২০১১ থেকে ২০২২। মাঝে কেটে গেছে এগারো বছর। অস্ট্রেলিয়া পেয়েছে প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দেখা, ইংল্যান্ড পেয়েছে পরম আরাধ্য বিশ্বকাপ ট্রফি। কিন্তু বদলায়নি একটি দৃশ্য, মঞ্চ বদলালেও বদলায়নি নাটকের চিত্রায়ণ। সেদিনের বেঙ্গালুরুই যেন আজ ফিরে এলো মেলবোর্নে, আরও একবার আইরিশ রূপকথায় হার মানলো ইংল্যান্ড।
এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূলপর্ব শুরু হওয়ার আগেই বাতাসে গুঞ্জন ছিল অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপের এবারের আসরটাই হতে যাচ্ছে বিশ্বকাপের সবচেয়ে জমজমাট আসর। সেই কথারই স্বার্থক প্রমাণ যেন পাওয়া যাচ্ছে গ্রুপ-১ এর খেলায়। প্রথম ম্যাচেই ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া বড় ব্যবধানে হেরে যাওয়ায় সবাই ধরে নিয়েছিল ইংল্যান্ড এবং নিউজিল্যান্ডই উঠতে যাচ্ছে সেমিতে। কিন্তু পরের ম্যাচেই সব সমীকরণ বদলে দিল আয়ারল্যান্ড, ইংল্যান্ডকে বধ করে জানান দিল সেমির দৌড়ে আছে তাঁরাও।
দশ বছর আগের বিশ্বকাপে এক কেভিন ও’ব্রায়েনের কাছেই হেরে গিয়েছিল ইংল্যান্ড। তাঁর ৬৩ বলে ১১৩ রানের ঝড় থামানোর কোনো পথ খুঁজে পায়নি ইংরেজ বোলাররা। বিশ্বকাপ রেকর্ড ৩২৭ রান তাড়া করে সেদিন ম্যাচ জিতেছিল আইরিশরা।
অথচ সেদিন আইরিশদের পক্ষে বাজি ধরার কেউ ছিল না, অন্তত ইংল্যান্ডের ব্যাটিংয়ের পর তো নয়ই। ৩২৭ রান তাড়া করে যে বিশ্বকাপে জিততে পারেনি কেউই। কিন্তু করে দেখিয়েছিল আয়ারল্যান্ড, চমকে দিয়েছিল পুরো বিশ্বকে।
তারপর ক্রিকেট বিশ্বে এসেছে নানা পালাবদল, সময়ের পরিক্রমায় আয়ারল্যান্ড এখন আর সহযোগী দেশ নয়, টেস্ট স্বীকৃতি পেয়েছে তাঁরাও। ইংল্যান্ডকে হারানো সেই দলের কেবল পল স্টার্লিং এবং জর্জ ডকরেলই আছেন এবারের দলে। তবুও ইংল্যান্ড যেন তাঁদের জন্য একটু বেশিই শক্তিশালী, বিশেষ করে ২০১৯ বিশ্বকাপের পর সাদা বলের ক্রিকেটে রীতিমতো অপ্রতিরোধ্য ইংরেজরা।
সেই উড়তে থাকা ইংল্যান্ডকে আজ মাটিতে নামিয়ে আনলো আইরিশরা। আজ কেভিন ও’ব্রায়েনের মতো অতিমানবীয় হয়ে ওঠেননি কেউ, বরং পুরো দলটা দেখিয়েছে নিখাদ সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং হাল না ছাড়া মানসিকতার অপূর্ব প্রদর্শনী।
ব্যাট হাতে অধিনায়ক বালবার্নি পথ দেখিয়েছেন, তাঁর ৬২ রানের ইনিংসের সুবাদে এক পর্যায়ে ১৮০ ছাড়ানো সংগ্রহের স্বপ্ন দেখছিল আইরিশরা। কিন্তু অভিজ্ঞতার অভাবে মাঝপথে খেই হারিয়ে ফেলে গুটিয়ে যায় ১৫৭ রানেই।
গত কয়েক বছরে রান তাড়া করাটাকে রীতিমতো অভ্যাসে পরিণত করেছিল ইংল্যান্ড। সবাই ধরে নিয়েছিল ১৫-১৬ ওভারের মাঝেই ম্যাচ জিতে রান রেট বাড়িয়ে নেবে জস বাটলারের দল। কিন্তু আয়ারল্যান্ড তা ভাবেনি, তাঁরা চোখে চোখ রেখে লড়াই করতে চেয়েছে। মাঠেও দেখা গিয়েছে তার প্রদর্শনী, ইংরেজ ব্যাটসম্যানরা বাউন্ডারি হাঁকিয়েছে কিন্তু পরের বলেই নতুন আত্নবিশ্বাসে ফিরে এসেছেন আইরিশ বোলাররা।
শুরুতেই জস বাটলারকে জশ লিটল ফেরানোর পর ভয়ংকর রূপ ধারণ করতে পারেননি কোনো ইংলিশ ব্যাটারই। দারুণ বোলিংকে সমীহ করতে বাধ্য করেছেন স্টোকস-মালানদের। ৮৬ রানেই পাঁচ উইকেট হারিয়ে ফেলার পর ইংল্যান্ড ম্যাচে ফিরতে চেয়েছিল মঈন আলীর ব্যাটে ভর করে।
কিন্তু, ভাগ্য বিধাতাও আজ ছিলেন আইরিশদের পক্ষে, বোধহয় চাইছিলেন না এত চেষ্টার পর হেরে যাক এগারো জনের দুর্বার এ প্রচেষ্টা। ঝরিয়ে দিলেন এ বিশ্বকাপের পরিচিত দৃশ্য বৃষ্টি, আর মাঠে নামার সুযোগ পেল না ইংল্যান্ড। ডিএল মেথডে পাঁচ রানে জিতে নিলো আয়ারল্যান্ড।
স্কোরকার্ড দেখে অবশ্য ভুল ভাবার সুযোগ নেই, মঈন আলীর ওই দশ বলের ইনিংসটুকু বাদে পুরো ম্যাচেই আধিপত্য বজায় রেখেছে আয়ারল্যান্ড। জয়টা তাঁরা পেয়েছে যোগ্য দল হিসেবেই।
বিশ্বকাপের বড় মঞ্চে আয়ারল্যান্ড তাই ইংল্যান্ডের জন্য রইলো এক ধাঁধা হয়েই। ২০১১ বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ডের কাছে হেরেও পরের রাউন্ডে খেলার সুযোগ পেয়েছিল ইংল্যান্ড। জস বাটলারের দল চাইবে এবারও সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডকে টপকে এবারও সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটানো এক প্রকার অসম্ভবই বটে। তবুও অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেটে ভরসা রাখতেই পারেন ইংরেজ সমর্থকরা।