‘রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেস’ খ্যাত পাকিস্তানের গতিদানব শোয়েব আখতারের ১০০ মাইল প্রতি ঘন্টার গতিতে ছোড়া বলটির কথা মনে আছে? গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৬১.৩ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা গতিতে বল ছুড়েছিলেন তিনি। চতুর্থ ওভারে যখন শোয়েব বল করতে আসেন তখন ইংলিশদের সংগ্রহ মোটে সাত, এক উইকেটের বিনিময়ে।
শোয়েব বল করলেন ইংলিশ ব্যাটার নিক নাইটকে। তাঁর করা প্রথম পাঁচটি বলের গড় গতি হিসেব করলে তা ১৫৯ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টার একটা হিসেব দিবে। তবে শোয়েব যে শেষ বলটি করলেন তা রয়ে গেলো ইতিহাসের পাতায়, পরিসংখ্যানে সবার উপরে। দীর্ঘ আঠারো বছর বাদেও তাঁর সেই রেকর্ড ভাঙতে পারেনি কেউ।
ক্রিকেটে পেস বোলারদের বেশ কদর আছে। তাঁরা যেমন শুরুর দিকে প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের চাপে ফেলে উইকেটে থিতু হতে বাঁধা দেয় ঠিক তেমনি তাঁরাই আবার দলের প্রয়োজনে ব্রেক থ্রুও এনে দিতে সমানভাবেই পটু। তাই পৃথিবীতে ক্রিকেট খেলা প্রতিটি দলেই পেস বোলাররা সমাদৃত।
বর্তমান বিশ্ব ক্রিকেটে এমন অনেক পেস বোলার রয়েছেন যারা যাদের মধ্যে সম্ভাবনা রয়েছে ২০০৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে করা শোয়েব আখতারের সবোর্চ গতির রেকর্ডটি ভেঙে ফেলার। আজকের তালিকায় থাকছেন সেই সকল পেস বোলার যাদের শোয়েবের রেকর্ড ছুঁয়ে দেখবার কিংবা তা টপকে যাবার সম্ভাবনা অত্যন্ত প্রখর।
- জোফরা আর্চার (ইংল্যান্ড)
ইংল্যান্ড পেস আক্রমণের অন্যতম সদস্য জোফরা আর্চারে মধ্যে রয়েছে শোয়েব আখতারের রেকর্ডকে পেছনে ফেলবার। ইংলিশ এই ডানহাতি পেসার বল ছুড়তে পারেন ১৫০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা গতিতে।
এখন পর্যন্ত তাঁর সবচেয়ে দ্রুত বলের গতি ১৫৩.৬২ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা। তবে বর্তমানে বেশ লম্বা সময় ধরে দলের বাইরে রয়েছেন জোফরা আর্চার। তাঁর কনুইয়ের এক ইনজুরি তাঁকে ক্রিকেট থেকে দূরে থাকতে বাধ্য করেছে।
- এনরিচ নরকে (দক্ষিণ আফ্রিকা)
শোয়েব আখতারের রেকর্ড ভাঙ্গার দৌড়ের আরেক প্রতিযোগী দক্ষিণ আফ্রিকান ফাস্ট বোলার এনরিচ নরকে। এই বোলার খুব অল্প সময়েই বিশ্বক্রিকেটের নিজের আগ্রাসি বোলিং দিয়ে সুনাম কামিয়েছেন। তাছাড়া তাঁর আগ্রাসী বোলিং তাঁর ইকোনমি রেটকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে বেশ সাহায্য করছে তাঁকে।
ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) ২০২০ আসরে তিনি তাঁর ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ গতির রেকর্ডটি গড়েছেন ১৫৬.২২ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায় বল করে। তাছাড়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের যৌথভাবে রয়েছেন সবচেয়ে দ্রুত বল করাদের তালিকার শীর্ষে ১৫৩ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টার একটি পরিসংখ্যান নিয়ে।
- মার্ক উড (ইংল্যান্ড)
শোয়েবের রেকর্ড ভাঙ্গ প্রতিযোগিতার অন্যতম অংশগ্রহণকারী হতে পারেন ইংল্যান্ডের আরেক পেসার মার্ক উড। ডানহাতি পেসার মার্ক উড এ বছরের মার্চে ভারতের বিপক্ষে একটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ১৫৫ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা গতিতে বল করে ইতোমধ্যেই একটি রেকর্ড করে ফেলেছেন।
ইংলিশ বোলারদের মধ্যে তাঁর আগে এমন গতিতে বোল ছোড়েনি কেউ। তাছাড়া তিনি ধারাবাহিকভাবে ১৫০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায় বল করে যেতেও পারদর্শী। হয়ত তিনি টপকে যেতে পারেন শোয়েব আখতারের রেকর্ড।
- লকি ফার্গুসন (নিউজিল্যান্ড)
লকি ফার্গুসন আরেকজন পেসার যার কিনা সম্ভাবনা রয়েছে শোয়েব আখতারের রেকর্ড ভেঙে ফেলার। নিউজিল্যান্ড জাতীয় দলের টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের নিয়মিত মুখ লোকি ফার্গুসন নিজের ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ গতির বল ছুড়েছিলেন এ বছরের আইপিএলে।
কলকাতা নাইট রাইডার্সের জার্সি গায়ে তিনি ছুঁয়ে দেখেছিলেন ১৫৩.৬৩ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টার গতি। তাঁর মধ্যে সেই সামর্থ্য রয়েছেন বনে যাওয়ার বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুততম বোলারের খেতাব।
- হারিস রউফ (পাকিস্তান)
পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডির মাটি, বাতাসে নিশ্চয়ই রয়েছে কোন বিশেষ ব্যাপার। নতুবা চিন্তা করুন যেখান থেকে উঠে এসে শোয়েব করেছেন বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে দ্রুত গতির বল, ঠিক সেই স্থান থেকে উঠে আসা আরেকজন কিনা সম্ভাবনা দেখাচ্ছে শোয়েব আখতারের রেকর্ড ছাপিয়ে যাবার। তিনি বর্তমান পাকিস্তান ক্রিকেটের বোলিং আক্রমণের নিয়মিত মুখ হারিস রউফ।
তিনি অনায়াসে ধারাবাহিকভাবে বল করে যেতে পারেন ১৫০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা গতিতে। সদ্য সমাপ্ত হওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হারিস করেছিলেন ১৫৫ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায় বল। সেই বল তাঁকে যৌথভাবে স্থান দিয়েছে দ্রুত গতির বোলারদের তালিকায় সবার উপরে। শোয়েব আখতার নিশ্চয়ই খুশি হবে তাঁর দেশের তারই এলাকার এক ছেলে যদি ভেঙে ফেলেন তাঁর রেকর্ড।