সেরা অলরাউন্ডার, কেন ও কিভাবে!

মিডিয়ানের আশেপাশে যাঁরা রয়েছেন, বেশির ভাগই কিন্তু স্বীকৃত অলরাউন্ডার। টেস্ট প্রতি রানের হিসাবে যাঁরা সবচেয়ে ওপরে রয়েছেন, ক্যালিস ও ইদানিং স্টোকস, দুজনেরই দলে মুখ্য ভূমিকা কিন্তু ব্যাটসম্যানের। আবার একেবারে নিচে যাঁরা রয়েছেন, কেউই অলরাউন্ডার নন। প্রত্যেকেই বোলার, যাঁরা কাজ চালানোর মতো ব্যাট করে দিতে পারেন। কে আসলে অলরাউন্ডার, আর কে নন, সেটা বার করতে এই মিডিয়ান কিন্তু বেশ সাহায্য করেছে।

একজন অলরাউন্ডারকে মাপার সবচেয়ে জুৎসই মাপকাঠি কি হতে পারে? ব্যাপারটা নির্ধারণ করা সহজ নয়। এখনো অব্দি সবচেয়ে জনপ্রিয় মাপকাঠি হলো ব্যাটিং ও বোলিং গড়ের আঙ্কিক তফাৎ।

কিন্তু সেই মাপকাঠি কি সব উত্তর দেয়? জানি না। তাই আমি নিজের মতো করে একটা অনুশীলন করার চেষ্টা করেছি অলরাউন্ডারদের নিয়ে। আজ সেই অনুশীলনের তৃতীয় পর্ব। আগেই বলে রাখি, আমি অল-রাউন্ডার নির্বাচন করার সময় শুধু মাত্র তাঁদেরই বেছে নিয়েছি যাঁদের কমপক্ষে ২০০০ রান ও ১০০ উইকেট রয়েছে। এই অনুযায়ী, টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে খেলোয়াড় দাঁড়াচ্ছেন ৩১ জন। এই পরিসংখ্যানের সময়সীমা গত বছর অর্থাৎ ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর অবধি।

আজ তৃতীয় পর্ব শুরু করার আগে আগেরদিনের একটা ছোট বাকি থাকা হিসাব মিটিয়ে নি। আগেরদিন বোলিংয়ে অবদান লিখতে গিয়ে লিখেছিলাম দলের এবং নিজের গড়ের তফাৎ নিয়ে পরের পর্বে আলোচনা করবো। সেটাই চট করে আগে করে নেওয়া যাক। দেখে নি এই নিরিখে প্রথম ও শেষ পাঁচ জনের নাম।

ফরম্যাট: নিজের বোলিং গড়/ দলগত বোলিং গড় (গড়ের বিয়োগফল)

  • সাকিব আল হাসান – ৩১.১২/৪১.৫৭ (-১০.৪৫)
  • রিচার্ড হ্যাডলি – ২২.২৯/৩১.৭৭ (-৯.৪৮)
  • জেসন হোল্ডার – ২৬.৬৯/৩৪.৬৫ (-৭.৯৬)
  • ইমরান খান – ২২.৮১/৩০.৩৪ (-৭.৫৩)
  • শন পোলক – ২৩.১১/২৯.৩৩ (-৬.২২)

তাঁদের মধ্যে শাকিব, হ্যাডলি ও হোল্ডার-তিনজনেই খারাপ বোলিং আক্রমণ নিয়ে খেলার ফলে, তাঁদের এবং দলগত গড়ের তফাৎ এতটা স্ফীত দেখাচ্ছে। পোলকের দলগত গড় ৩০ এর নিচে হওয়া সত্ত্বেও, এই তালিকায় তিনি রয়েছেন প্রথম পাঁচে, যা প্রশংসাযোগ্য।

এই তালিকায় শেষ ৫ জন হলেন –

  • কার্ল হুপার – ৪৯.৪২/৩০.৪৪ (১৮.৯৮)
  • মঈন আলী -৩৬.৫৯/৩১.৭৩ (৪.৮৬)
  • রবি শাস্ত্রী – ৪০.৯৬/৩৬.৪৪ (৪.৫২)
  • ট্রেভর বেইলি – ২৯.২১/২৪.৯৪ (৪.২৭)
  • জ্যাক ক্যালিস – ৩২.৬৫/২৯.৫৪ (৩.১১)

এখানে উল্লেখ্য, ট্রেভর বেইলি যে দলে খেলেছেন, তাঁদের দলগত গড় সবচেয়ে কম। এবং এতে আশ্চর্য্যের কিছু নেই। কারণ ট্রুম্যান, স্ট্যাথাম, লেকার, লক, টাইসন – ইত্যাদি প্রবাদপ্রতিম ইংরেজ বোলারদের সাথে বেলি খেলতেন। দলগত গড়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন কিথ মিলার।

মিলার যে দলে খেলতেন, তাঁদের গড় ২৫.৬৫। আসলে বেলি এবং মিলার দুজনেই ব্র্যাডম্যান পরবর্তী বিশ্বে কিছুটা বোলিংয়ের জৌলুস ফেরা সময়ের সাক্ষ্য দিচ্ছেন। ব্র্যাডম্যানের সময়কাল, অর্থাৎ ১৯২৮ থেকে ১৯৪৮ অব্দি যেখানে বিশ্বব্যাপী ব্যাটিং গড় ৩১.৯৩, সেখানে ব্র্যাডম্যান পরবর্তী দশ বছরে, অর্থাৎ ১৯৪৯ থেকে ১৯৫৯ অব্দি ব্যাটিং গড় ২৭.৮৮। যাই হোক, এবার এই নিরিখে কপিল ও বোথামের স্থান দেখে নেয়া যাক। ইমরান এবং হ্যাডলি, দুজনেই যেহেতু প্রথম পাঁচে আছেন, তাই ওঁদের বাদ দিচ্ছি।

১. কপিল দেব – ২৯.৬৪/৩৫.৪৯ (-৫.৮৫)

২. ইয়ান বোথাম – ২৮.৪/৩০.৭ (-২.৩)

এখানে একটা ব্যাপার দেখার। কপিল যে ১৩১ টেস্ট খেলেছেন, তার মধ্যে রেজাল্ট হয়েছে মাত্র ৫৬ টি ম্যাচের, অর্থাৎ ৪২.৭৫% । কাজেই দলগত বোলিং গড়, কপিলের ক্ষেত্রে অনেকটাই বেশি-৩৫.৪৯। আবার বোথামের ১০২ টেস্টে রেজাল্ট হয়েছে এমন ম্যাচের সংখ্যা ৬৫, অর্থাৎ ৬৩.৭২% । তাই বোথামের ক্ষেত্রে দলগত গড় কপিলের চেয়ে বেশ কিছুটা কম হওয়া সত্ত্বেও, গড়ের তফাতে কপিল অনেকটাই এগিয়ে।

এবার সরাসরি চলে আসি, আজকের বিষয়ে। আজ আমরা দেখে নেবো, টেস্ট প্রতি রানের হিসাবে কে কোথায় দাঁড়িয়ে। এখানে বলে রাখি, টেস্ট প্রতি রান কিন্তু রানের গড় নয়। রানের গড় অনেক ক্ষেত্রে নট-আউটের কারণে সঠিক তথ্য দিতে পারে না।

তাই টেস্ট প্রতি রান, আমার ব্যক্তিগত ভাবে মনে হয়েছে, ব্যাটিং গড়ের চেয়ে কিছুটা হলেও ভালো পরিসংখ্যান। একটা উদাহরণ দিয়ে দেই। ধরুন খেলোয়াড়টি হলেন সোবার্স। তিনি ৯৩ টেস্টে ৮০৩২ রান করেছেন। তাঁর গড় ৫৭.৮। কিন্তু তাঁর টেস্ট প্রতি রান হলো ৮৬.৩৬৬ (৮০৩২/৯৩)।

টেস্ট প্রতি রানের হিসাবে প্রথম পাঁচ জন হলেন –

  • গ্যারি সোবার্স – ৮৬.৩৬
  • জ্যাক ক্যালিস – ৮০.০৫৪
  • সাকিব আল হাসান – ৬৮.৯৬৪
  • বেন স্টোকস – ৬৬.০৯০
  • টনি গ্রেগ – ৬২.০৫২

টেস্ট প্রতি রানের হিসাবে শেষ পাঁচ জন হলেন –

  • অনিল কুম্বলে – ১৮.৯৮৫
  • হরভজন সিং – ২১.৫৯
  • শেন ওয়ার্ন – ২১.৭৫২
  • স্টুয়ার্ট ব্রড – ২৩.৩২২
  • চামিন্দা ভাস – ২৭.৮২৯

এবার বলি, আমি টেস্ট প্রতি রানের মিডিয়ান বার করেছি। ছোট থেকে বড়ো, এই নিরিখে সাজালে, একটি ডেটা-সেটের মিডিয়ান বলতে আমরা সেই সংখ্যাটাকেই বুঝি, যেটি রয়েছে একেবারে মাঝে। অর্থাৎ, অর্ধেক সংখ্যা তার ওপরে, অর্ধেক তার নিচে।

এখানে ৩১ জনের মধ্যে মিডিয়ান হলেন ১৬ নম্বর, ইমরান খান। মিডিয়ান টেস্ট প্রতি রান হলো ৪৩.৬১। যা ইমরান খানের ছিল। এই মিডিয়ানের একেবারে কাছাকাছি থাকা (ওপরে ও নিচে ) খেলোয়াড়দের যদি দেখি, তাঁরা হলেন,
মিডিয়ানের ঠিক ওপরের পাঁচ জন –

  • মঈন আলী (৪৬.৩৬৭)
  • জেসন হোল্ডার (৪৬.৭৯)
  • রবি শাস্ত্রী (৪৭.৮৭৫)
  • ভিনু মানকর (৪৭.৯৩২)
  • অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ (৪৮.৬৭১)

মিডিয়ানের ঠিক নিচের পাঁচ জন –

  • ড্যানিয়েল ভেট্টোরি (৪০.০৯৭)
  • আলফ্রেড রোডস (৪০.০৮৬)
  • কপিল দেব (৪০.০৬১)
  • ট্রেভর বেইলি (৩৭.৫৪১)
  • রিচার্ড হ্যাডলি (৩৬.৩২৬)

অর্থাৎ, মিডিয়ানের আশেপাশে যাঁরা রয়েছেন, বেশির ভাগই কিন্তু স্বীকৃত অলরাউন্ডার। টেস্ট প্রতি রানের হিসাবে যাঁরা সবচেয়ে ওপরে রয়েছেন, ক্যালিস ও ইদানিং স্টোকস, দুজনেরই দলে মুখ্য ভূমিকা কিন্তু ব্যাটসম্যানের। আবার একেবারে নিচে যাঁরা রয়েছেন, কেউই অলরাউন্ডার নন। প্রত্যেকেই বোলার, যাঁরা কাজ চালানোর মতো ব্যাট করে দিতে পারেন। কে আসলে অলরাউন্ডার, আর কে নন, সেটা বার করতে এই মিডিয়ান কিন্তু বেশ সাহায্য করেছে।

যাহোক, এই নিরিখে বোথামের টেস্ট প্রতি রান দেখেনি। ইমরান, হ্যাডলি বা কপিল-তিনজনেই মিডিয়ানের আশেপাশে বিরাজ করছেন। বোথাম সেখানে খুব পিছিয়ে নন। বোথামের অবশ্য টেস্ট প্রতি রান তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি-৫০.৯৮০।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...