‘অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট’ বাংলার এই প্রবাদটার প্রচলন তো আর কম নয়। একই কাজে অধিক মানুষের হস্তক্ষেপ সে কাজের ফলাফলকে প্রভাবিত করে। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের নির্বাচকরা হয়ত এই তথ্যে বিশ্বাসী না। আবার হতে পারে তাঁরা ভয়ের কারণেই রাখছেন বাড়তি সতর্কতা।
বাংলাদেশ ক্রিকেটে হঠাৎ করেই আঘাত করেছে এক দমকা হাওয়া। নব জাগরণের হাওয়া। টি-টোয়েন্টি দলে এসেছে আমুল পরিবর্তন। দলে নেই সিনিয়র খেলোয়াড়। বন্দনায় ভেসে গেছে গোটা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। প্রশংসায় পঞ্চমুখ। এমন এক সাহসী সিদ্ধান্তের জন্যে বাহবা তাঁদের প্রাপ্যই। তবে মাঝে নির্বাচকদের খানিকটা ভীতি চাপা পড়ে গেছে। তার খেয়াল যেন কেউই রাখেনি।
বাংলাদেশ এই মাসের শেষেই যাচ্ছে জিম্বাবুয়ে সিরিজে। সেখানে খেলবে তিনটি টি-টোয়েন্টি। তাঁর জন্যে ১৫ সদস্যের দল ঘোষণা করা হয়েছে কাজী নুরুল হাসান সোহানকে অধিনায়ক করে। একেবারে তারুণ্যে ঠাসা একটা দল। তবে সমস্যাটা হচ্ছে দলের ১৫ সদস্যের পাঁচজনই ওপেনার। হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন। বাংলাদেশ পাঁচজন ওপেনার নিয়ে খেলতে যাবে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে।
এখানে একটা জিনিস স্পষ্ট বাংলাদেশের নির্বাচকেরা তাঁদের নিয়মিত ওপেনারদের ভরসা করতে পারেন না। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের ওপেনিংয়ের একটা দিক লম্বা সময় ধরে সামলাচ্ছেন তামিম ইকবাল খান। তিনি অবশ্য টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিয়ে ফেলেছেন। অবসরের ঘোষণা আসার বহু আগে থেকেই তিনি ছিলেন টি-টোয়েন্টি দলের বাইরে। এ সময়ে বাংলাদেশ বহুবার একটা কার্য্যকর ওপেনিং জুটি খুঁজে বের করবার চেষ্টা করছে।
সে অভিযান মনে হয় এখনও অব্যাহত। একটি তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের জন্যে সর্বোচ্চ তিনজন ওপেনার থাকতে পারেন দলে। যেকোনরকম ইনজুরি এলে যেন আরও একজন ওপেনারকে পাওয়া যায়। আটখানা নতুন উদ্বোধনী জুটি গড়েছে বাংলাদেশ বিগত এক বছরে। তবে সাফল্যের দেখা মেলেনি। একমাত্র নাঈম শেখ ছাড়া ওপেনিং পজিশনে ধারাবাহিক রান করা ব্যাটার নেই একজনও।
আবার নাঈমের ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ নিয়ে তো নিন্দার ঝড় বয়ে যায়। উভয় সংকটের মাঝে নির্বাচকেরা। তাই তিনি আপাতত দৃশ্যপটের আড়ালে থাকছেন। কিন্তু ওই যে ওপেনিং নিয়ে একটা শঙ্কা রয়েই গেছে। এখানটায় পরিকল্পনার বড্ড অভাব। সেদিকটা স্পষ্ট।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের দলে রয়েছেন যথাক্রমে মুনিম শাহরিয়ার, এনামুল হক বিজয়, লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত, পারভেজ হোসেন ইমন। নতুন সদস্য হিসেবে যুক্ত হয়েছেন ইমন। আগে স্কোয়াডে ডাক পেলেও তাঁর অভিষেক এখনও হয়নি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেও বাংলাদেশ দলে ছিল চারজন ওপেনার। বাদ ছিল ইমন। তাঁকে যুক্ত করে ওপেনারদের ট্যালিটা আরেকটু ভরাট হল। এতে করে সমস্যা হচ্ছে আমরা বিশ্বকাপের তিনমাস আগেও নিজেদের ওপেনিং জুটি নিয়ে নিশ্চিত নই। অথচ তামিমের অবর্তমানে ঠিকঠাক মুনীম শাহরিয়ার ও লিটন দাস জুটিকে সময় দিয়ে তাঁদেরকে তৈরি করে নেওয়া যেত।
আবার বাম-হাতি, ডান-হাতি কম্বিনেশনের কথা মাথায় রেখে শান্তকে বাজিয়ে দেখে নেওয়ার দরকার ছিল আগেই। যেহেতু তিনি লম্বা সময় ধরেই নেই রানে, সেহেতু তাঁর দলের থাকাটা প্রশ্নবিদ্ধ। হয়ত সাকিবের অবর্তমানে তিন নম্বরে খেলানো হতে পারে শান্তকে। তবে তিনি রয়েছে তাঁর আত্মবিশ্বাসের তলানীতে। এমন পরিস্থিতিতে তাঁকে দলের সাথে নিয়ে যাওয়া মানেই বাড়তি এক বোঝা।
অন্যদিকে এনামুল হক বিজয় ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে দুর্দান্ত এক সময় পার করেছেন। সেটা ছিল ওয়ানডে ফরম্যাট। তবে জাতীয় দলে ফেরার পর এই ফরম্যাটায় তিনি যেন অবহেলিত। টি-টোয়েন্টিতে স্বল্প সময়ে তাঁকে দলে সুযোগ দেওয়াটাও তো বাকামি। তিনি বরং আবার তলিয়ে যেতে পারেন অতলে। অথচ পারভেজ হোসেন ইমনের সম্ভাবনা ছিল টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে।
তিনি মাথা খাটিয়ে পাওয়ার-প্লে ঠিকঠাক ব্যবহার করতে জানতেন। তাছাড়া তাঁর কব্জির জোরও মন্দ নয়। আর পেশিশক্তিও রয়েছে মন্দের ভাল। এমন একজন খেলোয়াড় ছিল রাডারে। তবে তাঁকে সময় দেওয়া হয়েছে। সেটা বেশ ভাল দিক। কিন্তু হুট করে বিশ্বকাপের আগে দলের সাথে তাঁকে সংযুক্ত করে দেওয়া বা তাঁকে খেলতে নামিয়ে দেওয়া কি আদৌ কোন ভাল সিদ্ধান্ত। ভীষণ চাপের মুখে তিনি নিজের সেরাটা দিতে ব্যর্থ হবেন নিশ্চয়ই।
এই যে বিশ্বকাপের মাত্র কয়েকটা মাস বাকি। আক্ষরিক অর্থে ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশে পারফরমই করতে পারেনি। অন্তত নির্বাচকদের উচিৎ ছিল ২০২২ বিশ্বকাপের আগে বাকি থাকা সময়গুলোতে একটি জুটির উপর আস্থা রাখা। তাঁদেরকেই সময় দিয়ে যাওয়া। তবে এই যে পাঁচ ওপেনার সংযুক্তি মনে প্রশ্ন জাগায়, বাংলাদেশ এখনও ওপেনার নিয়ে সন্দিহান!