ব্রিটিশ স্বপ্নের আইরিশ কাণ্ডারী

বিশ্বকাপ হাতে নিয়ে ইয়ন মরগ্যানের স্মৃতিতে কোনোভাবেই সেই দিনটা উঁকি দেওয়ার কথা নয়!

সময়টা ২০০৮ সালের মার্চ মাস। বাংলাদেশের মাটিতে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলতে এসেছিল আয়ারল্যান্ড দল। অনুমিত ভাবেই আইরিশরা হোয়াইওয়াশ হয়েছিল। মরগ্যান দু’বার ফরহাদ রেজার বলে আর একবার মাশরাফি বিন মুর্তজার বলে আউট হয়ে ফিরেছিলেন সাজঘরে। তিন ম্যাচে তিনি করেছিলেন মোটে ৫১ রান।

এর ঠিক এক বছর পরেই শেষবারের মত আয়ারল্যান্ডের জার্সি শরীরে চাপিয়েছিলেন। শেষ ম্যাচটা ছিল ২০০৯ সালের ছয় এপ্রিল। কানাডার বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচ। ৮৪ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে তিনিই পেয়েছিলেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।

অথচ, আইরিশদের কি ভাগ্য! এর পরের মাসেই ব্রিস্টলে ইংল্যান্ডের জার্সি গায়ে অভিষেক হয়ে গেল আয়ারল্যান্ডের ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যানের।

বাকিটা ইতিহাস!

কালক্রমে মরগ্যান হয়ে উঠলেন ইংল্যান্ড মিডল অর্ডারে ভরসার অপর নাম। ২০১৫ বিশ্বকাপের মাস দুয়েক আগে তো অধিনায়কত্বও পেলেন ওয়ানডে দলের। ইংল্যান্ড ক্রিকেটের ঘোরতর দু:সময় ছিল সেটা। বিশ্বকাপেও তেমন একটা স্বপ্ন ছিল না। কিন্তু গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়ে যাবে – এমন আশঙ্কাও ছিল না।

কিন্তু, সবাইকে অবাক করে দিয়ে সেই আশঙ্কাই সত্য হল। যথারীতি নাক উঁচু ব্রিটিশ মিডিয়াও সমালোচনায় বিস্তর কালি খরচ করলো। যদিও, মরগ্যান হাল ছাড়লেন না। বিপর্যস্ত একটা দলের নাবিকের দায়িত্ব তিনি পালন করে গেলেন দক্ষ হাতে।

সাদামাটা একটা দলকে তিনি নিয়ে গেলেন ইতিহাসের অন্যতম সেরা দলের কাতারে। ওয়ানডে র‌্যাংকিংয়ের চূড়ায় তুলেছেন। বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন দেখিয়েছেন, স্বপ্ন পূরণও করেছেন। ক্রিকেটের আঁতুরঘরের এতদিনের বিশ্বজয়ের আক্ষেপ ঘুঁচিয়েছেন এই আইরিশ।

ইংলিশদের আজকের এই উত্থানের পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান মরগ্যানেরই। মরগ্যান অধিনায়কত্ব, তাঁর অথোরিটি, তার ইনটেন্ট ইংল্যান্ডকে বাকিদের থেকে আলাদা করে তুলেছে। তিনি দলের মধ্যে একটা ইতিবাচক আত্মবিশ্বাস ছড়িয়ে দিয়েছেন, যা এতকাল অনুপস্থিত ছিল।

অধিনায়ক মরগ্যানের পাশে ব্যাটসম্যান মরগ্যানের কথা ভুলে গেলে চলবে না। অনেকটা এগিয়ে থেকে ইংল্যান্ডের ওয়ানডে ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি রান করা ব্যাটসম্যান। গেল চার বছরে প্রায় ৪৬ গড়! স্ট্রাইক রেট ১০০ ছুঁইছুঁই। ইংলিশদের টপ অর্ডার এত ভালো করার পরও তার ৮৪ ইনিংসে ছয় সেঞ্চুরি ও ২৪ টি হাফ সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। মানে ৩০ বার পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের ইনিংস খেলেছেন। বোঝাই যাচ্ছে, নিজেই দলের জন্য অনন্য এক নিদর্শন সৃষ্টি করেছেন মরগ্যান।

মজার ব্যাপার হল ২০১৩ সালে ভাগ্যক্রমে প্রথমবারের মত যেবার ইংল্যান্ডের অধিনায়ক হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন মরগ্যান, সেদিন প্রতিপক্ষ ছিল আয়ারল্যান্ডই। ম্যাচটাও হয়েছিল আয়ারল্যান্ডের ম্যালাহাইডে। দর্শকদের বিদ্রুপ, মিডিয়ার চোখ রাঙানি হজম করেই দায়িত্ব পালন করেছিলে মরগ্যান। সেসব এখন অতীত।

তিনি এখন ব্রিটেনের মহানায়ক, বিশ্ব ক্রিকেটের মহানায়ক! বিশ্বকাপ জয়ের পর মরগ্যানদের সাফল্যে তাই আইরিশ নদীর দু’পাশেই আনন্দের জোয়ার। হয়তো, আইরিশদের মনে গোপন একটা আক্ষেফও আছে তাঁকে ঘিরে। কে জানে, তিনি আয়ারল্যান্ডেই থেকে গেলে – কিংবা আরো যেসব আইরিশ ক্রিকেটার নিজেদের সুদিনে ইংল্যান্ডে ভাগ্যের অন্বেষণে পাড়ি জমিয়েছেন – তাঁরা থাকলে হয়তো আজ আয়ারল্যান্ড ক্রিকেট আকাশের বড় নক্ষত্র হত!

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link