হ্যাটট্রিক করা এমনিতেই কঠিন। তাছাড়া পাওয়ার প্লে, ভারী ব্যাটের ব্যবহার, ফিল্ডার রেস্ট্রিকশন সবকিছু টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটকে করে তুলেছে ব্যাটিংনির্ভর। কম ইকোনমিতে বল করাই যেখানে কঠিন, সেখানে হ্যাটট্রিকের স্বপ্ন দেখা বিলাসিতাই বটে। তবুও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মঞ্চে পাঁচ জন বোলারের রয়েছে হ্যাটট্রিকের কৃতিত্ব। আসুন দেখে নেয়া যাক বিশ্বকাপের মঞ্চে হ্যাটট্রিককারী বিরলতম সেই পাঁচ বোলারকে।
- ব্রেট লি (অস্ট্রেলিয়া)
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম আসরেই হ্যাটট্রিক করার নজির গড়েন অস্ট্রেলিয়ার ফাস্ট বোলার ব্রেট লি। দুর্ভাগ্যক্রমে সেদিন লি’র বিপক্ষ দলের নাম ছিল বাংলাদেশ। টুর্নামেন্টের ১৪তম ম্যাচে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে তামিম ইকবাল এবং আফতাব আহমেদের ব্যাটে ভর করে সম্মানজনক সংগ্রহের দিকেই এগোচ্ছিল টাইগাররা। কিন্তু ১৭ তম ওভারে বোলিং এ এসে পুরো খেলার চিত্রনাট্য পাল্টে দেন ব্রেট লি।
প্রথমে সাকিব আল হাসানকে বাধ্য করেন উইকেট কিপারের কাছে ক্যাচ তুলে দিতে। পরের বলেই স্ট্যাম্প উড়িয়ে দেন মাশরাফি মর্তুজার। চতুর্থ তথা হ্যাটটিক করার বলে স্ট্রাইকে ছিলেন অলক কাপালি। কাপালি সেই বলটা মিড-উইকেটে ঠেলে সিংগেল নিতে চাইলেও বল এসে সরাসরি আঘাত হানে প্যাডে। আম্পায়ার আসাদ রউফ অপেক্ষা করেননি, আঙ্গুল তুলে জানিয়ে দেন তিনি আউট। ফলশ্রুতিতে বিশ্বকাপে দেখা মেলে প্রথম হ্যাটট্রিকের। সেদিন বাংলাদেশের দেয়া ১২৪ রানের লক্ষ্যমাত্রা পাঁচ ওভার বাকি থাকতেই পেরিয়ে গিয়েছিল অজিরা।
- কার্টিস ক্যাম্ফার (আয়ারল্যান্ড)
ব্রেট লি’র প্রথম হ্যাটট্রিকের পর বিশ্বকাপে দ্বিতীয় হ্যাটট্রিকের দেখা পেতে দর্শকদের অপেক্ষা করতে হয় প্রায় ১৪ বছর। তবে এই তালিকার বাকিদের চাইতে আইরিশ পেসার ক্যাম্ফার আলাদা, কারণ তিনিই একমাত্র বোলার যিনি টানা চার বলে চার উইকেট তুলে নিয়েছিলেন। গত বিশ্বকাপের নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে এই কীর্তি গড়েন তিনি। টস জিতে ব্যাট করতে নেমে আইরিশ বোলারদের তোপে পড়ে মাত্র ১০৬ রানেই গুটিয়ে গিয়েছিল ডাচরা।
সেদিন প্রতিটা আইরিশ বোলারই ভালো বল করলেও সব আলো কেড়ে নিয়েছিলেন ক্যাম্ফার একাই। দশম ওভারে বল করতে এসে ওভারের দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ এবং পঞ্চম বলে যথাক্রমে সাজঘরে ফেরত পাঠান অ্যাকারম্যান, টেন ডেসকাট, ভ্যান ডার এবং এডওয়ার্ডসকে। জবাব দিতে নেমে মাত্র পনের ওভারেই ১০৭ রানের টার্গেট তাড়া করে ম্যাচ জিতে নেয় আয়ারল্যান্ড।
- ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা (শ্রীলঙ্কা)
ক্যাম্পারের হ্যাটট্রিকের রেশ কাটার আগেই বিশ্বকাপের ইতিহাসের তৃতীয় হ্যাটট্রিকের দেখা পান শ্রীলঙ্কা লেগ স্পিনার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। শারজাহতে টুর্নামেন্টের ২৫ তম ম্যাচে লঙ্কানদের মুখোমুখি হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। শুরুতে ব্যাট করতে নেমে পাথুম নিসাঙ্কার ৭২ রানের সুবাদে প্রোটিয়াদের ১৪২ রানের টার্গেট দেয় শ্রীলঙ্কা।
জবাব দিতে নেমে ভালোই এগোচ্ছিল প্রোটিয়ারা। কিন্তু নিজের দ্বিতীয় স্পেলে বল করতে এসে খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেন লেগস্পিনার হাসারাঙ্গা। টানা তিন বলে লেগস্পিনের ঘূর্ণিজালে সাজঘরে ফেরান এইডেন মার্করাম, টেম্বা বাভুমা এবং ডোয়াইন প্রিটোরিয়াসকে। কিন্তু তাতেও শেষরক্ষা হয়নি, বাকি লঙ্কান বোলারদের ব্যর্থতায় শেষ ওভারে দলকে ম্যাচ জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন ডেভিড মিলার।
- কাগিসো রাবাদা (দক্ষিণ আফ্রিকা)
হ্যাটট্রিকের সাথে কাগিসো রাবাদার সখ্যতা বেশ পুরনো। একদিনের ক্রিকেটে অভিষেক ম্যাচেই বাংলাদেশের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করে গড়েছিলেন বিরল এক রেকর্ড। গত বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করে নাম লেখান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিককারীদের বিরল তালিকায়। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে সেদিন মার্করাম এবং ভ্যান ডার ডুসেনের ব্যাটে ভর করে ১৮৯ রানের ভালো সংগ্রহ পায় প্রোটিয়ারা। যদিও ব্যাটিং নির্ভর পিচে রান তাড়া করতে নামা ইংল্যান্ডই ছিল ফেবারিট।
পুরো ম্যাচেই খেলার নিয়ন্ত্রণ নিজেদের কাছে রাখা ইংল্যান্ডের শেষ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ১৪ রান। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে প্রথম তিন বলে তিন উইকেট নিয়ে রাবাদা জয় এনে দেন দক্ষিণ আফ্রিকাকে। একে একে সাজঘরে ফেরান লিয়াম লিভিংস্টোন, ইয়ন মরগ্যান এবং ক্রিস জর্ডানকে। ম্যাচ হারলেও শ্রেয়তর রানরেটের কারণে সেবার সেমিফাইনাল খেলেছিল ইংলিশরাই।
- কার্তিক মেরিয়াপ্পন (সংযুক্ত আরব আমিরাত)
বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিকের তালিকায় সর্বশেষ নামটি আরব আমিরাতের স্পিনার কার্তিক মেরিয়াপ্পনের। এবারের বিশ্বকাপে বর্তমান এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করে বিশ্ববাসীকে চমকে দেন ২২ বছর বয়সী এই লেগস্পিনার। এমনিতেই নামিবিয়ার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ হারায় সুপার টুয়েলভের আগেই বাদ পড়ে যাওয়ার শঙ্কায় ছিল লঙ্কানরা।
আরব আমিরাতের বিপক্ষে জয় ছাড়া দ্বিতীয় কোনো অপশন ছিল না তাঁদের জন্য। আর এমন ম্যাচেই কিনা মেরিয়াপ্পন দেখালেন জাদু, ১৫ তম ওভারে বল করতে এসে একে একে আউট করেন ভানুকা রাজাপাকসে, চারিথ আসালঙ্কা এবং অধিনায়ক দাসুন শানাকাকে। বিশেষ করে হ্যাটট্রিক পূরণ করা বলটা ছিল অনবদ্য, বলটা যেন বুঝতে পারেননি শানাকা। দারুণ এক গুগলিতে বোল্ড করেন শানাকাকে। যদিও পরবর্তীতে ব্যাটারদের ব্যর্থতায় ম্যাচ হেরে যায় আরব আমিরাত।