টি-টোয়েন্টিতে দেড় দশকের বেশি সময় কাটিয়ে দিলেও আমেজটাই ধরতে পারেনি বাংলাদেশ। অবশেষে লিটন দাস এবং রনি তালুকদারের উদ্বোধনী জুটিতেই যেন নিজেদের নতুন সুর খুঁজে পেয়েছে সাকিব আল হাসানের দল।
অথচ এই জুটি একত্রে ইনিংসের উদ্বোধন করতে নামছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ থেকে। একদম শুরু থেকেই নিজেদের লক্ষ্যে তাঁরা অবিচল, প্রতিপক্ষ বোলার যারাই হোক না কেন আগ্রাসী ব্যাটিং করতে হবে। বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তদের জন্য ঘটনাটা নতুনই বটে, তাঁদের কাছে তো টি-টোয়েন্টি ওপেনার মানেই খানিকটা রয়েসয়ে খেলা। গত এক বছরে বাংলাদেশ তাঁদের উদ্বোধনী জুটিতে কম পরীক্ষা নিরীক্ষা চালায়নি। অবশেষে হয়তো লিটন-রনিতেই মুক্তি মিলছে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টের।
নির্বাচকরা কম চেষ্টা চালাননি লিটনের সঙ্গী খুঁজে পেতে। কখনো আস্থা রেখেছেন নাইম শেখে, আবার কখনো সুযোগ দিয়েছেন তরুণ মুনিম শাহরিয়ার এবং পারভেজ হোসেন ইমনকে। কিন্তু কেউই আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি।
এমনকি মেহেদি হাসান মিরাজকেও বেশ কয়েকবার ওপেনিং পজিশনে চেষ্টা করা হয়েছে। মেহেদি নিজের সেরাটা দিয়েই চেষ্টা করেছেন, কিন্তু আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সাফল্য পেতে সেটা যথেষ্ট ছিল না। গত বিশ্বকাপের সময় সৌম্য সরকারকেও ফেরানো হয়েছিল, কিন্তু তিনিও হারিয়ে ফিরছেন নিজেকে।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে এই দুজনে মিলে ১২৪ রানের জুটি গড়েন, যা কিনা উদ্বোধনী জুটিতে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ। সেটাও কিনা মাত্র ৯.২ ওভারে, যেকোনো জুটিতে এর চাইতে দ্রুততম শতরান তুলতে পারেননি কেউই। এই দুজনে মিলে মাত্র পাঁচ ইনিংসেই ৩০০ রানের জুটি ছাড়িয়েছেন, যা অতিক্রম করতে বাকি উদ্বোধনী জুটিদের খেলতে হয়েছে ন্যূনতম ১৩ ইনিংস। তাই, এই দু’জনেই ভরসা টিম ম্যানেজমেন্টের। সেটা তৃতীয় টি-টোয়েন্টির ভরাডুবির পরও।
এছাড়া এই জুটি রানের জন্য কেবল বাউন্ডারির উপর নির্ভরশীল নয়, বরং ডট বল খেলার প্রবণতাও কমিয়েছেন অনেকাংশে। ১২৪ রানের জুটি গড়ার পথে মোটে ছয়টি ডট বল খেলেছেন এই দুজন। প্রথম ম্যাচেও ৯১ রানের জুটিতে খেলেছিলেন মাত্র সাতটি ডট বল।
অন্যদিকে, পাওয়ার প্লে’তে ত্রিশ গজ বৃত্তের বাইরে মাত্র দুজন ফিল্ডার রাখার সুবিধা নিতেও ওস্তাদ এই দুজন। পাওয়ার প্লে’তে লিটনের ১৪২ স্ট্রাইকরেট কমপক্ষে ৭০০ বল মোকাবেলা করা ব্যাটারদের মাঝে সর্বোচ্চ। কুইন্টন ডি কক, মোহাম্মদ শাহজাদ, রোহিত শর্মাদের চাইতেও এই জায়গাতে এগিয়ে থাকবেন তিনি।
অন্যদিকে, আট বছর বাদে জাতীয় দলে ফিরে রনিও চমক দেখিয়ে যাচ্ছেন। প্রত্যাবর্তনের পর প্রতি ম্যাচে লিটনের কাছাকাছি স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করেছেন তিনি। বিপিএলে রংপুর রাইডার্সের হয়ে ফর্মটা টেনে এনেছেন জাতীয় দলেও।
দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ১৮ বলে ফিফটি হাঁকিয়ে মোহাম্মদ আশরাফুলের ১৫ বছর পুরনো রেকর্ড ভেঙেছেন লিটন। এতটাই বিধ্বংসী ছিলেন ব্যাট হাতে সবাই ভেবেছিলেন সেঞ্চুরি করেই ফিরবেন এই তারকা। লিটন বলেন, ‘যদি ওদের পেসারদের জন্য অপেক্ষা করতাম, তবে হয়তো ৮৩ রানের বদলে সেঞ্চুরি করতে পারতাম।’ কিন্তু, তাণ্ডবটা থামাতে চাননি বলেই আর অপেক্ষা করেননি লিটন। এটাই তো টি-টোয়েন্টির অ্যাপ্রোচ হওয়া উচিৎ।
টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের চিরায়ত সমস্যা বিগ হিটিংয়েরও সমাধান আছে এই দুজনের কাছে। এমন হচ্ছে না যে একজন চালিয়ে খেলছেন, অন্যপ্রান্তে আরেকজন রয়েসয়ে এগোচ্ছেন। বরং দুইপ্রান্ত থেকেই আক্রমণাত্নক ক্রিকেট খেলে প্রতিপক্ষের উপর চাপটা বজায় রাখছেন।
তবে মনে রাখতে হবে মারকুটে ব্যাটিং খেলে তাঁরা প্রতিদিন সফল হবেন না। এমন দিন আসবে যেদিন তাঁরা ফিরবেন দ্রুতই, বাংলাদেশও হয়তো গুটিয়ে যাবে অল্প রানেই। তবে ধৈর্য হারালে চলবে না, এই ফরম্যাটে বিশ্বসেরা হতে চাইলে আগ্রাসী ক্রিকেটটা যে ভীষণ জরুরি।