বিশ্বকাপ এলেই তাঁর ঘুম ভাঙে

গিলের্মো ওচোয়ার মধ্যে একটা অদৃশ্য সুইচ। যার বাটনটায় চার বছর একবার চাপ দেওয়া হয়। আর যেন বলা হয়, ‘বিশ্বকাপ শুরু হয়ে গেছে।’ ব্যাস, ওচোয়ার বিশ্বকাপ মোড অ্যাক্টিভেট হয়ে যায়।

তিনি গোলরক্ষক। খুব আহামরি কিছু বলার সুযোগ নেই তাঁকে ঘিরে। বড় কোনো ক্লাবে খেলেন না। ওই টুকটাক স্প্যানিশ ক্লাবে খেলা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ তাঁর যাত্রা।

তবে, গিলের্মো ওচোয়ার মধ্যে একটা অদৃশ্য সুইচ। যার বাটনটায় চার বছর একবার চাপ দেওয়া হয়। আর যেন বলা হয়, ‘বিশ্বকাপ শুরু হয়ে গেছে।’ ব্যাস, ওচোয়ার বিশ্বকাপ মোড অ্যাক্টিভেট হয়ে যায়।

আর তাঁর মধ্যে যেন স্বয়ং লেভ ইয়াসিনের আত্মা এসে ভর করে। বিশ্বের নামকরা সব ফরোয়ার্ডদের তিনি আটকে দেন, চোখের পলকে। বনে যান অতিমানব, শুধুই বিশ্বকাপের মঞ্চে।

এবারের বিশ্বকাপে মাত্র চারজন এমন খেলোয়াড় আছেন যারা খেলছেন নিজেদের টানা পঞ্চম বিশ্বকাপ। লিওনেল মেসি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, আন্দ্রেস গুয়ার্দাদো’র সাথে সেখানে আরেকজন হলেন গিলের্মো ওচোয়া।

২০০৬ আর ২০১০ বিশ্বকাপে অবশ্য দলে থকেও মাঠে নামা হয়নি তাঁর। তবে, ২০১৪ সাল থেকে তিনি দলের এক নম্বর গোলরক্ষক। সেবার গ্রুপ পর্বে ব্রাজিলের সাথে ড্র করে মেক্সিকো। চারটা জোড়ালো শট ফিরিয়ে দেন তিনি। এর মধ্যে নেইমারকে একদম নিশ্চিত একটা গোল বঞ্চিত করেন।

তখন তাঁর সাথে ইংল্যান্ডে গর্ডন ব্যাংকসের তুলনাও হয়। ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপে ব্যাংকস নাকি এভাবেই হতাশ করেছিলেন স্বয়ং পেলেকে। ওচোয়া সেদিন বলেছিলেন, ‘এটা আমার জীবনের সেরা ম্যাচ। বিশ্বকাপে এত দর্শকের সামনে এটা করতে পারাটা সত্যিই দারুণ ব্যাপার।’

ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে মেক্সিকো খেলে শেষ ষোলতে। সেখানে ২-১ গোলে হারে নেদারল্যান্ডসের কাছে। হারলেও ব্রাজিলের বিপক্ষে ম্যাচের পর এবারও ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হন ওচোয়া।

এরপর ২০১৮ সালের বিশ্বকাপটা তাঁর জন্য ছিল বিরাট স্মরণীয়। রাশিয়া বিশ্বকাপে এই ওচোয়া জার্মানির বিপক্ষে দুর্দান্ত সব সেভ করেছিলেন। সব মিলিয়ে সেই ম্যাচে সেভ ছিল মোট নয়টা। এর মধ্যে টনি ক্রুসের ফ্রি-কিক ফিরিয়ে দেওয়াটা ছিল সবচেয়ে অনবদ্য। ম্যাচটায় মেক্সিকো ১-০ গোলে জেতে।

রাশিয়ায় চার ম্যাচ খেলে ২৫ টা সেভ করেন ওচোয়া। ওই বিশ্বকাপে গোলরক্ষকদের মধ্যে তাঁর চেয়ে বেশি সেভ করেন কেবল বেলজিয়ামের থিবো কোর্তোয়া। কোর্তোয়া ২৭ টা সেভ অবশ্য করেন সাতটা ম্যাচ খেলে।

হারলেও দ্বিতীয় রাউন্ডে ব্রাজিলকে বেশ পরীক্ষার মুখে ফেলেছিলেন। এরপর ইউরোপ তাঁর ব্যাপারে আরও আগ্রহী হয়। বেশ কয়েক বছর ফরাসী ও স্প্যানিশ ক্লাবে খেলেন তিনি, বেলজিয়ামেও ছিলেন। তবে, সেই সময়টা ছিল দু:স্বপ্ন। কোথাও যেন থিতু হতে পারছিলেন না তিনি। আবারও মেক্সিকান ক্লাব আমেরিকাতেই ফিরে আসেন তিনি।

এরপর আরেকটা বিশ্বকাপ আসল। ৩৭ বছর বয়সী ওচোয়া আবারও দলের এক নম্বর গোলরক্ষক। কিন্তু, এই বয়সে কি আর বাজপাখি হওয়া সম্ভব? ওই যে, ভেতরের সুইচ বাটনটায় চাপ দিয়ে রেখেছিলেন।

প্রথম ম্যাচেই চূড়ান্ত পরীক্ষা। সামনে বিশ্বসেরা স্ট্রাইকার রবার্ট লেওয়ানডসস্কি। মেক্সিকোর ডিফেন্ডার হেক্টর মোরেনো এই পোলিশকে বক্সের মধ্যে ফেলে দিলে ভিডিও রেফারেল দেখে পেনাল্টি নির্দেশ দেন রেফারি। কিন্তু, বাঁধা হয়ে দাঁড়ান সেই ওচোয়া। শরীর বাঁদিকে ছুঁড়ে দিয়ে নিখুঁত অনুমান ক্ষমতায় বল আটকে দেন।

বুঝিয়ে দিলেন ক্যারিয়ারের শেষ লগ্নে পঞ্চম বিশ্বকাপেও তিনি মেক্সিকোর প্রাচীর হয়ে উঠতে পারেন। কারণ, হাজার হোক এটা বিশ্বকাপ। আর বিশ্বকাপ আসলেই তো ওচোয়ার মধ্যে লেভ ইয়াসিন ভর করে!

 

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...