সৌদির পর এবার জাপান রূপকথা। বিশ্বকাপ শুরু হতে না হতেই একের পর এক চমক দেখতে পাচ্ছে বিশ্ব। মরুর মাটিতে রূপকথা রচনা করে নিজেদের ফুটবল ইতিহাসে একটি সোনালি জয় যুক্ত করলো ‘সূর্যদয়ের দেশ’।
২০১৮ বিশ্বকাপে রাউন্ড অফ সিক্সটিন এর ম্যাচে একটি রূপকথা রচনা করে কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়ার পথেই ছিল জাপান। সেদিন অতিরিক্ত সময়ের গোলে বেলজিয়ামের সাথে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয় জাপানের। কে জানতো নিজেদের পরের বিশ্বকাপ ম্যাচেই এমন রূপকথার জন্ম দেবে জাপান।
এবারের বিশ্বকাপে ফেভারিট হিসেবেই খেলতে এসেছে জার্মানি। সবদিক বিবেচনা করলে অত্যন্ত ব্যালেন্স একটা স্কোয়াড নিয়ে এসেছে হ্যান্সি ফ্লিকের দল। কিন্তু প্রথম ম্যাচেই জার্মানিকে মাটিতে নামিয়ে এসেছে এশিয়ার পরাশক্তিরা। আল রাইয়ানের খলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে প্রথমার্ধে আধিপত্য ছিল জার্মানির।
তবে, দারুণভাবে তাদের প্রতিহত করছিল জাপানিরা। যদিও প্রথমার্ধে গুন্দোগানের পেনাল্টি থেকে করা গোলে ১-০ তে এগিয়ে ছিল জাপান। দ্বিতীয়ার্ধে প্রবলভাবে ঘুরে দাঁড়ায় জাপান। ৭৫ মিনিটে রিতসু দোয়ান এবং ৮২ মিনিটে তাকামু আসানোর গোলে ২-১ এ জয় নিশ্চিত করে জাপান।
দ্বিতীয়বারের মত এশিয়ার মাটিতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে এশিয়ার দলগুলো চমক দেখিয়েই চলেছে। প্রথমবার ২০০২ সালে জাপান ও দক্ষিন কোরিয়া ছিল বিশ্বকাপের যৌথ আয়োজক। সেবার জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াকে নিয়ে উচ্ছ্বাস ছিল না কোনো। বরং আয়োজক হিসেবে পারফরম্যান্স দিয়ে মান রক্ষা করাই ছিল চ্যালেঞ্জ। কিন্তু সে বিশ্বকাপে চমক দিয়েছিল দক্ষিন কোরিয়া। এশিয়ার প্রথম দল হিসেবে সেমিফাইনালে খেলে তারা।
মরুর দেশে অনুষ্ঠিত এবারের বিশ্বকাপে একদিন আগেই সৌদি আরব এক আপসেটের জন্ম দিয়েছে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে। এবার এশিয়ান গুলোর শক্তিমত্তা আরও একবার জানান দিল জাপান।
এমনিতে ল্যাটিন আর ইউরোপীয় আধিপত্যে এশিয়ান ফুটবল পেছনেই থেকে এসেছে বরাবর। কিন্তু বিশ্বকাপ এলেই যেন ছোটদল-বড়দলের পার্থক্য কমে যেতে থাকে। গত বিশ্বকাপে দক্ষিণ কোরিয়া হারায় জার্মানিকে। আর বেলজিয়ামের সাথে রাউন্ড অফ সিক্সটিনে জিততে জিততে হেরে যায় জাপান।
এবারের বিশ্বকাপে অন্যরকম ছন্দে দেখা যাচ্ছে এশিয়ান পরাশক্তিদের। জাপানের খেলায়ও ছিল পরিষ্কার পরিকল্পনার ছাপ। এমনিতেই এই গ্রুপ থেকে পরের রাউন্ডে যাওয়া আপতপক্ষে অসম্ভবই ছিল জাপানের জন্য। স্পেন আর জার্মানিকেই দ্বিতীয় রাউন্ডে দেখছিল সবাই। কিন্তু এই ম্যাচ জিতে গ্রুপ ‘ই’ এর সমীকরণ পুরোপুরি পাল্টে দিল জাপান। এখন তারা পরপর দুই বিশ্বকাপে দ্বিতীয় রাউন্ডে যাবার স্বপ্ন দেখতেই পারে।
তবে আপাতত উৎসব চলছে জাপান শিবিরে। ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজার সাথে সাথে জাপান খেলোয়াড়দের উল্লাসই বলে দেয় এই জয়টা কত বড় তাদের জন্য। জার্মান যন্ত্র বিকল করে দিয়েছে তারা। সৌদি আরবের পর জাপানের এই জয়ে যেন এশিয়ান ফুটবলের জাগরণের গল্প মিশে আছে। চেনা কন্ডিশনে তারাও ইউরোপ-ল্যাটিনদের সাথে পাল্লা দিতে পারে সে কথাই যেন সর্বশেষ জানান দিল নীল সামুরাইরা।