা ও নয় বাউন্ডারিতে খেলেছেন ৫৫ রানের ঝড়ো এক ইনিংস। কার্তিকের ব্যাটে পর পর দু’ম্যাচেই ব্যাটিং বিপর্যয়ের পরেও ঘুরে দাঁড়িয়েছে ভারত। আইপিএলের বিধ্বংসী রূপটাই বজায় রাখলেন জাতীয় দলের জার্সি গায়েও।

এই বিধ্বংসী, মারকাটারি, ভয়ংকর রূপের অপেক্ষায় প্রহর গুনেছেন ১৬ বছর। অবশেষে দীর্ঘদিনের সাধনা সফলতার রূপে ধরা দিয়েছে কার্তিকের হাতে। ব্যাট হাতে এখন তিনি উড়ন্ত ফর্মে। সেই যে ভার‍তের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা বধের নায়ক ছিলেন তিনি। সেখান থেকে কেটে গেছে ১৬ বছর। একই প্রতিপক্ষ, ভিন্ন ভেন্যু; নতুন এক স্বপ্ন আর এক কঠিন চ্যালেঞ্জ। এবারও প্রোটিয়া বধে জয়ের নায়ক বনে গেলেন কার্তিক।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...