করোনার মহামারির বিরতি থেকে ফেরার পর ওয়ানডেতে ভালো শুরু করেছে বাংলাদেশ দল।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জিতে নিয়েছিলো তারা। পরে অবশ্য টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হোয়াটওয়াশ হয় বাংলাদেশ। এই ক্ষত ভুলতে না ভুলতেই ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে নিউজিল্যান্ডে পাড়ি জমায় বাংলাদেশ দল। আগামীকাল ভোর ৪ টায় প্রথম ওয়ানডে দিয়ে করোনার পর প্রথম বিদেশ সফরে মাঠে নামছে বাংলাদেশ।
যদিও বাংলাদেশ দলের নিউজিল্যান্ডকে হারানোর সুখস্মৃতি আছে; তবুও বেশ কিছু বাধা নিয়ে মাঠে নামতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। এর আগে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ১৩ ম্যাচের কোনোটিই জিততে পারেনি বাংলাদেশ। তামিম ইকবালের দলের জন্য এই বাধাটাই হবে সবচেয়ে বড় বাধা।
বাংলাদেশের কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো বলেছেন, তিনি এই সিরিজে বাংলাদেশের জয়ের পক্ষে বেশ ভালো সুযোগ দেখছেন। এছাড়াও টাইগার অধিনায়ক তামিম ইকবালও ম্যাচ জেতার জন্য বেশ আত্মবিশ্বাসী। এছাড়াও তামিম জানান, দল ম্যাচ জেতার জন্য বেশ প্রস্তুত।
তবে এই সিরিজে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ভালো করতে গেলে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ পার করতে হবে বাংলাদেশ দলকে।
বড় রান করার চ্যালেঞ্জ
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের হারার অন্যতম কারণ হলো নিয়মিত ৩০০-এর উপরে রান করতে না পারা। আর বাংলাদেশ এমন দল হয়ে উঠতে পারেনি যে তারা নিয়মিত স্কোর বোর্ডে নিয়মিত ৩০০-এর উপরে রান করবে। এর জন্য গত বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশ দলকে বেশ সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়।
তবে নিউজিল্যান্ডের মাঠ গুলো অন্যান্য সব মাঠের তুলনায় একটু ছোটো। এই কারণে এই মাঠে রান করা একটু সুবিধাজনক। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ছোটো মাঠের সুবিধা নিয়ে যদি ৩২০-এর বেশি রান করতে না পারার কারণে বাংলাদেশ দলকে হারতে হয়েছে। এইবার যদি এই সমস্যা থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব হয় তাহলে বাংলাদেশের পক্ষে জয় পাওয়াটা বেশ সহজ হয়ে উঠবে।
এই বিষয়ে তামিম ইকবাল বলছিলেন, ‘নিউজিল্যান্ডে প্রথম ১০-১৫ ওভার বেশ চ্যালেঞ্জিং। এই সময়ে উইকেটে টিকে থাকাটা বেশ কষ্টকর। এই সময়ে উইকেট হারানো খুব স্বাভাবিক বিষয়। এই সময়ে বল বেশ দ্রুত এবং প্রচুর বল সুইং করে। তাই নিউজিল্যান্ডে সব দল এই সমস্যার মুখোমুখি হয়।’
নিউজিল্যান্ডে বড় রান করার জন্য ওপেনারদের বেশ ধৈর্য্য ধরে রান করতে হবে। এইখানে সবসময় মিডল অর্ডারের উপর ইনিংস গড়ে তোলার দায়িত্ব দেয়া উচিত হবেনা। নিউজিল্যান্ডের পেস বোলিং এবং সুইং সামলানো বাংলাদেশের জন্য বেশ কষ্টকর। তাদেরকে টিম সাউদি এবং ট্রেন্ট বোল্টকে সামলানোর নতুন কোনো অস্ত্র খুঁজে বের করতে হবে।
পেস বোলিং
বাংলাদেশ তাদের পেস ইউনিট নিয়ে বেশ আশাবাদী। বাংলাদেশের পেস ইউনিট সাম্প্রতিক সময়ে বেশ ভালো করছে। এর জন্য তারা আত্মবিশ্বাসী যে, নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং লাইন আপকে তারা চ্যালেঞ্জ জানাতে পারবে। কিন্তু ইতিহাস ঘেটে দেখা যায় নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশের পেসাররা কখনো ভালো করেনি।
অতীতে বাংলাদেশের পেসারদের সমস্যা ছিলো তারা নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে ঠিক জায়গায় বল ফেলতে পারেনি এবং ঠিকমত সুইং করাতে পারেনি। নিউজিল্যান্ডে এই কন্ডিশনে বাংলাদেশের পেসাররা এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। পেসাররা এই পেস বান্ধব উইকেটে পর্যাপ্ত বাউন্স দিতে পারেননি।
বাংলাদেশের পেসারদের বুঝতে হবে বাউন্স সব সময় দেয়া যাবে না। বাউন্স হলো একজন ব্যাটসম্যানকে মনযোগ নষ্ট করার একটি অস্ত্র। আর এখনকার নিয়মানুযায়ী ওভারে মাত্র একটি করে বাউন্স দেয়া যায়।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ শুরু আগে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ জানান, ‘পেসারদের মানসিকভাবে ঠিক থাকতে হবে। এখানে বল করার জন্য লাইন এবং লেন্থ খুবই গুরুত্বপূর্ন। কারণ একটি বলের লাইন লেন্থ ভূল হলে বল সীমানার বাইরে পাঠাতে পিছপা হবে না নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা। যাতে তারা সহজে বাউন্ডারি মারতে না পারে এর জন্য আমাদেরকে ঠিক মত লাইন লেন্থে বল করতে হবে।’
স্পিন নির্ভরতা
বাংলাদেশের স্পিনাররা ঘরের মাঠের মত নিউজিল্যান্ডে গিয়ে নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের খুব কার্যকরী হতে পারবে না। এই ধরনের পিচে স্পিনারদের ভূমিকা নেই বললেই চলে। তবে সাকিব আল হাসান দলের সাথে থাকলে স্পিন কিছুটা কার্যকর হতে পারতো। কিন্তু এখানে সাকিবের পরিবর্তে যে খেলবে তাকে বেশ দায়িত্ব নিয়ে বোলিং করতে হবে। প্রচুর বৈচিত্র নিয়ে বোলিং করতে হবে যাতে কিউই ব্যাটসম্যানরা সুবিধা করতে না পারে।
এই বিষয়ে মেহেদি হাসান মিরাজ বলছিলেন তিনি এই চ্যালঞ্জগুলো নিয়ে স্পিন কোচ ড্যানিয়েল ভেট্টরির সাথে কাজ করেছেন। এই উইকেটে কিভাবে স্পিন করতে হয় সেটি নিয়েও কাজ করেছেন মেহেদি মিরাজ।
মিরাজ তাঁর কাজ সম্পর্কে বলছিলেন, ‘ভেট্টোরি আমাকে বলেছেন এখানে প্রধান অস্ত্র হবে স্পিন বোলিংয়ে বৈচিত্র নিয়ে বল করতে হবে। এই ধরনের উইকেটে স্পিনারদের প্রধান অস্ত্র হলো বোলিংয়ে বৈচিত্র। প্রতি এক-দুই বল পর পর বৈচিত্র আনতে হবে এবং এর সাথে বলের লাইন লেন্থ ঠিক রাখতে হবে। এইভাবে করতে পারলে উইকেট পাওয়া সহজ হবে।’