হার্দিক ‘মোস্ট ভ্যালুয়েবল’ পান্ডিয়া

২০১৮ সালের এশিয়া কাপের আসরে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচটির কথা মনে আছে? সেই একই দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের মাঠ। বল হাতে হার্দিক পান্ডিয়া হুট করেই প্রবল যন্ত্রনায় মাঠে শুয়ে পড়লেন। একেবারে স্ট্রেচারে শুয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল তাঁকে। পড়েছিলেন বাজে এক ইনজুরিতে। পিঠের ভয়ানক চোটের পর অস্ত্রোপচার করাতে হলো। ক্যারিয়ারে শঙ্কার মেঘ জমলেও, ঠিকিই ফিরেছিলেন পান্ডিয়া। তবে ফিরে এসে অনেকগুলো দিন কেবল ব্যাট হাতেই সন্তুষ্ঠ থাকতে হয়েছিল পান্ডিয়াকে। কারণ বোলিং করার মতো ফিট ছিলেন না।

কিন্তু সমালোচনা তো আর থামিয়ে রাখা যায় না। এইতো গতবছর দুবাইতে টি- টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই ভারত- পাকিস্তান ম্যাচে কেবল ব্যাটার হার্দিক পান্ডিয়ার দলে থাকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। এর ঠিক দশমাস পরেই যোগ্য জবাবটা দিলেন হার্ডিক পান্ডিয়া। পুনরায় বল হাতে তুলে নিয়েছিলেন এই বছরের জুন থেকেই।

বছর চারেক আগে স্ট্রেচারে করে যে মাঠ ছেড়েছিলেন, ফিরে এসে চার বছর বাদে সেই একই মাঠে একই মঞ্চেই আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছেন। ফিরলেন তো ফিরলেন, এক্কেবারে অলরাউন্ডারের ভূমিকায়। ২০২২ সালের এশিয়া কাপের ভারত- পাকিস্তান ম্যাচ দিয়েই পান্ডিয়া প্রমাণ করে দিলেন কেন তাকে এককালে নেক্সট কপিল দেব বলা হতো। প্রত্যাবর্তিত এই হার্দিক পান্ডিয়ার নতুন ধরণটি বেশ দৃঢ়। কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও মাথা ঠাণ্ডা রাখতে শিখে গিয়েছেন। এমনকি মাঠে ঘাবড়ে যাওয়া সতীর্থকে ভরসা দিতেও শিখে গিয়েছেন। হার্দিকের রূপান্তরটা এখন বেশ পরিণত।

এমনিতেই একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডার যে কোনো দলের সম্পদ। আর টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের জন্য তা সোনায় সোহাগা। হার্দিকের ক্রিকেট নৈপূণ্য এই মুহূর্তে ব্যাটে বলে দারুণ এক মেলবন্ধনে গড়া। অভিজ্ঞতা, স্কিল, পরিপক্বতা, লিডারশিপ সবমিলিয়ে এ এক নতুন হার্দিক। একেবারে ‘কমপ্লিট ক্রিকেটার’ যাকে বলে আর কি। গেল আইপিএলে অধিনায়ক হিসাবে গুজরাট টাইটান্সকে শিরোপা জিতিয়েছেন। ফিরে এসেই দলে আবার নিজের জায়গাটা পাকাপোক্ত করে নিয়েছেন।

ভারত-পাকিস্তানের হাই ভোল্টেজ ম্যাচে অটল আত্মবিশ্বাসী হার্দিক পান্ডিয়ার হাত ধরেই জয়ের দেখা পায় ‘টিম ইন্ডিয়া’। ১৭ বলে ৩৩ রান করে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়লেন হার্দিক পান্ডিয়া। শেষ বলে মেরেছেন দারুণ এক ছক্কা। ম্যাচসেরা খেলোয়াড়ও তিনিই। চার ওভার বল করে মাত্র ২৫ রান দিয়ে নিয়েছেন তিনটি মূল্যবান উইকেট। তাঁর মধ্যে ওপেনার মোহাম্মদ রিজওয়ান ও মিডল অর্ডার ব্যাটার ইফতেখার আহমেদের মতো দুইটি গুরত্বপূর্ণ উইকেট শিকার করেছেন।

ইন্ডিয়া ও পাকিস্তানের মধ্যকার টি- টোয়েন্টি ইতিহাসে হার্দিকের অবস্থান এখন তিন নম্বরে। চার ম্যাচের মধ্যে তিন ম্যাচে বোলিং এর সুযোগ পেয়েই নিয়েছেন সাতটি উইকেট। চলতি বছরের নয় জুলাই থেকে এই অব্দি পান্ডিয়া চৌদ্দটি টি- টোয়েন্টি ম্যাচ ও তিনটি ওয়ানডে খেলেছেন। চৌদ্দ টি- টুয়েন্টি ম্যাচে ৩৪.৮৮ গড়ে করেছেন মোট ৩১৪ রান ও শিকার করেছেন এগারোটি উইকেট। আর ওয়ানডে ফরম্যাটে করেছেন ১০০টি রান ও নিয়েছেন ছয়টি উইকেট।

অনেক ক্রিকেট বোদ্ধার মতে ভারতের ভবিষ্যৎ অধিনায়কত্বের যোগ্য দাবিদার হার্দিক পান্ডিয়া। এশিয়া কাপের পরে এই বছর অক্টোবরেই শুরু হতে যাচ্ছে টি- টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। এদিকে দিনে দিনে হার্দিক পান্ডিয়া হয়ে উঠছেন টি- টোয়েন্টি স্পেশালিষ্ট। তাছাড়া নেতৃত্ব দানেও যে তিনি একশো তে একশো, গেল আইপিএলেই তাঁর ঝলক দেখিয়েছেন। টি- টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অধিনায়কত্বের দায়িত্বটা সম্ভবত তাঁর কাঁধেই বর্তাতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। তবে অধিনায়কত্ব হোক কিংবা মাঠের পারফরম্যান্স – দলে পান্ডিয়ার উপস্থিতিই যথেষ্ট আসন্ন আসরে মেন ইন ব্লু-দের আত্মবিশ্বাসকে তুঙ্গে রাখতে। অন্যকথায় বিপক্ষ দলের শিবিরে ভয়ের অন্য নাম হতে যাচ্ছেন হার্দিক পান্ডিয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link