কব্জির মোচড়ে একটা ফ্লিক। ফাইন লেগের উপর দিয়ে সেটা পাড়ি দিল ৯৯ মিটার দূরত্ব। তাওহীদ হৃদয়ের কি অসাধারণ ছক্কা! জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এমন আরও দুইটি দৃষ্টিনন্দন ছক্কা মেরেছেন হৃদয়। চোখ ধাঁধানো পাওয়ার হিটিং করতে তিনি বরাবরই পারদর্শী। সে আর নতুন কি!
তবে নতুন হচ্ছে তিনি বেশ বুদ্ধিদীপ্ত ব্যাটার। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি-তে বেশ কয়েকবার এসেছে বৃষ্টির বাঁধা। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদের আকাশে ছিল মেঘের ঘনঘটা। একটু ধীরলয়ে ইনিংস শুরু করেছিলেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার। বৃষ্টি আইনের মারপ্যাঁচ তখন হয়ে উঠেছিল বিশাল চিন্তার কারণ।
তাওহীদ হৃদয় তাইতো এদিন ইনিংস খেলেছেন বেশ হিসেব করে করে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত কোন কিছুই তিনি করতে চাননি। জয় বাংলাদেশের হাতের মুঠোতেই ছিল। টপ অর্ডারের দ্রুত বিদায়ে অবশ্য কিঞ্চিৎ হলেও পরাজয়ের শঙ্কা জেগেছিল। তবে পরাজয়ের কারণ হতে পারতে কেবলই বৃষ্টি। তাইতো শুরুর স্লথ গতির রান তোলা খানিকটা দ্রুত করতে চেয়েছিলেন হৃদয়।
নিজের ব্যাট দিয়ে ইনিংসের গতিপথ নিয়ন্ত্রণ করেছেন তিনি। খালি চোখে বুদ্ধিদীপ্ততা হয়ত চোখে পড়বে না। বলের মেরিট বুঝে, সময়ের চাহিদা মেনে প্রতিটা ডেলিভারিকে সামলেছেন হৃদয়। তাইতো ম্যাচ সেরার পুরষ্কারটাও উঠেছে তার হাতে। তিনি নিয়ন্ত্রণ করেছেন পুরোটা ম্যাচের ভাগ্য।
এই কাজটা তিনি করতে শিখছেন সাম্প্রতিক সময়ে। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি, ম্যাচের পরিস্থিতি বুঝে খেলতে পারাও বিশাল বড় এক দক্ষতা। সেই দক্ষতা হাসিলের লক্ষ্যেই যেন এগিয়ে যাচ্ছেন তাওহীদ হৃদয়। সব সময় যে মেরে খেলতে হবে, অপ্রয়োজনেও নিতে হবে ঝুঁকি- এমন তো নিয়ম নেই।
আগ্রাসন আর বুদ্ধির সংমিশ্রণে ম্যাচকে নিয়ন্ত্রণ করাটাই মুখ্য। গুটিগুটি পায়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটে এগিয়ে চলা তাওহীদ হৃদয় চলতে চলতে শিখছেন বহুকিছুই। একেবারে জাত মিডেল অর্ডার ব্যাটার হওয়ার পথেই রয়েছেন তিনি।
প্রয়োজনে ব্যাট চালাবেন, পেশি শক্তিতে বল আছড়ে ফেলবেন সীমানার বাইরে। আবার সেই তিনিই হাল ধরবেন, ইনিংস বড় করবেন। খেলাটাকে শেষ অবধি টেনে নিয়ে যাবেন। এসব গুণাবলি রয়েছে হৃদয়ের মধ্যে। একটু ধীর হতে হবে। বাইশ গজে নয় জীবনের চলার পথে। এই সাফল্য ধরে রাখতে তার চাই স্পৃহা।
পরিশ্রম করবার মানসিকতা হারিয়ে গেলে একদিন হৃদয়ও হারিয়ে যাবেন। তেমন কোন পরিকল্পনা অন্তত হৃদয়ের থাকা উচিত নয়। অনেকটা দূর যেতে হবে। অনেককিছু জেতাতে হবে। অনেক কিছু জিতবে হবে। কেবলই তো যাত্রার শুরু।