বিপিএল ২০২২: নির্বাচিত ফ্লপ একাদশ

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) অষ্টম আসরের পর্দা নেমেছে। এবার কাটাছেড়ার পালা। মাসব্যাপী আয়োজিত এই টুর্নামেন্টের আলোচিত সব ব্যর্থ খেলোয়াড়দের নিয়ে ফ্লপ একাদশ নির্বাচন করেছে খেলা ৭১। যেকোনো একাদশ নির্বাচনই বেশ ঝক্কির কাজ। অনেককে রাখতে চেয়েও তাই রাখা সম্ভব হয়নি। ফলে, এটা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক চলতেই পারে।

পয়েন্ট তালিকায় সবার নিচের থাকা দল সিলেট সানরাইজার্স থেকে একাদশে আছেন তিনজন। টুর্নামেন্টের রানার আপ হওয়ার পরও ফরচুন বরিশাল থেকে এই একাদশে আছেন তিনজন। শেষের দিক থেকে দুই নম্বরে থাকা দল মিনিস্টার ঢাকা থেকে আছেন দু’জন। দ্বাদশ ব্যক্তি-সহ দু’জন আছেন চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স দল থেকে। বাকি দু’জন খুলনা টাইগার্সের।

  • মোহাম্মদ নাঈম শেখ (মিনিস্টার ঢাকা)

গত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশ জাতীয় দলের ওপেনিং এর একটা খরা চলছে। সেই খরা কাটাতে মোহাম্মদ নাঈম শেখকে ধরে নেওয়া হয়েছে টি-টোয়েন্টির ওপেনিংয়ে। তিনি নিয়মিত রান পেতেন বলে বিধায়। তবে তাঁর ব্যাটিং দূর্বলতা যেন আরো স্পষ্ট হয়েছে এবারের বিপিএলে। তিনি রান তো করতেই পারেননি বরং তাঁর ব্যাটিং পজিশন হারিয়েছেন। তবে ব্যর্থদের হয়ে ওপেনিংটা তিনিই করছেন। আট ইনিংসে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে কেবল ৫০টি রান।

  • ক্রিস গেইল (ফরচুন বরিশাল)

টি-টোয়েন্টির ফেরিওয়ালা আধুনিক টি-টোয়েন্টিতে নিজের গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছেন। এবারের বিপিএলে সেটা আবারও প্রমাণিত হল। গোটা আসর জুড়ে ১০ ম্যাচে করেছেন ২৪১ রান। তবে, সেই রানটা মোটেও গেইল সুলভ নয়। স্ট্রাইক রেট টেনেটুনে ১১৩-এর মত। যেই মারকুটে ব্যাটিংয়ের জন্যে তিনি বিশ্বব্যাপী প্রসিদ্ধ ছিলেন সেই ব্যাটিংটাই খুচে পাওয়া যায়নি বিপিএলের অষ্টম আসরে।

  • সৌম্য সরকার (খুলনা টাইগার্স)

সৌম্য সরকারকে ঠিক ব্যর্থ বলা যায় না। নয় ম্যাচে ১৬৪ রান করেছেন। কিন্তু, ব্যাটিং স্ট্রাইক রেট ১১০-এর নিচে। মিডিয়াম পেসে নেন চার উইকেট। তবে, ব্যাটিংয়ে তাঁর কাছ থেকে যেমনটা প্রত্যাশিত ছিল, সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। সবাই হয়ত প্রত্যাশা করেছিলেন সৌম্য জাতীয় দলে ফেরার একটি মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করবেন এবারের বিপিএলকে। কিন্তু সেটা আর হয়নি।

  • আফিফ হোসেন ধ্রুব (চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স)

তরুণ তুর্কি আফিফ হোসেন ধ্রুবের উপর বেশ একটা প্রত্যাশা ছিলো তাঁর উপর। কিন্তু ব্যর্থদের তালিকায় নিজের নামটি তুলে নিয়েছেন আফিফ। পুরো টুর্নামেন্টে তাঁর উপর দায়িত্ব ছিলো দলের ব্যাটিং এর ভার নিজের কাঁধে নেওয়া। তবে সেদিক থেকে তিনি প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি। ১২ ম্যাচে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে কেবল ২৩২। একশ পার করা স্ট্রাইকরেট হলেও গড়টা মাত্র ১৯ এর ঘরে।

  • নাজমুল হোসেন শান্ত (ফরচুন বরিশাল)

বাংলাদেশ জাতীয় দলের ব্যাটিংয়ের ভবিষ্যৎ হিসেবে বিবেচিত হওয়া তরুণদের মধ্যে নাজমুল হোসেন শান্তর নামটাও রয়েছে। কিন্তু এবারের বিপিএলে তাঁর ব্যাটটা ঠিক হাসেনি। ১১ ইনিংসের তাঁর স্ট্রাইকরেট ছিলো ৯০ এর খানিক বেশি। টি-টোয়েন্টির বিচারে এমন স্ট্রাইকরেট দৃষ্টিকটু। যদিও টপ অর্ডার ব্যাটার হলেও তাঁর ব্যাটিং অর্ডারের রদবদল হয়েছে বহুবার। তবুও মাত্র ১৮৮ রান করাটা কোন ভাবেই ভাল পারফর্মেন্সের মানদণ্ড হতে পারে না।

  • মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত (সিলেট সানরাইরার্জ) – অধিনায়ক

ফ্লপ একাদশের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করবেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। ক’দিন আগেই বিসিএলের ওয়ানডে ফরম্যাটে সেন্ট্রাল জোনকে শিরোপা জিতিয়েছেন মোসাদ্দেক। সেই কথা বিবেচনায় তাঁকে দেওয়া হয়েছিলো সিলেট সানরাইজার্সের অধিনায়কের দায়িত্ব। তবে তিনি পুরোপুরি ব্যর্থ। তাঁর দল টুর্নামেন্ট শেষ করেছে টেবিলের একেবারে তলানিতে থেকে মাত্র এক জয় নিয়ে। তাছাড়া ব্যাট-বল হাতেও বাজে একটি সময় পার করেছেন মোসাদ্দেক।

  • নুরুল হাসান সোহান (ফরচুন বরিশাল) – উইকেটরক্ষক

শুধু উইকেটরক্ষক হলে তিনি অবশ্যই দেশের সেরা। এবারের বিপিএলেও তিনি সেরা। ১৮ টি ডিসমিসাল নিয়েছেন ১০ ম্যাচে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা কেনার লুইস যেখানে নিয়েছেন সাতটি। তবে, ব্যাটিংটা মাথায় রাখলে নুরুল হাসান সোহান চূড়ান্ত ব্যর্থ। ১০ ম্যাচে মাত্র ৬৬ রান করেছেন তিনি। স্ট্রাইক রেট মাত্র ৯০-এর আশেপাশে!

  • রবি বোপারা (সিলেট সানরাইজার্স)

স্বনামধন্য বিদেশিদের মধ্যে সবচেয়ে সবচেয় ফ্লপ ছিলেন রবি বোপারা। অভিজ্ঞতায় ভরপুর রবি বোপারার উপর স্বাভাবিকভাবেই দলের মধ্যে একটা গুরুত্বপূর্ণ রোল প্লে করতে হয়েছে। কিন্তু পুরো সিলেট দলের মতো তিনিও ছিলেন ব্যর্থ। অলরাউন্ডার রবি বোপারা ছিলেন বড্ড বেশি ফিঁকে। ব্যাটিং কিংবা বোলিং কোথাও তিনি নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি।

  • নাভিন-উল-হক (খুলনা টাইগার্স)

টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে আফগানিস্তানের খেলোয়াড়দের বেশ একটা চাহিদা রয়েছে বিশ্বজুড়ে। সেদিক চিন্তা করেই হয়ত খুলনা টাইগার্স তরুণ নাভিন-উল-হককে দলে ভিড়িয়েছিলেন। তবে তিনি কেবল তিনটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন খুলনার হয়ে। নিয়েছেন মাত্র দুই উইকেট। তবে এই তিন ম্যাচে তিনি খরচ করেছেন ১৩৪ রান। স্বাভাবিকভাবেই দল তাঁর উপর আর আস্থা না রাখতে পারায় কেবল তিনটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন তিনি।

  • তাসকিন আহমেদ (সিলেট সানরাইজার্স)

টুর্নামেন্টটিতে তাসকিন আহমেদের দিকে চোখ ছিল। সিলেটের বড় তারকা ছিলেন তিনি। কিন্তু, খেলতে পারলেন মাত্র চার ম্যাচ। সেখানে পেয়েছেন পাঁচ উইকেট। আর তিনি মাঠের বাইরেও পারিশ্রমিক ইস্যুতে বিতর্ক ছড়ান। আর রহস্যময় এক ইনজুরি নিয়ে টুর্নামেন্টের মাঝপথেই দল থেকে বের হয়ে যান।

  • মাশরাফি বিন মুর্তজা (মিনিস্টার ঢাকা)

লম্বা সময় বাদে এই আসর দিয়েই প্রতিযোগীতামূলক ক্রিকেটে ফিরেছিলেন দেশের ক্রিকেটের অন্যতম সেরা পেসার মাশরাফি বিন মুর্তজা। তবে, তিনি নিজের নামের সাথে সুবিচার করতে পেরেছেন সামান্যই। ফিটনেস জনিত সমস্যায় খেলতে পেরেছেন মোটে চারটা ম্যাচ। তাতে পেয়েছেন চারটা উইকেট।

  • সাব্বির রহমান রুম্মান (চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স) – দ্বাদশ ব্যক্তি

একসময় সাব্বির রহমান রুম্মানকে বিবেচনা করা হতো একজন বিধ্বংসী ব্যাটার হিসেবেই। সেই প্রমাণ তিনি বিপিএলেই রেখেছিলেন বহুবার। কিন্তু জাতীয় দল থেকে বাদ পড়া সাব্বির নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন। সেই সন্ধান অব্যাহত ছিলো এবারের বিপিএলেও। সেই বিধ্বংসী সাব্বিরের দেখা পাওয়া যায়নি একটিবারের জন্যেও। ১০০ এর একটু বেশি স্ট্রাইকরেট রান করেছেন তিনি। তবে তা দলের উপকারে খুব বেশি কাজে আসেনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link