চেলসির জন্য সদ্য শেষ হওয়া মৌসুমটা শুরু হয়েছিল খুব বাজে ভাবে।
সবেধন নীলমণি ইডেন হ্যাজার্ড রিয়ালে চলে গেলেন। আলভারো মোরাতা আর ডেভিড লুইজকেও বিক্রি করে দেওয়া হলো। তার মধ্যে মাথার উপরে দলবদলের নিষেধাজ্ঞা। নতুন কোনো সাইনিং নেই, মরার উপর খাড়ার ঘাঁ যাকে বলে, আর কী!
উয়েফা ইউরোপা লিগ জিতিয়ে মাউরিজিও সারিও বিদায় জানালেন। কী একটা অবস্থা হয়েছিলো তখন! প্রথম ছয় দলের মধ্যে থাকাটাও তখন রীতিমত স্বপ্নের এক ব্যাপার ছিল ব্লুজদের জন্য।
চেলসি তখন উদ্দেশ্যহীন, গন্তব্যহীন। কোচ করে আনা হল তখন ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ড, চেলসিরই সাবেক কিংবদন্তি। খেলোয়াড় হিসেবে তিনি যাই ছিলেন না কেন, কোচ হিসেবে তাঁকে আনা ছিল বিশাল এক ঝুঁকি। কারণ, এর আগে তিনি মাত্র একটা বছর কোচিং করিয়েছেন। সেটাও আবার ডার্বি কাউন্টি দলের। শীর্ষ পর্যায়ে কোচিংয়ের অভিজ্ঞতা তাঁর ছিল না বললেই চলে।
তবে, চেলসির ম্যানেজমেন্ট তাঁর ওপর আস্থা রেখেছিল। তাও কী ভয়াবহ এক দু:সময়ে! দলবদলের নিষেধাজ্ঞা, তার উপর এমন ‘ভাঙাচোরা’ স্কোয়াড, রীতিমতো ল্যাম্পার্ডের হাত পা বেধে চেলসি সামলানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলো। তার কোচিং ক্যারিয়ারের জন্য বিষয়টা ছিলো খুব ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু মানুষটা পিছু হটে নি।
শুরু থেকেই একের পর এক প্রতিবন্ধকতায় পড়েছেন। ক্যালাম হুডসন, অ্যান্টনিও রুডিগার, রিকি জেমস, আন্দ্রেস ক্রিস্ট্রিয়ানসেন, পালমিয়েরি এমারসনদের একের পর এক ইনজুপি বারবার ল্যাম্পার্ডকে ব্যাকফুটে ঠেলে দিচ্ছিলো। কিন্তু, তিনি যে হাল ছাড়তে জানেন না!
লোকটা তখন একটা ‘অভিনব’ উপায় খুঁকে বের করলেন। সাহায্য নিলেন নিজেদের অ্যাকাডেমির। অ্যাকাডেমি থেকে কিছু প্রতিভাবান কিশোর-তরুণ তুলে আনলেন। তারপরও দলটা শেষ অবধি মধ্যম মানেরই ছিল। এই দলে অনায়াসে ল্যাম্পার্ড নিজেও খেলে ফেলতে পারেন।
তবে, ল্যাম্পার্ড আস্থা রেখেছিলেন, যেমনটা তাঁর ওপর রেখেছিল চেলসির ম্যানেজমেন্ট। সেই আস্থার প্রতিদান পাওয়া গেল। সাদামাটা সেই দলটাই ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের সেরা চারে থেকে শেষ করলো মৌসুম। লিগের অন্য দলগুলো যেখানে, পানির মত খরচ করে খেলোয়াড় কিনেছে, সেখানে দলবদলের বাজারে চেলসি কোনো খরচ করারই সুযোগ পায়নি। অথচ, তাঁরাও নাম লিখিয়েছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে।
এই স্কোয়াড নিয়ে এমন অর্জনটা সত্যিই বিশাল ব্যাপার। বলা হচ্ছে, এটা তরুণ চেলসির নতুন সূর্যোদয়। ল্যাম্পার্ডের হাত ধরে আসলো এই নব সূচনা। এবার কেবল এর ধারাবাহিকতা ধরে রাখার পালা।