আবেশে পরাভূত আফ্রিকা
তবে সেই প্রশ্নের জবাব তিনি দিয়েছেন বল হাতে। সিরিজের চতুর্থ টি-টোয়েন্টিতে দুর্দান্ত এক বোলিংয়ে ধসিয়ে দিয়েছেন প্রোটিয়াদের ব্যাটিং শিবির। ৪ ওভারে মাত্র ১৮ রানের বিনিময়ে ৪ উইকেট নিয়ে ভারতকে অসাধারণ এক জয় এনে দেন এই তরুণ পেসার। আবেশের নজরকাঁড়া স্পেলে মাত্র ৮৭ রানেই শেষ প্রোটিয়াদের ইনিংস।
বছর দুয়েক আগেও ক্রিকেট পাড়ায় অপরিচিত এখ মুখ ছিলেন আবেশ খান। ভাগ্য আর পরিশ্রমে এখন তিনি ভারত জাতীয় দলের সদস্য। জাতীয় দলে উঠে এসেছেন ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) নজরকাড়া পারফরম্যান্স দিয়ে। গেল দুই আসর ধরে আইপিএলের অন্যতম সেরা পারফরমারদের একজন তিনি।
তবে জাতীয় দলের জার্সিতে নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারছিলেন না। সেখান থেকেই ঘুরে দাঁড়ানো। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সুযোগ পেয়েই করলেন দুর্দান্ত এক স্পেল। জাতীয় দলের জার্সি গায়েও নিজের সামর্থ্যের সেরাটা প্রমাণ করলেন আবেশ।
আইপিএলের চতুর্দশ আসরে বল হাতে ঈর্ষনীয় পারফরম্যান্সের পর চলতি বছরের শুরুতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ঘরের মাটিতে টি-টোয়েন্টি অভিষেক। এরপর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও এক ম্যাচে সুযোগ পেয়েছিলেন। সেখানেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম উইকেটের দেখা পান আবেশ খান। ২৩ রানে দুই উইকেট নেন তিনি।
বেশ কিছু নিয়মিত খেলোয়াড়ের বিশ্রামে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজেও সুযোগ পান আবেশ। প্রথম তিন ম্যাচেই উইকেটের দেখা নেই। রানও দিয়েছেন গড়ে আটের উপরে। আইপিএলের ফর্মটা জাতীয় দলের জার্সিতে টেনে আনতে পারেননি। সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারছিলেন না। সমালোচনাও যে খানিকটা হচ্ছিল না এমনও নয়। ঘরোয়া ক্রিকেটে দুর্দান্ত পারফর্ম করা আবেশ কি জাতীয় দলে নিজেকে প্রমাণ করতে পারবেন না? এমন প্রশ্নও উঠছিল।
তবে সেই প্রশ্নের জবাব তিনি দিয়েছেন বল হাতে। সিরিজের চতুর্থ টি-টোয়েন্টিতে দুর্দান্ত এক বোলিংয়ে তাসের ঘর বানিয়ে দিয়েছেন প্রোটিয়াদের ব্যাটিং শিবির। চার ওভারে মাত্র ১৮ রানের বিনিময়ে চার উইকেট নিয়ে ভারতকে অসাধারণ এক জয় এনে দেন এই তরুণ পেসার। আবেশের নজরকাঁড়া স্পেলে মাত্র ৮৭ রানেই শেষ প্রোটিয়াদের ইনিংস।
ক্যারিয়ারে প্রথম চার ম্যাচে মাত্র দুই উইকেট নেওয়া এই তরুণ পেসার এক ম্যাচেই শিকার করেছেন ক্যারিয়ার সেরা চার উইকেট। আইপিএলের পঞ্চদশ আসরে বল হাতে বেশ ধারাবাহিক পারফর্ম করেন আবেশ। ১৩ ম্যাচে শিকার করেন ১৮ উইকেট। তবে রান খরচায়ও ছিলেন খানিকটা উপরে। ৮.৭৩ ইকনমিতে বল করেন এই পেসার।
সাইকেল কিনে দেওয়ার মত সামর্থ্য ছিল না আবেশের বাবার। বাড়ি থেকে মাঠের দূরত্ব ছিল প্রায় ২০-৩০ রুপি ভাড়া। অনেক কষ্ট করে ছেলেকে একটা পুরনো সাইকেল কিনে দিয়েছিলেন। বয়স ভিত্তিক দলে অসাধারণ পারফরম্যান্সের পরেও রাজ্য ভিত্তিক দলে সুযোগ মেলেনি আবেশের। এরপর মধ্যপ্রদেশের হয়ে ট্রায়াল দিলেন এই পেসার। প্রায় ৫০০ তরুনের মাঝে ট্রায়ালে বিশেষ নজর কাড়েন আবেশ। সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটার ও মধ্যপ্রদেশের নির্বাচক অময় কুরসিয়া আবেশের বোলিংয়ে মুগ্ধ হয়ে যান। ওই ট্রায়ালে একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে নির্বাচিত হন আবেশ। অময়ের অধীনেই পরবর্তীতে অনূর্ধ্ব ১৬ দলে খেলেন তিনি।
সেখান থেকে রঞ্জি ট্রফি। মাত্র ১৭ বছর বয়সে রঞ্জি ট্রফিতে অভিষেক। এরপর ক্রমান্বয়ে আইপিএলের মঞ্চে। আর আইপিএলের মঞ্চ মাতিয়ে স্বপ্নের মতই বছর কয়েকের মধ্যে এখন তিনি জাতীয় দলের নীল জার্সি গায়ে জড়িয়েছেন। গেল ম্যাচের এই দাপুটে পারফরম্যান্সটা নিশ্চয়ই ধরে রাখতে চাইবেন আবেশ। এত এত তারকার ভীড়ে কঠিন প্রতিযোগিতার এই মঞ্চে যে ধারাবাহিকতার বিকল্প নেই সেটা তিনি ভাল করেই জানেন নিশ্চয়ই।