আইসিসির ‘তেল মাথায় তেল দেওয়া’র নীতি!

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে টেস্ট ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত স্বয়ং আইসিসি প্রধান। এবার দুনিয়াজুড়ে ক্রিকেটের প্রসার নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্বল্পোন্নত ক্রিকেটীয় দেশগুলোর পরিচালকদের কেউ কেউ। বর্তমানে আইসিসির সহযোগী দেশের সংখ্যা ৯৪। আগামী ৪ বছরে সংস্থাটির লাভ্যাংশের ১১ শতাংশের সামান্য বেশি অর্থ পাবে দেশগুলো।

গেল মাসে আইসিসির রাজস্ব-বণ্টন মডেল প্রকাশ করেছিল ক্রিকেট ভিত্তিক ওয়েবসাইট ক্রিকইনফো। প্রতিবেদনে দেখা যায় আইসিসির মোট আয়ের ৩৮ দশমিক ৫ শতাংশ পাবে ভারত৷ সব মিলিয়ে ১২ পূর্ণ সদস্য দেশের অ্যাকাউন্টে যোগ হবে মোট আয়ের প্রায় ৮৯ শতাংশ।

আইসিসি থেকে এখনও এ বিষয়ে জানানো হয়নি কিছু। তবে ক্রিকেট বিষয়ক গণমাধ্যম ক্রিকইনফোর আরেকটি প্রতিবেদন বলছে, চলতি মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বোর্ড সভায় পাশ হতে পারে এই মডেল।

এদিকে আইসিসি এমন পরিকল্পনা বাস্তবরূপ দিলে ঝুঁকিতে পড়বে ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ। ভারতীয় গণমাধ্যমের সাথে আলাপকালে স্বল্পোন্নত এক দেশের কর্মকর্তা মনে করেন এমনটি।

সাক্ষাৎকারে সেই কর্তা বলেছেন, ‘নির্মম বাস্তবতা হচ্ছে, ক্রিকেট বিশ্বে এখন খেলাটি যে অবস্থানে আছে সেখান থেকে প্রসারিত হবে না। যদি এর বৈশ্বিক তহবিল সত্যিকার অর্থেই প্রসারের লক্ষ্যে সমানভাবে বরাদ্দ না করা হয়।’

আইসিসির এই মডেল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) প্রধান নাজাম শেঠি। রয়র্টাসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘নীতিগতভাবে, ভারতের বেশি পাওয়া উচিত, এতে কোন সন্দেহ নেই কিন্তু কিভাবে এই ভাগটা করা হয়?’

চাকচিক্যের যুগে বিভিন্ন লিগ মাতিয়ে অর্থ উপার্জনের বড় সুযোগ ক্রিকেটারদের সামনে৷ আইপিএল, বিগব্যাশ ঘনিয়ে এলেই প্রশ্ন ওঠে ‘দেশ আগে নাকি অর্থ?’ দায়িত্বের বেড়াজালে ইচ্ছাশক্তির বাইরে গিয়ে জাতীয় দলের হয়ে মাঠে থাকেন অনেকে ৷ তবে স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করতে না পারলে একটা সময় ক্রিকেট হারিয়ে যেতে পারে ঐ দেশগুলো থেকে ৷

বছর কয়েক আগেও বাংলাদেশের সিরিজ মানেই যেন প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে। পরাশক্তি হতে গিয়ে দলটি বর্তমানে নিজেদের পুরোনো ঐতিহ্য খুঁজছে ৷ মূলত অর্থের অভাবে এমন অবস্থায় পড়েছে তাঁরা। এছাড়াও যুদ্ধ বাঁধা কাটিয়ে বাইশ গজে লড়াই করছে আফগানিস্তান। অথচ পূর্ণ সদস্য দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম আয় করবে আফগানরা।

‘তেলা মাথায় তেল দেওয়া’ – এই রোগ মনুষ্য জাতির জন্য হয়ে দাঁড়িয়েছে ঐতিহ্যগত ৷ আয়ের বণ্টনে সমস্যায় থাকা দেশগুলো উপকৃত না হলে ক্রিকেট থেমে থাকবে একটি জায়গাতেই ৷ ক্রিকেটকে কোন পথে যাবে তা নির্ভর করছে অভিভাবক সংস্থা আইসিসির ওপরেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link