৮০’র সেরা চার ও উইজডেনের ‘১০০’

এই তালিকায় বোথাম আর কপিল দুজনেরই উপস্থিতি দুই বার করে। ১৯৮০ সালের জুবিলি টেস্টে বথাম মোটামুটি একাই হারিয়ে দেন ভারতকে দুই ইনিংস মিলে ১৩টি উইকেট এবং সেই সঙ্গে ব্যাট হাতে ১১৪ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেলে। এই টেস্টেরই দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৮ রানের বিনিময়ে ৭ উইকেট নেন বোথাম যার স্বীকৃতি দিয়েছে উইজডেন।

একটা ভুল ধারনার বিষয়ে আলোচনার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। অনেককে বলতে শুনেছি ইয়ান বোথাম ও কপিল দেব ব্যাট হাতে বেশি উজ্জ্বল, ইমরান খান ও রিচার্ড হ্যাডলি বল হাতে। কথাটা হয়ত এই চারজনের মধ্যে তুলনা করার সময় মেনে নেওয়া যেতে পারে কিন্তু সামগ্রিক বিচারে চারজনই বল হাতেই বেশি উজ্জ্বল।

এরা প্রত্যেকেই প্রায় সাড়ে তিনশোর ওপর টেস্ট উইকেট নিয়েছেন যার সমমূল্য অন্তত ৭০০০ রান। অথচ এদের কারোরই সংগ্রহে সাড়ে পাঁচ হাজার রানও নেই। যদি এক ইনিংসে পাঁচ উইকেট নেওয়া আর ব্যাট হাতে সেঞ্চুরি করাকে সমান মর্যাদা দেওয়া হয় তাহলেও দেখা যাবে চারজনের ক্ষেত্রেই ইনিংসে পাঁচ উইকেট নেওয়ার সংখ্যা তাদের সেঞ্চুরির চেয়ে অনেকটা বেশি।

আইসিসি র‍্যাংকিংয়েও বোথাম, ইমরান ও হ্যাডলি প্রত্যেকেই কোন না কোন সময় পৃথিবীর এক নাম্বার বোলার ছিলেন (কপিলের সেরা র‍্যাংকিং ২)। আর ব্যাট হাতে একমাত্র বোথাম ছাড়া প্রথম ১০-এর মধ্যে আর কেও আসতে পারেন নি (বোথামের সেরা র‍্যাংকিং ৩)।

এই শতাব্দীর আরম্ভে উইজডেনও একটা লিস্ট বের করেছিল – গত শতাব্দীর ১০০ সেরা ব্যাটিং আর বোলিং পারফর্মেন্সের লিস্ট। এই লিস্টে আমাদের আলোচ্য চার ক্রিকেটারও উপস্থিত রয়েছেন।

টেস্টের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ইনিংসের লিস্টে চার নম্বরে রয়েছেন ইয়ান বোথাম – সেই রূপকথার অ্যাসেজ সিরিজে খেলা ১৪৯ রানের অনবদ্য ইনিংসটির জন্যে। স্বয়ং ডেনিস লিলির নেতৃত্বাধীন অস্ট্রেলিয়ান আক্রমণকে ছিন্নভিন্ন করে একটা সেশনের মধ্যে ম্যাচের (এবং সিরিজের) পুরো চেহারাই বদলে দেন বোথাম।

এই তালিকায় আছেন কপিলও। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে অ্যালান ডোনাল্ড অ্যান্ড কোম্পানির বিরুদ্ধে তার ১২৯ রানের ইনিংসকে উইজডেন রেখেছে ৭৫ নাম্বারে। ৩১/৬ থেকে কপিলের সেঞ্চুরির ওপর ভর করে ২১৫ রানে পৌঁছয় ভারত। তবে শেষরক্ষা হয় নি, ম্যাচে মোট ১২ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হন সেই ডোনাল্ডই, ম্যাচও জিতে নেয় দক্ষিন আফ্রিকা।

বোলিং পারফর্মেন্সে পাঁচ নাম্বারে রয়েছেন হ্যাডলি – ১৯৮৫ সালে ব্রিসবেনে ৫২ রানের বিনিমিয়ে ৯ উইকেট নেওয়ার জন্যে। ম্যাচটি ইনিংসে জেতে নিউজিল্যান্ড, হ্যাডলি দুই ইনিংস মিলিয়ে মোট ১৫ উইকেট নেন।

১৮ নাম্বারে আছেন ইমরান – ১৯৮২ সালে করাচিতে ভারতের বিরুদ্ধে ৮/৬০ স্পেলটির জন্যে। ইমরানের অনবদ্য এই স্পেলটির বিষয়ে আলোচনা আগেই করেছি। এক্ষেত্রে ইনিংসে পরাজিত হয় ভারত, ম্যাচে মোট ১১ উইকেট নিয়ে মূল কাণ্ডারি ইমরান।

এই তালিকায় বোথাম আর কপিল দুজনেরই উপস্থিতি দুই বার করে। ১৯৮০ সালের জুবিলি টেস্টে বথাম মোটামুটি একাই হারিয়ে দেন ভারতকে দুই ইনিংস মিলে ১৩টি উইকেট এবং সেই সঙ্গে ব্যাট হাতে ১১৪ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেলে। এই টেস্টেরই দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৮ রানের বিনিময়ে ৭ উইকেট নেন বোথাম যার স্বীকৃতি দিয়েছে উইজডেন।

বথামের নামে দ্বিতীয় এন্ট্রি তার জীবনের শ্রেষ্ঠ বোলিং করার জন্যে – লর্ডসে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মাত্র ৩৪ রানের বিনিময়ে ৮ উইকেট। সঙ্গে সেঞ্চুরিও আসে বথামের ব্যাট থেকে। এবং ইনিংসে জয় আসে ইংল্যান্ডের।

১৯৮০ সালে চেন্নাইতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কপিলের ম্যাচ জেতানো স্পেলটি (৭/৫৬) লিস্টে ৩৭ নম্বর স্থান পেয়েছে। ম্যাচে মোট ১১ উইকেট নেওয়া ছাড়াও ইমরানদের ঠেঙিয়ে ৮৪ রানের আক্রমণাত্মক ইনিংস খেলেন কপিল। কপিলের দ্বিতীয় এন্ট্রির ঠিক পরেই – ১৯৮৩র পাকিস্তান সফরে গিয়ে লাহোরে ৮/৮৫।

সব মিলিয়ে উইজডেনের টেস্টের তালিকায় বোথাম আর কপিল তিন বার করে, ইমরান এবং হ্যাডলি একবার করে স্থান পেয়েছেন।

একদিনের ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠ পারফর্মেন্সেরও এরকমই একটা লিস্ট রয়েছে। সেখানে অবশ্য চারজনের মধ্যে মাত্র দুইজন রয়েছেন – কপিল দেব, জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে তার মহাকাব্যিক অরাজিত ১৭৫ রানের ইনিংসটির জন্যে (৪ নম্বরে)। ইমরান – ভারতের বিরুদ্ধে শারজায় ৬/১৪ এর বিধ্বংসী স্পেলটির জন্যে। তবে কপিলের ১৭৫ যেখানে ভারতকে ম্যাচ এবং সম্ভবত বিশ্বকাপ জিততে সাহায্য করে, ইমরানের অনবদ্য স্পেলটির পরও পাকিস্তান ম্যাচটি হেরে যায়।

সুতরাং টেস্ট এবং এক দিনের ম্যাচ – দুটো মিলে কপিল দেবের উপস্থিতি উইজডেনের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠের লিস্টে চার জনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি – মোট চার বার।

এছাড়া চারজনই উইজডেনের বর্ষসেরা পাঁচ ক্রিকেটারের লিস্টেও ছিলেন – বোথাম ১৯৭৮ সালে, রিচার্ড হ্যাডলি ১৯৮২ সালে এবং ইমরান ও কপিল ১৯৮৩ সালে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...