বানিজ্যে বসতি চেলসির

ইংলিশ ফুটবলের ঐতিহ্যবাহী এক পরাশক্তি চেলসি এফ.সি। বর্তমানে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও নিজেদের জায়গা ধরে রেখেছে দ্য ব্লুজরা। একুশ শতকে দুইটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতার পাশাপাশি পাঁচটি লিগ শিরোপা নিজেদের করে নিয়েছে তারা।

তারকা ফুটবলার কেনার জন্যও পরিচিত তারা। একজন প্রতিভাবান খেলোয়াড়কে দলে নেয়ার সুযোগ পেলে ব্লুজরা দুইবার ভাববে না আর এমনটা তারা অতীতে অনেকবার দেখিয়েছে।

কিন্তু চেলসি শুধু খেলোয়াড় কিনতে কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করে ব্যাপারটা তেমন নয়। তারা ট্রান্সফার উইন্ডোতে মুনাফা লাভ করতেও বেশ দক্ষ। প্রকৃতপক্ষে, তরুণ প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের সস্তায় কিনে নেয়ার পর ব্যাপক লাভে তাদের অন্য ক্লাবের কাছে বিক্রি করে ক্লাবটি। চলতি শতাব্দীর শুরু থেকে এখন পর্যন্ত খেলোয়াড় বিক্রয়ে ১.৩ বিলিয়ন ইউরো বা ৮৪০ মিলিয়ন পাউন্ড সংগ্রহ করেছে তারা। 

গত দশকে চেলসি ইডেন হ্যাজার্ড, ডিয়েগো কস্তা, থিবো কোর্তোয়ার মত বেশকিছু নামীদামি প্লেয়ারকে বিদায় বলেছে। তাদের সবার জন্যই বেশ বড় অংকের অর্থ যোগ হয়েছে ক্লাব ফান্ডে। এবার দেখে আসা যাক, তাদের এমনই কিছু ব্যয়বহুল বিক্রয়। 

  • ইডেন হ্যাজার্ড (রিয়াল মাদ্রিদ)

খেলোয়াড় বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ইডেন হ্যাজার্ড চেলসির সবচেয়ে দামী তারকা। ২০১৯ সালে ১১৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে তিনি রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দিয়েছিলেন। হ্যাজার্ড যখন চেলসি ছেড়েছিলেন তখন তিনি রীতিমতো একজন ক্লাব কিংবদন্তি ছিলেন। ফ্রান্সের ক্লাব লিঁলে থেকে ২০১২ সালে ব্লুজদের নীল জার্সি গায়ে জড়ানোর পর, হ্যাজার্ড নিজের পারফরম্যান্স দিয়ে মুগ্ধ করেছিলেন ভক্তদের।

এই বেলজিয়ান উইঙ্গার চেলসিতে থাকাকালীন বিশ্বমানের ফরোয়ার্ডে রূপান্তরিত হয়েছিলেন যাকে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডাররা অসম্ভব ভয় পেতেন। হ্যাজার্ড চেলসির হয়ে ৩৫০ টিরও বেশি ম্যাচ খেলেছেন। এই সময়ে তিনি ১১০টি গোল করেছেন এবং তাদের দুটি প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা এবং দুটি ইউরোপা জিততে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

তিনি হয়তো রিয়াল মাদ্রিদে তার পারফরম্যান্স ধরে রাখতে সক্ষম হননি কিন্তু চেলসি সমর্থকদের কাছে তিনি সব সময়ই একজন আইকন হয়ে থাকবেন।

  • ডিয়েগো কস্তা (অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ)

২০১৮ সালের শীতকালীন দলবদলের সময় চেলসি ছেড়ে চলে যান ডিয়েগো কস্তা। নানাবিধ বিতর্ক থাকা সত্ত্বেও, কস্তাকে বিক্রয়ের মধ্য দিয়ে বেশ বড় অংকের অর্থ পেয়েছিল চেলসি। ৬০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে এই স্ট্রাইকারকে দলে নিয়েছিল লা লিগার দল অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। ২০১৪ সালে কস্তা স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে এসেছিলেন।

নিজের প্রথম মৌসুমে ২১ গোল করে ক্লাবটিকে প্রিমিয়ার লিগ জিততে সাহায্য করেন তিনি। এছাড়া ২০১৬/১৭ মৌসুমে ২২ গোল করে দলকে আরেকটি লিগ শিরোপা এনে দেন তিনি। কিন্তু এরপরই শুরু হয় সমস্যা। কোচ অ্যান্তনি কন্তের সঙ্গে দ্বন্দে জড়িয়ে পড়েন ডিয়েগো কস্তা। বাধ্য হয়েই তাকে ২০১৮ সালের শুরুতে বিক্রি করে দেয় চেলসি ম্যানেজম্যান্ট।  

  • অস্কার (সাংহাই পোর্ট এফ.সি)

ব্রাজিলের আক্ষেপ অস্কার চেলসিতেও আক্ষেপের জন্ম দিয়েছিলেন। ২০১২ সালে চেলসিতে আসার পরে অস্কারকে দেখে মনে হয়েছিল ব্লুজরা একজন সম্ভাব্য সুপারস্টার দলে ভিড়িয়েছে। এমনকি তার চেলসি ক্যারিয়ারে শুরুটা ছিল চিত্তাকর্ষক। এই প্লে-মেকার খুব দ্রুত চেলসির মূল একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠেন।

তার ড্রিবলিং, বুদ্ধিমত্তা আর দুর্দান্তসব গোল করার প্রবণতা সবাইকে মোহিত করেছিল। কিন্তু ২০২০ সালে অস্কার প্রায় সবাইকে বিস্মিত করে ইউরোপীয় ফুটবল ছেড়ে চলে যান। উচ্চ বেতনের লোভে তিনি এশিয়ান ক্লাব সাংহাই পোর্ট এফ.সি-তে যোগ দেন। আর তার জন্য চীনা ক্লাবটিকে রেকর্ড ৬০ মিলিয়ন ইউরো খরচ করতে হয়েছিল। 

  • ডেভিড লুইজ (পিএসজি)

২০১১ সালে বেনফিকা থেকে চেলসিতে এসেছিলেন ব্রাজিলিয়ান সেন্টারব্যাক ডেভিড লুইজ। তিন বছর পরেই ২০১৪ সালে পিএসজি তাকে ৪৯.৭ মিলিয়ন ইউরো খরচ করে নিজেদের করে নেয়। আর এরই মধ্য দিয়ে তৎকালীন সময়ের সবচেয়ে দামী ডিফেন্ডার হয়েছিলেন ডেভিড লুইজ।

চেলসিতে থাকাকালীন তিনি স্ট্যামফোর্ড ব্রিজের জনপ্রিয় চরিত্র ছিলেন। ২০১২ সালে এই ব্রাজিলিয়ান চেলসির হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছিল। ২০১৬ সালে অবশ্য দ্বিতীয়বারের মত চেলসিতে ফিরে আসেন এই ফুটবলার।

  • হুয়ান মাতা (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড)

২০১১ সালে ভ্যালেন্সিয়া থেকে চেলসিতে আসার পর দুর্দান্ত শুরু পেয়েছিলেন হুয়ান মাতা। ২০১২ সালে ক্লাবটির হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ এবং পরের বছর ইউরোপা লিগ শিরোপা জিতেছিলেন তিনি। কিন্তু ২০১৩ সালে হোসে মরিনহোর আগমনের পর হুয়ান মাতার চেলসি ক্যারিয়ারে শঙ্কার মেঘ জমে।

পর্তুগিজ কোচ এই স্প্যানিয়ার্ডকে ভরসা করতে না পারায় মূল দলে জায়গা হারান মাতা। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ডাকে সাড়া দিয়ে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে চলে আসেন তিনি। আর এই মিডফিল্ডারের জন্য চেলসি পেয়েছিল ৪৪.৮ মিলিয়ন ইউরো। 

এরা ছাড়াও গত কয়েক মৌসুমে নেমানজা মাতিচ, ট্যামি আব্রাহাম, আলভারো মোরাতা এবং থিবো কোর্তোয়াকে বেশ ভাল দামেই বিক্রি করতে সক্ষম হয়েছে ইংলিশ ক্লাব চেলসি। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link