পরিশ্রম, পারফরম্যান্স কিংবা চ্যাম্পিয়ন মানসিকতায় তাসকিন আহমেদ যেন ক্রমেই নিজেকে নিয়ে যাচ্ছেন অনন্য উচ্চতায়। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের পেস বোলিং ইউনিটের অন্যতম সেনানী হচ্ছেন তিনি। অথচ, এক বিশ্বকাপ আগেও এ পেসারের পায়ের তলার মাটি শক্ত ছিল না। সর্বশেষ বিশ্বকাপে সুযোগ না পেয়ে শেষ পর্যন্ত কান্না লুকাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন তিনি।
তার আগে ২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চলাকালীন অবৈধ বোলিং অ্যাকশনের কারণে হয়েছিলেন নিষিদ্ধ। বোলিং অ্যাকশন শুধরে অবশ্য পরে ফিরেও এসেছিলেন তাসকিন। তবে ফেরার পরের পথ অতটা সুমসৃণ ছিল না তাঁর জন্য। অনেক ঘাত প্রতিঘাত, প্রতিকূলতা সামলে নিজেকে এগিয়ে যেতে হয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকেই আলো ছড়িয়ে লাইমলাইটে আসা তাসকিন তাই বেশ কিছুদিন পরেই বাংলাদেশ ক্রিকেটের সূর্য হয়ে উঠেছেন।
প্রায় এক দশকের ক্যারিয়ারের পথচলায় ধারাবাহিক সাফল্যের দেখা পেয়েছেন শেষ দুই তিন বছরে। আর সেই সাফল্যের নিশানা পেতে যে তাঁকে অনেক কাঠখড় পুড়াতে হয়েছে, সেই কথাই ক্রিকেট গণমাধ্যম ক্রিকবাজকে জানিয়েছেন তাসকিন। একান্ত এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন ক্যারিয়ারে নানান উত্থান পতনের গল্প।
বিশ্বকাপের সময় বিশ্বকাপ নিয়েই তিক্ত এক স্মৃতি দিয়ে শুরু করেন তাসকিন। তিনি বলেন, ‘বিশ্বকাপ আলাদা ব্যাপার। এটা প্রত্যেক ক্রিকেটারের জন্য একটা স্বপ্ন। আমি ২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ব্যান হয়েছিলাম। সে সময়টা যে কতটা বাজে সময়ের মধ্যে গিয়েছি, তা কোনো ভাবেই এখন বলে বুঝানো সম্ভব না। তবে সে সময়টা পেরিয়ে গেছে বহু আগে। তাই এখন আর মনে রেখে লাভ। এখন শুধু সামনে এগিয়ে যাওয়ার পালা।’
২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ঐ তিক্ত স্মৃতির পর ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা তাসকিন পেয়েছিলেন ২০১৯ বিশ্বকাপের সময়। তবে তাসকিন জানিয়েছেন, ঐ বাদ পড়াটাই তাঁকে ফিরে আসার রসদ জুগিয়েছিল। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ঐ বাদ পড়াটা আমার জীবনের জন্য বড় এক শিক্ষা ছিল। আমি বাদ পড়লাম। খুব মন খারাপ হয়েছিল সেদিন। তবে কেন জানি, ঐ বাদ পড়াটাই আমাকে ফিরে আসতে সাহায্য করেছে। আমাকে আরো পরিণত করে তুলেছে।’
২০১৯ বিশ্বকাপে বাদ পড়ার পর তাসকিনের গল্পটা ছিল প্রত্যাবর্তনের। তাসকিন ফিরলেন। ক্রমেই নিজেকে রাঙাতে শুরু করলেন। এরপর ২০২৩ বিশ্বকাপ আসতে আসতে হয়ে উঠলেন পেস বোলিং লাইন আপের কাণ্ডারি। তাসকিনের এমন ধারাবাহিক সাফল্যের রহস্য কি? তাসকিন জানিয়েছেন, মূলত জীবনে শৃঙ্খলা আনলেই সব কিছু আয়ত্ত্ব করা সম্ভব।
এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘দেখুন, সব কিছু শৃঙ্খলার মধ্যে তার একটা ফল আপনি নিশ্চিত পাবেন। আমি আমার মানসিকতা নিয়ে কাজ করেছিল। এই মুহূর্তে আমি একজন দৃঢ় মানসিকতার মানুষ। তাছাড়া পরিশ্রম করেছি প্রচুর। একই সাথে ঠিকঠাক বিশ্রামও নিয়েছি। আমি আমার ট্রেইনারের সাথে কথা বলেছিল। মূলত সব কিছু আমি একটা নিয়মের মাঝে থেকে করেছি। পেসাররা কখন খাবে, কী খাবে, কতটুকু খাবে, এগুলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ। যে দিন থেকে আমি এ ব্যাপার গুলো নিয়ে নিজের লাইফস্টাইলে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেছি, সে দিন থেকেই ফল পেতে শুরু করেছি। তবে অবশ্যই ধৈর্য্য থাকতে হবে এ প্রক্রিয়ায়।’
এবারের বিশ্বকাপে অবশ্য গড়পড়তাই শুরু করেছেন তাসকিন। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৩২ রান খরচায় একটি উইকেট নিয়েছেন তিনি। তবে পরের ম্যাচগুলোতে নিজেকে প্রমাণ করার দিকেই চোখ থাকছে এ পেসারের। ২০১৫ সালে শেষবার যখন ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলেছিলেন, তখন বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেট পেয়েছিলেন তাসকিন। এবারও নিশ্চয় সেই সুখস্মৃতির পুনরাবৃত্তি ঘটাতে চাইবেন এ পেসার।