হাসান আলী – তাঁর মধ্যে নেই শাহিনশাহ আফ্রিদি বা কাগিসো রাবাদার মত অ্যাথলেটিক মনোভাব। এনরিখ নর্টজের মতো পেস। তিনি অনেক লম্বা নয় বা প্রচুর দ্রুত বোলিং করতে পারেন না। ওয়াকার ইউনুস বা ওয়াসিম আকরামের মত বলে দূর্দান্ত কোনো স্যুইং নেই। আবার শোয়েব আক্তারের মত বাউন্স নেই। তারপরও তিনি বিস্ফোরক বোলিং করেন। আর তিনি সেটা ভালো মতই জানেন।
রাওয়ালপিন্ডি টেস্ট দোদুল্যমান অবস্থায় ছিলো। সেখানে ১০ উইকেট নিয়ে পাকিস্থানের জয় নিশ্চিত করেন। আর এর ফলে পাকিস্থান দীর্ঘ বিরতির পর দেশের মাটিতে টেস্ট সিরিজ জয় নিশ্চিত করে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে রাওয়ালপিন্ডিতে টেস্ট জিততে পঞ্চম দিনে মাঠে নামে পাকিস্থান।
প্রোটিয়া ব্যাটসম্যান এইডেন মার্করাম নিজের ক্যারিয়ারের পঞ্চম টেস্ট সেঞ্চুরি করেন। সেঞ্চুরি করার সময় টেম্বা বাভুমার সাথে গড়ে তোলেন ১০৫ রানের জুটি। এই জুটি ম্যাচ জেতার জন্য ৩৭০ রানের লক্ষ্যে ভালোই ব্যাটিং করছিলো। কিন্তু নতুন বল পাওয়ার পর আক্রমণে ধার ফিরে পান পাকিস্থানের বোলাররা। শেষ ৩৩ রানে ৬ উইকেটে হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
নতুন বল পাওয়ার পর হাসান আলি আক্রমণ এসে একাই ধসিয়ে দেন প্রোটিয়া ব্যাটিং লাইন আপকে। যখন বাজে শট খেলে সেঞ্চুরিয়ান মার্করাম আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান তখন হতাশায় নিজের প্যাডে ব্যাট দিয়ে আঘাত করেন কুইন্টাইন ডি কক। তিনিও বাজে শট খেলে শুন্য রানে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন তিনি।
রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের আগেও দূর্দান্ত পারফরম্যান্স করেন হাসান আলী। হাসান আলী ২০১৬ সাল থেকে পাকিস্থানের দলের হয়ে সব ধরনের সংস্করণের ম্যাচ খেলছেন। মাত্র ১৯ বছর বয়সে প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেটে অভিষেক হাসান আলি। অভিষেক ম্যাচে লাহোড় রবির হয়ে প্রথম ইনিংসে চার উইকেট নিয়ে নজর কাড়েন।
জাতীয় দলের স্কাউটদের চোখে পড়েন ২০১৫ সালে জাতীয় টি-টোয়েন্টি কাপে। যেখানে তিনি ৪ ম্যাচে তুলে নেন আট উইকেট। এরপর ২০১৬ সালে জাতীয় ওয়ানডে কাপে ১৬ উইকেট নিয়ে নির্বাচকদের পর্যাপ্ত নজর কাড়তে সক্ষম হন। এছাড়াও তিনি পিএসএলের প্রথম আসরে পেশোয়ার জালমির হয়ে খেলেন। সেবার আসরের সেরা উদীয়মান ক্রিকেটার নির্বাচিত হন।
হাসান আলী ছিলেন ওয়ানডেতে বিশ্বের পঞ্চম দ্রুততম ৫০ উইকেট শিকারী। হাসান আলীর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ২০১৬ সালে ডাবলিনে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। এছাড়া টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হয় ২০১৬ সালে সাত সেপ্টেম্বর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। অভিষেক টি-টোয়েন্টিতে শিকার করেন দুই উইকেট।
ক্রিকেটে এতো সাফল্যের পরও এর আগে কখনো টেস্টে ১০ উইকেট নিতে পারেননি। রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের ১০ উইকেট নেন। ২০১৮ সালে ইয়াসির শাহের পর প্রথমবারের মত টেস্ট ১০ উইকেট নিলেন কোনো পাকিস্থানি বোলার।
দিনের শুরুতে প্রথম ওভারেই ফেরান প্রোটিয়া ব্যাটসম্যান রসি ভ্যান ডার ডুসেনকে। কিছু ওভার পরও একই ভাবে প্যাভিলয়নের পথ ধরেন ডু প্লেসিস। এই দুই উইকেট যাওয়ার পর মার্করাম এবং বাভুমা মিলে পরিস্থিতি সামাল দিতে চেষ্টা করেন। তারা স্ট্রাইক রোটেট করে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তারা। পুরোনো বলে ভালোই খেলে যাচ্ছিলেন তাঁরা।
নতুন বল নেয়ার পর অধিনায়ক বল করতে নিয়ে আসেন হাসান আলী এবং শাহিন আফ্রিদিকে। হাসান আলী পাকিস্থানের প্রথম ইনিংসের সেরা বোলার ছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে এসে দূর্দান্ত বোলিং করে একে একে ফেরত পাঠান পাঁচ ব্যাটসম্যানকে। আর এর ফলেই তিনি ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মত ম্যাচে পেয়ে যান ১০ উইকেট। আর তারই সুবাদে স্মরণীয় এক জয় নিশ্চিত হয় পাকিস্তানের।
অনেক সম্ভাবনা থাকার পরও ইনজুরির কারণে হারিয়ে গেছেন – পাকিস্তান ক্রিকেটে এমন পেসারের সংখ্যা নেহায়েৎ কম নয়। হাসান আলীরও সেই হারিয়ে যাওয়াদের মিছিলে সামিল হওয়ার যথেষ্ট সুযোগ ছিল না। তবে, হাসান আলী একটু অন্য ধাতুতে গড়া। তিনি ফিরেছেন, তিনি ফিরেছেন ব্যাটসম্যানদের জন্য হুমকির কারণ হয়ে।