‘তোকে আবার সেখানেই মারবো’

ক্রিকেট মাঠে গণ্ডগোল কত ঘটেনি। তবে আমির সোহেল ও ভেঙ্কটেশ প্রসাদের ব্যাপারটা যেন ইতিহাস হয়ে আছে।

১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ভারত-পাকিস্তানের ম্যাচে আমির সোহেল ও ভেঙ্কটেশ প্রসাদের বাকবিতণ্ডা বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলো। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের বিতর্কিত অধ্যায়ের স্মৃতিচারণা করলে আজো সেই ব্যাঙ্গালুরুর ঘটনার প্রসঙ্গ আসে।

ভারতের দেওয়া ২৮৮ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে আমির সোহেলের ব্যাটে ভালো শুরু পায় পাকিস্তান। ১৫ তম ওভারে ভারতীয় পেসার ভেঙ্কটেশ প্রসাদকে একটি বাউন্ডারি মেরে তিনি প্রসাদকে আঙুল দিয়ে বল যেদিকে মেরেছেন ইশারা করে স্লেজিং করেন। টেলিভিশন পর্দায় সেটা ধরা পরে, ইউটিউবে আজো সেই ঘটনার ভিডিও পাওয়া যায়।

সময়ের অন্যতম সেরা স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিনের সাথে ইউটিউব শোতে প্রসাদ বলেন তাদের মধ্যে সেদিন এমন কিছু শব্দ আদান প্রদান হয়েছে যেটা কখনোই সাবেক পাকিস্তানি অধিনায়ক গ্রহণ করতে পারবেন না।

প্রসাদ বলেন, ‘ও (আমির সোহেল) ডাউন দ্যা উইকেটে এসে বেশ জায়গা করে নিয়ে একটি বাউন্ডারি মারলো, সে তার ব্যাট দিয়ে যেদিকে বাউন্ডারি মারলো সেদিকে ইঙ্গিত করলো। ও স্বীকার করেনি তবে বলেছিল এবং আমি শুনেছিলাম। আমার খুব কাছাকাছি ছিলাম, আমি আমার ফলো থ্রু শেষ করে যেতেই সে আমাকে বলে, তুঝে ফির ওহি মারুঙ্গা (তোকে আবার ওইখানেই মারবো)। আমি তাকে এটা বলতে শুনার পর তাকে কিছু বলেছিলাম এবং চলে এসেছিলাম।’

অবশ্য আমির সোহেলের সেই চ্যালেঞ্জের জবাব পরের বলেই দেন প্রসাদ। স্লেজিং করার পরের বলেই আমির সোহেলের অফ স্টাম্প উপড়ে দিয়ে বোল্ড করেন প্রসাদ। সেই মূহুর্তটা কোনো ক্রিকেট ভক্তরাই ভুলতে পারবেন না। প্রসাদের সেই উল্লাস আর আমির সোহেলের মাঠ থেকে বেড়িয়ে যাবার দৃশ্য টা আজও ক্রিকেট ভক্তদের মনে গেঁথে আছে।

সেই সময় আমিরকে আউট করে প্রসাদ যে ইঙ্গিত করেছিলেন, সে সম্পর্কে বলছিলেন, ‘আমাকে হয়তো ওই আচরণের জন্য শাস্তি পেতে হতে পারতো। কারণ ১৯৯৬ বিশ্বকাপে আইসিসির কোড অব কন্টাক্ট ছিলো। ফলে আমি সতর্ক ছিলো। আর শেপার্ড ছিলো আম্পায়ার। ফলে আজহার, শ্রীনাথ, শচীন সবাই আমাকে রক্ষা করতে এসেছিলো। নইলে আমাকে হয়তো শাস্তি পেতে হতো।’

সব মিলিয়ে প্রসাদ সেদিন ১০ ওভারে ৪৫ রানের বিনিময়ে তিন উইকেট শিকার করেন। আমির সোহেল ছাড়াও প্রসাদ সেদিন ইজাজ আহমেদ এবং ইনজামাম উল হকের উইকেট শিকার করেন।

প্রথমে ব্যাট করে ভারত সেই ম্যাচে ৮ উইকেটে ২৮৭ রান সংগ্রহ করে৷ ওপেনার নভজ্যোৎ সিং সিধু ৯৩ বলে ১১৫ রানের দূর্দান্ত এক ইনিংস খেলেন। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৯ উইকেটে ২৪৮ রান করতে সক্ষম হয় পাকিস্তান। পাকিস্তান সেই ম্যাচে পরাজিত হয় ৩৯ রানে। সিধু তাঁর দূর্দান্ত ইনিংসের জন্য ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন।

যদিও, ইডেন গার্ডেন্সে সেবার সেমিফাইনালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ভয়াবহ ব্যাটিং বিপদের মুখে পড়ে ভারত। শেষ অবধি ম্যাচটা দর্শকদের উগ্রতায় শেষ করা যায়নি। ম্যাচ অফিসিয়ালরা শ্রীলঙ্কাকে বিজয়ী ঘোষণা করে। ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে প্রথমবারের মত বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দে ভাসে অর্জুনা রানাতুঙ্গার শ্রীলঙ্কা দল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link