একটা সময় বলে কয়ে লিগ শিরোপা জেতা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এখন ডুবো জাহাজের মত হয়ে আছে। স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের অবসরের পর থেকে দলটির দুরাবস্থার শুরু। ২০১৩ সালে ফার্গুসনের বিদায়ের পরে হোসে মরিনহো, ওলে গানার সোলশারের মত কোচরা দায়িত্ব নিয়েছেন; কিন্তু ইউনাইটেড ভক্তদের আনন্দের উপলক্ষ এনে দিতে পারেননি।
সর্বশেষ মেজর ট্রফি বলতে একটা ইউরোপা কাপ, সেটাও প্রায় বছর পাঁচেক আগে। গত মৌসুমে তো উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগেই কোয়ালিফাই করতে ব্যর্থ হয়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। অথচ ফার্গুসন চলে যাওয়ার পর থেকে খেলোয়াড় কেনার দুই হাতে খরচ করেছে ইউনাইটেড ম্যানেজমেন্ট। ইতোমধ্যে এই খরচের পরিমাণ এক বিলিয়ন পাউন্ড ছাড়িয়ে গিয়েছে। তবে, ফলাফল যে আশানুরুপ আসেনি, সেটা বলাই বাহুল্য।
- কার্লোস ক্যাসেমিরো (রিয়াল মাদ্রিদ)
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সর্বশেষ বড় সাইনিং সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ তারকা কার্লোস ক্যাসেমিরো। এই ফুটবলারকে দলে ভেড়াতে গুনতে হয়েছে প্রায় ৭০ মিলিয়ন ইউরো। গত কয়েক বছর ধরেই একজন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের অভাবে ভুগতে হয়েছে ইউনাইটেডকে। আর এই সমস্যার সমাধানে ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার ক্যাসেমিরোকে নিয়ে এসেছে তারা। আপাতত দেখার বিষয় নিজের দায়িত্বে কতটা সফল হন এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার।
- হ্যারি ম্যাগুয়ার (লেস্টার সিটি)
ইউরোপিয়ান ফুটবলের সমর্থকদের কাছে হ্যারি ম্যাগুয়ার এখন হাস্যরসের পাত্র। অথচ এই ইংলিশ ডিফেন্ডারকে দলে নিতে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে গুনতে হয়েছে ৮০ মিলিয়ন ইউরো; এমনকি ক্লাবের অধিনায়কত্ব তুলে দেয়া হয়েছে তাঁর হাতে। তবে সময়ের সাথে সাথে বদলে গিয়েছে দৃশ্যপট; শিশুতোষ ভুলে বারবার খবরের শিরোনাম হয়েছেন ম্যাগুয়ার। এখন তো রীতিমতো দলের বোঝা হয়ে আছেন তিনি।
- পল পগবা (জুভেন্টাস)
পল পগবার পেশাদার ক্যারিয়ারের শুরুটা ওল্ড ট্র্যাফোর্ডেই কেটেছে। কিন্তু টিম ম্যানেজম্যান্টকে সন্তুষ্ট করতে না পারায় চলে যেতে হয় জুভেন্টাসে। আবার তুরিনের বুড়িদের হয়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখে তাকে আবার ইউনাইটেডে ফিরিয়ে আনা হয়। আর এই ট্রান্সফারের জন্য জুভেন্টাসকে দিতে হয়েছিল ৮৯ মিলিয়ন ইউরো। অথচ চলতি বছর ফ্রি এজেন্ট হিসেবে পুনরায় জুভেন্টাসে পাড়ি জমিয়েছেন ফরাসি ফুটবলার।
- জ্যাডন সাঞ্চো (বরুশিয়া ডর্টমুন্ড)
২০০৯ সালে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো রিয়াল মাদ্রিদে চলে যাওয়ার পর থেকেই পারফেক্ট উইঙ্গারের ঘাটতি ছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের দলে। সেই ঘাটতি পূরণে ২০২১ সালে অনেক আশা-ভরসা করে বরুশিয়া ডর্টমুন্ড থেকে ৭৩ মিলিয়ন ইউরোতে জোডান সানচোকে নিয়ে আসে ইংলিশ ক্লাবটি। কিন্তু মাঝেমধ্যে ঝলক দেখালেও গত মৌসুমে হতাশাজনক পারফরম্যান্স দেখান সাঞ্চো। এরিক টেন হ্যাগের কোচিংয়ে এবার হয়তো ঘুরে দাঁড়াতে চাইবেন ব্রিটিশ তরুণ।
- রোমেলু লুকাকু (এভারটন)
জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচের রেখে যাওয়া স্ট্রাইকার পজিশনে খেলানোর জন্য ২০১৭ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কিনে নেয় রোমেলু লুকাকুকে। এই বেলজিয়ানের জন্য ব্যয় করতে হয়েছে ৭৫ মিলিয়ন ইউরো। অথচ প্রথমে দারুণ শুরুর পরেও ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে নিজেকে হারিয়ে ফেলেন লুকাকু। সেই সাথে রেড ডেভিলদের ব্যয়বহুল লস প্রজেক্টে নিজের নাম লেখান।
- অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (রিয়াল মাদ্রিদ)
প্রায় ৬০ মিলিয়ন ইউরো খরচ করে অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়াকে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে নিয়ে আসা হয়েছিল। সেই সাথে আইকনিক সাত নম্বর জার্সি দেয়া হয় তাকে। কিন্তু শুরুর পাঁচ ম্যাচে তিন গোল করা ডি মারিয়া নিষ্প্রভ হয়ে পড়েন। আবার তাঁর বাড়িতে ডাকাতি হওয়ার মত ঘটনা ঘটায় মানসিক স্বাস্থ্যে ব্যাঘাত ঘটে। তাই একজন ফ্লপ হিসেবেই রেড ডেভিলদের বিদায় বলতে হয় ডি মারিয়াকে।
- লিসান্দ্রো মার্টিনেজ (আয়াক্স)
এরিক টেন হ্যাগ দায়িত্ব নেয়ার পরে বড় অংকের অর্থ খরচ করতে হয়েছে তাঁর সাবেক শিষ্য লিসান্দ্রো মার্টিনেজের জন্য। আয়াক্স থেকে এই ডিফেন্ডারকে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে আনতে প্রয়োজন হয়ে ৪৮ মিলিয়ন ইউরোর বেশি। অবশ্য মাত্র পাঁচ ফুট নয় ইঞ্চির এই আর্জেন্টাইন নিজের শুরুটা ভালভাবে করতে পারেননি। কম উচ্চতার কারণে প্রিমিয়ার লিগের দীর্ঘদেহী স্ট্রাইকারদের কাছে পরাস্ত হতে হয়েছে তাঁকে।।
এদের ছাড়াও অ্যারন ওয়ান বিশাকা, ফ্রেড, ডনি ভ্যান ডি ভিক, অ্যান্থনি মার্শিয়ালদের পেছনে দেদারসে অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। কোন রকমের পরিকল্পনা ছাড়াই একের পর এক ট্রান্সফার উইন্ডোতে খেলোয়াড় কিনে ভক্তদের শেষমেশ হতাশা উপহার দিচ্ছে দলটি।
অন্য অনেক দল-ই এমন ব্যয়বহুল পদ্ধতিতে দল সাজায়, কিন্তু ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের অধিকাংশ সাইনিং কোন কাজে না আসায় একটু বেশি সমালোচনা সহ্য করতে হচ্ছে।