ভারতে ঘরোয়া ক্রিকেটের আসর কম নেই। রঞ্জি ট্রফি, সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফি থেকে শুরু করে প্রায় সব রাজ্যেরই আলাদা ফ্রাঞ্চাইজিভিত্তিক ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আছে। তবুও, এতসব ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ভিতরেও ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) বাকি সবার থেকে যেন একটু আলাদাই। টাকার ঝনঝনানি, তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা, বড় খেলোয়াড়দের অংশগ্রহণ – সব মিলিয়ে আইপিএল খেলা ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটের প্রত্যেকেরই স্বপ্ন থাকে। সে লক্ষ্যেই তারা পারফর্ম করতে থাকেন, একসময় আইপিএলে ডাকও পান।
কিন্তু ২০২১ এর আসরে ঘরোয়া ক্রিকেটের বেশ কিছু তারকা নিলামে ডাক পাননি, কেউ কেউ ঘরোয়া ক্রিকেটে দুর্দান্ত পারফর্ম করেও আইপিএলে মেলেনি সুযোগ। কারা তারা? চলুন দেরি না করে জেনে নেই।
- গুরকিরাত সিং
গুরকিরাত সিং একজন হার্ড-হিটিং ব্যাটসম্যান যে কিনা পার্ট-টাইম স্পিনটাও বেশ ভাল করেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে এখন অব্দি তিনি ৮৬ ম্যাচ খেলে ব্যাট হাতে রান করেছেন ৪৮.১৫ গড়ে। ঘরোয়া ক্রিকেটে তিনি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টগুলোতে খেলেছেন ১১৩ ম্যাচ, সেখানে তাঁর ইনিংস সর্বোচ্চ রান ৯৩*। তবে এসবের বাইরে মিডল অর্ডার এই ব্যাটসম্যানের বিশেষত্ব অন্য জায়গাতে আর সেটা হল তাঁর স্ট্রাইক রেট – ১২৩.৭৪!
পার্ট টাইম স্পিনেও গুরকিরাত যে একেবারে খারাপ করেন এমনটা নয়। লিস্ট-এ ক্রিকেটে তিনি এখন অব্দি নিয়েছেন ৩২ উইকেট, সেরা বোলিং ফিগার ৫/২৯। ঘরোয়া টি-টুর্নামেন্ট আমলে নিলে সেখানেও তাঁর ইকোনমি রেট ৭.২২ যেটা কিনা একজন খণ্ডকালীন স্পিনার হিসেবে বেশ ভাল।
আইপিএল ক্যারিয়ারটাও যে গুরকিরাতের একেবারে ফেলনা তাও নয়। এখন অব্দি তিনি ১২১.০৯ স্ট্রাইক রেটে এ টুর্নামেন্টে রান করেছেন ৫১১। এছাড়াও গুরকিরাতের ফিল্ডিংটাও বেশ চোখ ধাঁধানো। কিন্তু এসব সত্ত্বেও, আইপিএলে কোন দল পাননি তিনি!
- অঙ্কিত রাজপুত
অঙ্কিত রাজপুত সেইসব পতন হওয়া নক্ষত্রের দলে যারা শুরুতে দারুণ চমক দেখালেও শেষ অব্দি নিজের শুরুর লিগ্যাসি টেনে নিয়ে যেতে ব্যার্থ। ভেঙ্কটেশ প্রসাদের মত বোলিং কোচের কাছ থেকেই তিনি দারুণ প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন। ২০১৩ আর ২০১৪ এর মৌসুমে রাজপুত ছিলেন চেন্নাই সুপার কিংসের শিবিরে। চেন্নাইয়ের সে সময়ের স্কোয়াড বিবেচনায় রাজপুতের পক্ষে একাদশে সুযোগ পাওয়াটা আসলে কঠিনই ছিল।
কিন্তু সুযোগ না মিললেও ঘরোয়া অন্যান্য আসরে রাজপুত কিন্তু পারফর্ম করে যাচ্ছিলেন। ২০১৬ এর মুশতাক আলী ট্রফিতেই তিনি তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক হয়েছিলেন। সে আসরে তিনি ১৪.২১ গড়ে ঝুলিতে পুরেছিলেন মোট ১৪ উইকেট। মুশতাক আলী ট্রফির পারফরম্যান্সে রাজপুত আবারও আইপিএলের দল মালিকদের নজরে আসেন, সে বছরই কলকাতা নাইট রাইডার্স রাজপুতকে কিনে নেয় দেড় কোটি রুপিতে। তা কলকাতার হয়ে আইপিএলে ফিরে এসেও রাজপুতের ভাগ্য কিন্তু সুপ্রসন্ন হয়নি। এমনিতেও ছিলেন দলে অনিয়মিত, তার ওপর সুযোগ পেয়েও ভাল করতে পারছিলেন না। পুরো আসরে তিনি পেলেন মাত্র তিন উইকেট! ব্যাস, আবারও বাদ।
কিন্তু আইপিএল থেকে ফিরে তিনি কিন্তু আবারও ঘরোয়া ক্রিকেটে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন, উইকেট নিচ্ছেন। এখনও অনেক বিশেষজ্ঞের মত রাজপুতে পেস বোলিংয়ের প্রতিভা বেশ চওড়া। কিন্তু তা হলে কি হবে, আইপিএলে ডাক না পেলে নজর কাড়া যে হবে না!
- বরুণ অ্যারন
বরুণ অ্যারন শুরুর দিকে বিরাট কোহলির স্ট্রাটেজির মধ্যেই ছিলেন। এখনও তিনি ভারতের অন্যতম দ্রুতগতির বোলারদের একজন। কিন্তু এত কিছু সত্ত্বেও অ্যারনের ক্যারিয়ার বার বার থমকে গেছে ইনজুরিতে। দিল্লি ক্যাপিটালস, কলকাতা নাইট রাইডার্স, রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর মত দলে সুযোগ পেয়েও তিনি দলে নিয়মিত হতে পারেননি শুধুমাত্র ইনজুরির সখ্যতায়।
বরুণ অ্যারনের গতিটা বেশি সেটা তো বলাই হল, তাতে কিন্তু বরুণের লাইন লেংথে কোন প্রভাব পড়েনি। লাইন আর লেংথ মেনেই তিনি গতির সাথে বল করতে পারেন। কিন্তু তাতেও বারবার ইনজুরির কবলে পড়ে পারফরম্যান্সে ছাপ পড়ে গেছের বরুণের। আগে যাও দল পেতেন, এবার তার প্রতি কেউ আগ্রহই বোধ করেনি।
- মোহিত শর্মা
চেন্নাই সুপার কিংসে খেলার সময় থেকেই মোহিত শর্মা বেশ পরিচিত নাম হয়ে উঠতে থাকেন। ধোনির অধিনায়কত্বের সময়ে তিনি ভারতীয় দলে নিয়মিতও হয়ে যান। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের সুবাদে তিনি ২০১৫ বিশ্বকাপের দলেও ছিলেন।
ঘরোয়া টি-টোয়েন্টিতেও মোহিতের পারফরম্যান্স মোটামুটি গোছের বলা যায়। এখন অব্দি ১১৮ টি-টোয়েন্টিতে মাঠে নেমে তিনি নিয়েছেন ১১৩ উইকেট। কিন্তু আইপিএলে কিন্তু তিনি দুর্দান্তই ছিলেন, চেন্নাইয়ে খেলার সময় পার্পল ক্যাপও পেয়েছেন। ২০১৬ তে পাঞ্জাব তাকে কিনতে সাড়ে ছয় কোটিও খরচ করেছিল।
আইপিএলের গত আসরে তিনি খেলেছেন দিল্লি ক্যাপিটালসের হয়ে। আর এ আসরটাই যেন কাল হয়েছে মোহিত শর্মার। গোটা আসরে তিনি ৪৫ রানের বিনিময়ে উইকেট নিয়েছেন মাত্র একটি । আর এতেই এবার নিলামে তিনি থেকে গেছেন অবিক্রিত!
- হনুমা বিহারি
হনুমা বিহারি ছিলেন ২০১২ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ভারতের বিশ্বকাপজয়ী দলের ব্যাটসম্যান। হনুমার স্ট্রাইক রোটেট করার ক্ষমতা খুব অল্প বয়সেই বিহারিকে বিশেষজ্ঞদের নজরে এনেছিল। ডেল স্টেইনের মত তারকাও বিহারির ব্যাটসম্যানশিপের প্রশংসা করেছিলেন। আর গেল অস্ট্রেলিয়া সফরে বিহারি ব্যাট হাতে কি করেছেন সেটা তো সবাই দেখেছে।
আইপিএলেও তিনি তাঁর অভিষেক ম্যাচে ম্যাচসেরার পুরস্কার পেয়েছিলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও কেন জানি আইপিএলে কখনও বিহারিকে নিয়মিত সুযোগ দেওয়া হয়নি। সব মিলিয়ে ২৪ আইপিএল ম্যাচে তিনি করেছেন ২৮৪ রান। কিন্তু সুযোগ না পেলে কি হবে, টেম্পারমেন্ট আর কম্পোজারের বিচারে বিহারির তুলনা শুধুই বিহারি। আর তিনি এবার আইপিএলে কোন দলেই ডাক পাননি!