খেলাটা তখন সদ্য শেষ হয়েছে। ডেভিড ওয়ার্নারের তিন শিশুকন্যা একে একে এসে জড়িয়ে ধরছে বাবাকে। বাবার হাত ধরে হাঁটছে। বাঁধিয়ে রাখার মত একটা দৃশ্য। ডেভিড ওয়ার্নাররা মনে রাখতে চাইবেন অ্যাডিলেডের এই টেস্টটাকে। তবে, ইংল্যান্ড পেল ভিন্ন এক অভিজ্ঞতা।
আগের টেস্টে ইংল্যান্ডের ৯ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারের ব্যাথাটা প্রশমিত করার সবচেয়ে বড় সুযোগ ছিলো অ্যাডিলেড টেস্টে। অস্ট্রেলিয়ার ডেরায় ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় নিয়েই গোলাপি বলের টেস্ট শুরু করে ইংলিশরা।
অজিদের অধিনায়ক পরিবর্তন, প্যাট কামিন্স, জশ হ্যাজেলউডের মতো সেরা দুই তারকা পেসারই একাদশে নেই! তবুও অ্যাডিলেড টেস্টে অজিদের সামনে ভীত গড়তে পারেননি ইংলিশরা। প্রথম দুই টেস্টের ভরাডুবিতে ইংলিশরা এখন একেবারেই ব্যাকফুটে।
সম্মানের লড়াই অ্যাশেজটা এখন যেন ইংলিশদের জন্য অজিদের সামনে ইনিংস পরাজয় এড়ানোর লড়াই। ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার মহারণটা এখন স্রেফ কাগজে কলমে। অ্যাশেজের প্রথম দুই টেস্টের একপেশে লড়াই যেনো এটাই প্রমাণ করে। লড়াই ছাড়াই যেন অজিদের সামনে মাথা নত করছে ইংলিশরা।
প্রথম টেস্টে কোনোমতে ইনিংস পরাজয় এড়িয়ে ৯ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারের পর দ্বিতীয় টেস্টে ২৭৫ রানের বিশাল হারে বিধ্বস্থ ইংলিশ শিবির। এই টেস্টেও ডেভিড মালান ও জো রুট ছাড়া কেউই নিজেদের ব্যাটিং সামর্থ্য প্রমাণ করতে পারেনি। দীর্ঘদিন পর বেন স্টোকস দলে ফিরলেও দুই টেস্টে এখন পর্যন্ত নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি এই অলরাউন্ডার।
অজিদের টপ অর্ডার ভাঙতে হিমশিম খেয়েছেন ব্রড-অ্যান্ডারসনরা। একাদশে ছিলোনা কোনো স্বীকৃত স্পিনারও! দুই ওপেনার হাসিব হামিদ ও ররি বার্নস দাঁড়াতেই পারেনি স্টার্ক, রিচার্ডসনদের সামনে। দুই অভিজ্ঞ পেসার কামিন্স-হ্যাজিদের অভাব যেনো বুঝতেই দেননি রিচার্ডসন, স্টার্করা।
অপরদিকে, ডেভিড ওয়ার্নার, মার্নাস লাবুশেন, স্টিভ স্মিথের ব্যাটিং অজিদের এগিয়ে রেখেছে আরো এক ধাপ উপরে। বোলিংয়ে স্টার্ক, লিঁওর সাথে নতুন যোগ হওয়া রিচার্ডসনের পেস দাপটে চুপসে গেছে ইংলিশ শিবির। অ্যাডিলেড টেস্টের প্রথম ইনিংসে লাবুশেনের সেঞ্চুরি আর স্মিথ-ওয়ার্নারের নড়বড়ে নব্বইতে ৪৭৩ রানে ইনিংস ঘোষণা করে অজিরা। এরপর প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে মালান ও রুটের জোড়া ফিফটির পরেও স্টার্কের ৪ ও লিঁওর ৩ উইকেট শিকারে মাত্র ২৩৬ রানেই শেষ ইংলিশরা।
ফলোওনের লজ্জায় পড়লেও সেটি তুলে দিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামেন অজিরা। দ্বিতীয় ইনিংসেও লাবুশেনের ফিফটি সাথে অ্যালেক্স ক্যারির ফিফটিতে ২৩০ রানে ইনিংস ঘোষণা করে অজিরা। ৪৬৮ রানের পাহাড়সম টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ঝাই রিচার্ডসনের বোলিং দাপটে শেষ দিনের শেষ সেশনে ১৯২ রানেই গুড়িয়ে যায় ইংলিশরা। টেস্ট ক্যারিয়ারের মেইডেন ৫ উইকেট শিকার করেন রিচার্ডসন। ২৭৫ রানের বিশাল জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে অজিরা।
এই দুই টেস্টে শোচনীয় হার সাদা পোশাকে ইংলিশেদের সাম্প্রতিক সময়ের পারফরম্যান্সেরই প্রতিচ্ছবি। লম্বা সময় ধরেই টেস্টে বাজে সময় পার করছে ইংলিশরা। অধিনায়ক জো রুট ছাড়া ব্যাট হাতে নিয়মিত রানে নেই কেউই। চলতি বছর টেস্টে সর্বোচ্চ রানের মালিক অধিনায়ক জো রুটের পিঠেই যেন দাঁড়িয়ে ইংলিশদের টেস্ট ক্রিকেট। বোলিং বিভাগেও নেই আগের সেই ধার।
চলতি অ্যাশেজে সিরিজ হারটা ইংলিশদের জন্য সময়ের ব্যাপার। বাকি তিন টেস্টে ইনিংস পরাজয় এড়িয়ে লড়াই করাটাই এখন ইংলিশদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। লাবুশেন-ওয়ার্নারদের ফর্ম আর দাপুটে বোলিংয়ে পিঠ বাঁচানোই এখন দায়। ‘ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা’ – আপাতত এটা ভেবেই সমর্থকরা আশায় বুক বাঁধতে পারেন পরের টেস্টে হয়তো ঘুরে দাঁড়াবে ইংলিশরা।