বিশ্বকাপের ফ্লপ একাদশ

যেকোনো বিশ্বকাপই প্রত্যেকটা খেলোয়াড়ের পারফর্ম করার জন্য বড় একটা মঞ্চ। সেই মঞ্চে কেউ আলো ছড়ান, আবার কেউবা ব্রাত্য হয়ে কাটিয়ে দেন। এই যেমন এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ স্যাম কারেন, শাহীন শাহ আফ্রিদি, বিরাট কোহলিরা দুর্দান্ত পারফর্ম করে পুরো আসর মাতিয়ে রেখেছিলেন।

কিন্তু, সবার বিশ্বকাপ তো আর এদের মত রঙিন কাটেনি। অনেকেই আছেন যারা দলের চাহিদা পূরণ করতে পারেননি। এমনকি ব্যক্তিগত প্রত্যাশার খাতাতেও তেমন কিছু যোগ করতে পারেননি। এ বারের বিশ্বকাপে ঠিকঠাক প্রত্যাশা মেটাতে না পারা সেই সব ক্রিকেটারদের নিয়েই খেলা ৭১-এর এই নির্বাচিত ফ্লপ একাদশ।

  • বাবর আজম (পাকিস্তান) 

বড় আসরে বাবর আজম দুর্দান্ত করবেন, এমন প্রত্যাশা সবারই থাকে। তবে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ঠিক যেন নিজের ছায়া হয়ে ছিলেন তিনি। পুরো আসরে ৭ ম্যাচে ১৭.৭১ গড়ে করেছেন ১২৪ রান। আর এর চেয়েও সবচেয়ে দৃষ্টিকটু বিষয় ছিল তাঁর স্ট্রাইক রেট।

পুরো টুর্নামেন্টে মাত্র ৯৩.২৩ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করেছেন বাবর। তাঁর এমন ব্যাটিংয়ের কারণে ভুগতে হয়েছে পাকিস্তানকেও। সেমিফাইনাল ম্যাচ বাদে ঠিক কোনো ম্যাচেই পাকিস্তানের শুরুটা ভাল হয়নি। আর তাঁর সিংহভাগ দায়টা ছিল বাবর আজমেরই।

  • রোহিত শর্মা (ভারত) 

ফরম্যাটটা যখন টি-টোয়েন্টি তখন রোহিত শর্মাকে নিয়ে প্রত্যাশা আকাশ ছোঁয়া থাকবেই। কারণ বিশ্বকাপ শুরুর আগেও তিনিই ছিলেন আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ব্যাটার। কিন্তু কোহলির কাছে সেই রেকর্ড তো হারিয়েছেনই, সাথে নিজের ফর্মটাও হারিয়েছেন এই বিশ্বকাপে। পুরো আসরে ১৯.৩৩ গড়ে রান করেছেন ১১৬।

আর টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে যার ব্যাটিং স্ট্রাইক রেট ১৪০, সেই রোহিত এবার ব্যাটিং করেছেন ১০৬ স্ট্রাইক রেটে। স্বাভাবিক ভাবেই প্রতি ম্যাচে ভারতের ব্যাটিং লাইনআপে চাপ বাড়িয়েছেন। আর সেটার কারণে দল হিসেবে ভারত দিন শেষে ভালও খেলতে পারেনি। পাহাড়সম প্রত্যাশা নিয়ে সেমিতে এসেই থেমে গিয়েছে তাদের স্বপ্নযাত্রা।

  • মিশেল মার্শ (অস্ট্রেলিয়া) 

আগের বছরে হওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালে ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন মিচেল মার্শ। তবে এবারে ঠিক সেই ছন্দটা দেখাতে পারেননি তিনি। কোনো ম্যাচেই ঠিক নিজের ইনিংসটা বড় করতে পারেননি। পুরো আসরে ২৬.৫০ গড়ে করেছেন ১০৬ রান। অস্ট্রেলিয়ার মত দলে টপ অর্ডারে যে ভূমিকাটা পালন করা উচিত ছিল সেটা দেখাতে পারেননি মার্শ।

  • সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ): অধিনায়ক

এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আসরের কথা হয়তো ভুলেই যেতে চাইবেন সাকিব। কারণ পুরো টুর্নামেন্ট জুড়েই ব্যাট হাতে রান পাননি তিনি। ৫ ম্যাচে করেছেন মাত্র ৪৪ রান। নেই কোনো ত্রিশোর্ধ্ব ইনিংস। বল হাতেও তেমন ব্যাটারদের বিপক্ষে আগ্রাসন দেখাতে পারেননি।

যদিও ছয়টি উইকেট নিয়েছেন, কিন্তু ইকোনমি রেট ছিল প্রায় ৯ এর কাছাকাছি। ব্যাটি, বোলিং, অধিনায়কত্ব- সব মিলিয়ে সাকিব ঠিক বাংলাদেশকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে পারেননি। বাংলাদেশও তাই বলার মত কিছু করে দেখাতে পারেনি। পুরো আসরে নেদারল্যান্ডস আর জিম্বাবুয়েকে হারানোই কিছুটা সুখস্মৃতি হিসেবে যোগ করেছে।

  • ক্রেইগ আরভিন (জিম্বাবুয়ে)

সাকিবের মতোই জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিন পুরো আসর জুড়ে ব্যাট হাতে ছিলেন ব্যর্থ। এ বারের আসরে ৭ ম্যাচে করেছেন ১১২ রান। তবে, সবচেয়ে বিব্রতকর রেকর্ডের সঙ্গী হয়েছেন স্ট্রাইকরেট দিয়ে। এবারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে কম ৮৯.৬০ স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করেছেন এই ক্রেইগ আরভিন।

  • অক্ষর প্যাটেল (ভারত) 

রবীন্দ্র জাদেজার ইনজুরিতে তাঁর পরিবর্তে  দলে নেওয়া হয়েছিল অক্ষর প্যাটেলকে। কিন্তু তাঁর সামান্য ছিটেফোঁটাও ছিল না অক্ষর প্যাটেলের ব্যাটিংয়ে কিংবা বোলিংয়ে। ব্যাট হতে যদিও সুযোগ পেয়েছেন কম। তিন ইনিংসে করেছেন ৯ রান। আর বল হাতে পুরো আসর জুড়ে নিয়েছেন মাত্র ৩ টি উইকেট।

  • নুরুল হাসান সোহান (বাংলাদেশ)

বিশ্বকাপ শুরুর আগেও দারুণ ছন্দে ছিলেন নুরুল হাসান সোহান। সেই ফর্ম আর ভবিষ্যত বিবেচনায় তাঁকে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দলে সহ অধিনায়কের দায়িত্বও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিশ্বকাপে ঠিক প্রত্যাশা মেটাতে পারেননি তিনি।

রান করতে পারেননি, সাথে উইকেটের পেছনে ক্যাচও ফেলেছেন। পুরো টুর্নামেন্টে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে মাত্র ৪১ রান। এর মধ্যে তিন বারই তিনি সিঙ্গেল ডিজিটে আউট হয়েছেন। পুরো আসরে তাই মোটা দাগেই ব্যর্থ নুরুল হাসান।

  • রবিচন্দন অশ্বিন (ভারত)

অস্ট্রেলিয়ায় অতীত ফর্ম আর অভিজ্ঞতা বিবেচনায় দলে নেওয়া হয়েছিল আশ্বিনকে। কিন্তু দলের প্রয়োজন, প্রত্যাশা কোনাটাই ঠিক মত মেটাতে পারেননি তিনি। টুর্নামেন্টে ৬ ম্যাচে ৬ উইকেট নিয়েছেন। তবে দুর্বল প্রতিপক্ষ বাদে বড় ম্যাচের কোনোটিতেই তিনি পারফর্ম করতে পারেননি।

  • জশ হ্যাজলউড (অস্ট্রেলিয়া) 

অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম সেরা পেসার বলেই বিবেচনা করা হয় হ্যাজলউডকে। কিন্তু এবারের বিশ্বকাপে এসে নিজের সেরাটা দেখাতে পারেননি হ্যাজলউড। পুরো টুর্নামেন্ট মিলিয়ে ৫ উইকেট পেয়েছেন। কিন্তু ওভার প্রতি রান আটকাতে তিনি ব্যর্থ ছিলেন। এ বারের আসরে তিনি ওভার প্রতি রান দিয়েছেন ৮.২৬। অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশন হিসেবে যা কিছুটা বেশিই।

  • মিশেল স্টার্ক (অস্ট্রেলিয়া) 

হ্যাজলউডের মত এবারের বিশ্বকাপে বল হাতে তেমন আগ্রাসন দেখাতে পারেননি স্টার্কও। পুরো টুর্নামেন্টে বল হাতে নিয়েছেন মাত্র ৩ উইকেট । আর ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন ৮.৫ করে।

এমনিতে আইসিসির টুর্নামেন্টে বরাবরই সফল ছিলেন স্টার্ক। ২০১৫ এবং ২০১৯, দুই বিশ্বকাপেই ছিলেন সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী বোলার। কিন্তু এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেটি দেখাতে পারেননি তিনি।

  • কাগিসো রাবাদা (দক্ষিণ আফ্রিকা)

বিশ্বকাপ শুরুর আগে তাঁকেই প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের জন্য মহাত্রাস মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু বিশ্বকাপে এসে সেটি তো হয়নি, বরং প্রচুর খরুচে বোলিং করেছেন। পুরো টুর্নামেন্ট মিলিয়ে নিয়েছেন মাত্র দুটি উইকেট। আর ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন ৯.৪৩ করে।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link