ফুটবলে পুন্যভূমি ব্রাজিল। ফুটবলার তৈরির কারখানাও বলতে পারেন আপনি দেশটিকে। এই দেশের আনাচে-কানাচে ফুটবলার তৈরি হয়। এই দেশের ছেলে-ছোকড়ারা হামাগুড়ি দেওয়া থেকেই সখ্যতা গড়ে তোলে ফুটবল নামক চর্মের এক গোলকের সাথে। সে গোলকের সাথে কি সখ্যতা! তাইতো তাঁদের দেশের খেলোয়াড়েরা গোটা বিশ্বে কম্পন ঘটায়।
এই যে যেমন দিনকতক ধরে একেবারে নাম না জানা এক ব্রাজিলিয়ানের বন্দনায় ভেসেছে গোটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। ব্রাজিলের দ্বিতীয়-তৃতীয় বিভাগ ফুটবল খেলা খেলোয়াড়কে নিয়ে কত চর্চা, কত আলোচনা। রবার্তো কার্লোসকে চেনে না এমন ফুটবল প্রেমিক বা সাধারণ মানূষও খুঁজে পাওয়া দায়। আর ১৯৯৭ সালে তাঁর ফ্রান্সের বিপক্ষে করা সেই অকল্পনীয় ফ্রি কিকের কথা মনে না থাকাটা বেশ অস্বাভাবিক।
ঠিক তেমনই এক কাণ্ড এবার করে বসেছেন ফ্যাবিও আলভেস। সেন্টার সার্কেলের খানিক উপরের একটা জায়গা থেকে ফ্রি-কিক পায় ফ্যাবিও আলভেসের দল ফ্লোরেস্তা। গোলবার থেকে লম্বা দূরত্ব। ফ্যাবিও তাই ঠিক করলেন তিনি কিকটি নেবেন। ব্রাজিলিয়ান তৃতীয় বিভাগের ম্যাচ ছিল সেটি। মুখোমুখি হয়েছিল পয়েন্ট তালিকায় চতুর্থ স্থানে থাকা ফ্লোরেস্তা ও রেলিগেশন লাইনের কাছাকাছি থাকা ভিটোরিয়া।
ফ্যাবিও আলভেস ফ্লোরেস্তার লেফটব্যাক। তিনি বা পায়ের এক দুরন্ত শট চালালেন। বলটা হাওয়ায় খানিক দোলা খেল। ততক্ষণে প্রতিপক্ষের গোলরক্ষক ধোঁকা খেয়ে বসে আছেন। একেবারে গোলবারের বাম কর্ণারের দিকে যেতে থাকা বল হঠাৎই মোড় ঘুরিয়ে অগ্রসর হয় ডান কর্ণারের দিকে। হয়ে যায় দৃষ্টিনন্দন এক গোল। বানানা শটের সে গোলর ভিডিও একেবারে সমুদ্রের স্রোতের মত করে আছড়ে পড়তে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
ফুটবল নামক শিল্পটার চর্চা যে ব্রাজিলে হয় পরম ভক্তির সাথে তার প্রমাণই চোখ জুড়ানো ফ্যাবিওর গোল। একজন তৃতীয় বিভাগ খেলোয়াড়ের পা থেকেও এমন চোখে লেগে থাকার মত গোল আসে। অথচ এই ফ্যাবিওর বয়স এখন ৩৪। অধিকাংশ খেলোয়াড়েরা এই সময়ে নিজেদের ক্যারিয়ারের ইতি টেনে নেন। আর ফ্যাবিও আলভেস এখন অদ্ভুত এক গোল করে আসছেন আলোচনায়।
এমনকি ফ্যাবিও কোনদিন ইউরোপের ফুটবলের আমেজটুকুও পাননি। তিনি একেবারেই ছিলেন ব্রাজিলের ঘরের ছেলে। ব্রাজিলের ঘরোয়া লিগেই তাঁর আনাগোনা। ক্লাব বদলেছেন। ব্রাজিলের ঘরোয়া ক্লাব ফুটবলের সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। তাছাড়া ব্রাজিল জাতীয় দলেও আসার সুযোগ হয়নি তাঁর কখনোই। উপমহাদেশে এমন গোল দেখাটা যেখানে অমাবস্যার চাঁদ। সেখানে ব্রাজিলে তৃতীয় বিভাগে এমন গোল হয়।
অতদূর থেকেও গোল ভেদ করতে চাই একাগ্রতা, মানসিক দৃঢ়তা। সেই সাথে চাই অভিজ্ঞতা ও আত্মবিশ্বাস এবং অনুশীলন। এসব কিছু মিলিয়েই তবে ওমন একখানা গোল করা যায়। এ থেকে কিঞ্চিৎ হলেও আন্দাজ করে নেওয়া যায় যে ঠিক কতটা পূজনীয় এক খেলা ফুটবল ব্রাজিলের আপামর জনতার জন্যে। সর্বোচ্চ পর্যায়ের ফুটবলার হোক কিংবা খুবই সাধারণ। এসব কিছু যেন কখনোই কোন মুখ্য বিষয় নয়।
ব্রাজিলের প্রতিটা খেলোয়াড় ছড়তে পারেন মুগ্ধতা। ব্রাজিলের প্রতিটা খেলোয়াড় তাঁদের দেশের বাইরে যেকোন ক্লাবের হয়ে ফুটবল খেলার যোগ্য সে প্রমাণটাই আবার করলেন ফ্যাবিও আলভেস। তাছাড়া ব্রাজিলের প্রতিটা পরতে পরতে যে এক একটি ফুটবলার তৈরির খনি রয়েছে সে প্রমাণটাও রেখেছেন ফ্যাবিও আলভেস। তাই হয়ত পৃথিবীর ফুটবল ইতিহাসে অন্যতম সফল দল ব্রাজিল।