নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশের ফুটবলের জনপ্রিয়তা ছিল আকাশচুম্বী। তবে ফুটবল নিজেদের সেই জৌলুস হারিয়েছে। ওদিকে ক্রিকেট নিয়ে দেশের মানুষের আগ্রহটাই এখন বেশি। বিভিন্ন সময় ক্রিকেটে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সাফল্যও পেয়েছে। তবে জাতীয় দলের সাফল্যে একটা কথা আড়ালেই থেকে যায়। একটা সময় ঢাকার ক্রিকেটেও বসতো তারার মেলা। তবে ঢাকা লিগে সেগুলো এখন শুধুই সোনালি অতীত।
আশির দশক কিংবা নব্বই এই ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে একটা সময় বসতো তারার মেলা। সেই সময় বিশ্বের সেরা ক্রিকেটাররা ঢাকায় আসতেন এই লিগ খেলতে। ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনুস, সনাথ জয়সুরিয়া কিংবা অর্জুনা রানাতুঙ্গার মত বিশ্বকাপানো তারকারাও এসেছেন এই লিগ খেলতে।
তবে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের এই সময়ে সেরা ক্রিকেটারদের আসার সম্ভাবনা কমে এসেছে। তবুও দেশের একমাত্র লিস্ট এ টুর্নামেন্টের জন্য দলগুলো তাঁদের সেরা চেষ্টাটাই করছে। গতবছর ডিপিএল হয়েছিল টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। যেন জাতীয় দলের আশেপাশের ক্রিকেটাররা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুতি নিতে পারে।
তবে এবার আবার ডিপিএল ফিরেছে চেনা ফরম্যাটে। দলগুলোও তাঁদের সাধ্যমত বিদেশি ক্রিকেটার আনার চেষ্টা চালিয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি সাত জন ভারতীয় ক্রিকেটার আসছে এই লিগ খেলতে। তবে এই আসরে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় সাইনিংটি করেছে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। পাকিস্তানের অলরাউন্ডার মোহাম্মদ হাফিজকে দলে ভিড়িয়েছে মোহামেডান।
ডিপিএল খেলতে ইতোমধ্যে ঢাকায় চলে এসেছেন মোহাম্মদ হাফিজ। আর ঢাকা লিগ নিয়েও বেশ উচ্ছস্বিত পাকিস্তানের এই তারকা ক্রিকেটার। ঢাকায় এসে সাংবাদিকদের সাথে এক আড্ডায় তিনি বলেন, ‘প্রথমবার আমি ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ খেলতে এসেছি। আমি যতবার বাংলাদেশে এসেছি, শুনেছি ঢাকা লিগের প্রতিদ্বন্দ্বীতার কথা। মোহামেডান ঐতিহাসিক দল। এখানের মানুষ ক্রিকেটের প্রতি আবেগপ্রবণ। ভক্ত, সমর্থকরাও পাগল। তারা প্রত্যেকবার এই দলকে জিততে দেখতে চায়। আমি সত্যিই ঢাকা লিগ উপভোগ করতে চাই।’
ওদিকে শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব নিয়ে এসেছে জিম্বাবুয়ের অলরাউন্ডার সিকান্দার রাজাকে। ঢাকা লিগের নতুন দল সিটি ক্লাব। তাঁরাও নিয়ে আসছে আরেক পাকিস্তানি ক্রিকেটারকে। তাঁদের হয়ে খেলবেন খালিদ পারভেজ। ওদিকে শুধু ব্রাদার্স ইউনিয়ন ও রূপগঞ্জ টাইগার্সই এখনো কোন বিদেশি ক্রিকেটার দলে ভিড়ায়নি।
ওদিকে আরেকটি বড় সাইনিং করেছে ডিপিএলের অন্যতম শক্তিশালী দল আবাহনী লিমিটেড। বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা বিদেশি ক্রিকেটারের জায়গায় দলে এনেছে ভারতের টেস্ট ক্রিকেটার হনুমা বিহারিকে। ভারতের হয়ে মোট ১৫ টি টেস্ট খেলেছেন এই ব্যাটার। সেখানে ৩৫.১৩ গড়ে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ৮০৮ রান। ভারতের হয়ে একটি সেঞ্চুরি ও পাঁচটি হাফ সেঞ্চুরিও এসেছে তাঁর ব্যাট থেকে।
যদিও আবাহনীর হয়ে প্রথম তিন ম্যাচ খেলবেন না হনুমা বিহারি। এই তিন ম্যাচের জন্য অবশ্য আফগানিস্তানের মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান নাজিবুল্লাজ জাদরানকে নিয়ে এসেছে আবাহনী। এছাড়া ভারতের বেঙ্গল দলের অধিনায়ক অভিমন্যু ইশ্বরন খেলবেন প্রাইম ব্যাংকের হয়ে।
এছাড়া ভারতের আরো পাঁচ ক্রিকেটার আসছে এবারের ডিপিএল মাতাতে। যদিও তাঁদের কেউই এবারের আইপিএল নিলামে কোন দল পায়নি। পারভেজ রসূল খেলবেন ধানমন্ডি ক্লাবের হয়ে। লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জের বিদেশি ক্রিকেটার হিসেবে আসছেন চেরাগ সূরি। গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের হয়ে খেলবেন বাবা অপরাজিত।
ওদিকে করোনা মহামারির আগে দীনেশ কার্তিক, মনোজ তিওয়ারি, ইউসুফ পাঠানদের মত ক্রিকেটাররাও খেলে গিয়েছেন ঢাকা লিগে। করোনার পর আবারো বিদেশি ক্রিকেটারদের আনাগোনা শুরু হচ্ছে ঢাকা লিগে। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের এই সময়েও আবার ঢাকা লিগে বসুক তারার মেলা।