স্বপ্ন থেকে দু:স্বপ্ন

২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, ম্যাথু হেইডেনের স্টাম্প উপড়ে ফেলা সেই দুর্দান্ত ডেলিভারি, ২০০৬ সালে ডারবানে জ্যাক ক্যালিসের মাথায় আঘাত করা সেই বাউন্সার, জোহানেসবার্গে আন্দ্রে নেলকে স্লেজিংয়ের জবাবে ডাউন দ্য উইকেটে এসে সেই অসাধারণ ছক্কা – সব কিছুই যেন মনে করিয়ে দেয় ভারতীয় পেসার শান্তাকুমারান শ্রীশান্তকে। কিন্তু সব ছাপিয়ে ফিক্সিং কাণ্ডে ক্যারিয়ার খুইয়ে বসেন এই পেসার। বিতর্কে ঘেরা ক্যারিয়ারে অবসরের ইতির রেখা টেনেছেন ভারতীয় পেসার শ্রীশান্ত।

২০১৩ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) স্পট ফিক্সিং কাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে দেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই) থেকে আজীবন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয় শ্রীশান্তকে। অবশ্য শুধু নিষেধাজ্ঞাতেই শেষ হয়নি শ্রীশান্তের শাস্তি! দিল্লীর তিহার জেলখানায় ছিলেন ২৭ দিন। পরবর্তীতে দোষ স্বীকার করে নিজের ভুলের জন্য ক্ষমাও চান বাইশ গজ থেকে সিনেমার দুনিয়ায় পা রাখা এই ক্রিকেটার।

নিষেধাজ্ঞার পর রিয়েলিটি শোতে অংশ নেওয়া থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলেও মনোনিবেশ করেন তিনি। তবে ভালোবাসার ক্রিকেটে পুনরায় ফিরতে সর্বোচ্চ চেষ্টাই তিনি করছিলেন। ২০১৯ সালে সর্বোচ্চ আদালত থেকে বিসিসিআইকে শ্রীশান্তের শাস্তির ব্যাপারে পুনর্বিবেচনা করতে বলা হয় এবং জানানো হয় আজীবন নিষেধাজ্ঞার শাস্তিটি তুলে নিতে। এর পাঁচ মাস বাদেই শ্রীশান্তের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় বিসিসিআই।

সাত মাস নিষেধাজ্ঞার পরই আদালতের রায়ে পুনরায় ক্রিকেটে ফেরার সুযোগ আসে শ্রীশান্তের সামনে। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ক্রিকেটে ফিরতে পারবে বলেও শ্রীশান্তকে জানানো হয়। লম্বা সময় পর পুনরায় ক্রিকেটে ফেরার খবরে বেশ উচ্ছ্বসিত ছিলেন এই পেসার।

এরপর ৩৭ বছর বয়সে নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে কেরালার হয়ে সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফিতে ফেরেন শ্রীশান্ত। একই সাথে বিজয় হাজারের  ট্রফিতেও খেলার সুযোগ পান তিনি। সর্বশেষ রঞ্জি ট্রফিতে মেঘালয়ার বিপক্ষে দুই উইকেট শিকারের পরই তিনি সিদ্ধান্ত নেন ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর।

অবশ্য এক বছর আগেও রঞ্জি ট্রফির প্রাথমিক দলে ডাক পাবার পর ২০২৩ বিশ্বকাপে খেলার কথা জানিয়ে রীতিমতো হৈ চৈ ফেলে দেন তিনি! ২০২৩ বিশ্বকাপের সময় শ্রীশান্তের বয়স হবার কথা ৩৯। জাতীয় দলে বাইরে ছিলেন লম্বা সময়, ঘরোয়া ক্রিকেটেও তখন নিয়মিত হতে পারেননি তিনি। আর এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বকাপে খেলার কথা বলে যেন দু:স্বপ্নই দেখে ফেলেছিলেন তিনি।

নিষেধাজ্ঞা থেকে ফিরে জাতীয় দলের আশেপাশেও ভীড়তে পারেননি শ্রীশান্ত। সর্বশেষ  জাতীয় দলের হয়ে খেলেছিলেন ২০১১ সালে ইংল্যান্ড সফরে। টিনু ইয়োহানানের পর তিনি কেরালার দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে জাতীয় দলে খেলেন। ২০০৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে এক টেস্টে ৮ উইকেট শিকার করে প্রথমবার দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ভারতকে টেস্ট জেতান শ্রীশান্ত। ভারতের দুই বিশ্বকাপ জয়েও অবদান রাখেন এই পেসার। ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর ২০১১ বিশ্বকাপেও ছিলেন দলের সাথে।

২৭ টেস্টে নিয়েছেন ৮৭ উইকেট, ৩ বার শিকার করেছেন ৫ উইকেট। ৫৩ ওয়ানডেতে ৬.০৮ ইকোনমিতে আছে ৭৫ উইকেট। এছাড়া ১০ টি-টোয়েন্টিতে ৮.৪৭ ইকোনমিতে নিয়েছেন ৭ উইকেট।

ফিক্সিং কান্ডে ক্যারিয়ার থমকে না গেলে ভারতকে সার্ভিস দিতে পারতেন লম্বা সময়। যে গতি দিয়ে এসেছিলেন জাতীয় দলের মঞ্চে সেই গতিতেই শ্রীশান্ত যেন হারিয়ে গেছেন সময়ের ব্যবধানে, কিংবা কলঙ্কে ডুবে! ২০২৩ বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্ন যে দু:স্বপ্ন ছিল সেটির প্রমাণ শ্রীশান্তের এমন প্রস্থান!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link