ক্রিকেটের অধিনায়কের গুরুত্বটা বরাবরই বেশি। সাফল্যটা দলের সবার সাথে ভাগাভাগি করে হলেও ব্যর্থতার প্রথম দায়ভারটা নিতে হয় অধিনায়ককেই। আর খেলার দৈর্ঘ্য যত ছোট হয়ে আসে অধিনায়কের দায়িত্বটা আরও বেড়ে যায়। বিশেষ করে টি- টোয়েন্টিতে অধিনায়কের ছোটখাটো সিদ্ধান্ত গড়ে দিতে পারে ম্যাচের ফলাফল।
অধিনায়করা বরাবরই নিজের দেশের অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিবেচিত হন। ফলশ্রুতিতে তাদের আয়ও অন্য ক্রিকেটারদের থেকে বেশি। আসুন দেখে নেয়া যাক আসন্ন টি- টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আট অধিনায়কের কার আয় কেমন।
- অ্যারন ফিঞ্চ- ৬৩.৭ কোটি রুপি
অস্ট্রেলিয়ার ট্রফি ক্যাবিনেটে সব ট্রফি থাকলেও ছিল না কেবল টি- টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ট্রফি। গত বছর তাদের সেই আক্ষেপ দূর করেছেন অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ। এক দশকের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অজিদের এনে দিয়েছেন টি- টোয়েন্টিতে বিশ্বসেরার খেতাব। ওপেনিং এ নেমে দলকে দুর্দান্ত শুরু এনে দিতে ফিঞ্চের জুড়ি মেলা ভার।
মাঠে ফিঞ্চের সরব উপস্থিতি তাকে পরিণত করেছে অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বে। ৩৫ বছর বয়সী ফিঞ্চের সাথে চুক্তি রয়েছে গ্রে নিকোলস, পুমা, অ্যাসিকস, ক্যালাওয়ে গলফ, সনি প্লেস্টেশনের মতো ব্র্যান্ডগুলোর। জাতীয় দলের চুক্তি ছাড়াও আইপিএল এবং বিগ ব্যাশেও তাকে চড়া অংকের চুক্তিতেই দল ভিড়িয়েছে দলগুলো। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার হিসেব মতে ফিঞ্চের বাৎসরিক আয় আট মিলিয়ন ডলার, ভারতীয় রুপিতে যা দাঁড়ায় প্রায় ৬৩.৭ কোটি রুপি।
- বাবর আজম- ৩১.৮ কোটি রুপি
গত কয়েক বছর ধরেই পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইন আপের মূল তারকা হয়ে উঠেছেন বাবর আজম। তিন ফরম্যাটের ক্রিকেটের রীতিমতো রানের বন্যা বইয়ে দিয়েছেন। গত টি -টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক বাবর চাইবেন এবারের বিশ্বকাপেও ফর্মটা ধরে রাখতে।
২৭ বছর বয়সী বাবর পাকিস্তান ক্রিকেটের সর্বোচ্চ আয়কারী ক্রিকেটারদের একজন। পাকিস্তানে ওপো, হুয়াওয়ে, ফ্রি ফায়ার, গ্রে নিকোলসের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর বাবর বাৎসরিক আয় করেন প্রায় ৪ মিলিয়ন ডলার, ভারতীয় রুপিতে যার মূল্যমান প্রায় ৩১.৮ কোটি রুপি। এছাড়া পিএসএলের দল করাচি কিংস থেকে বাবর আয় করেন ১.২৫ কোটি রুপি।
- কেন উইলিয়ামসন – ৫১.৮ কোটি রুপি
নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট তো বটেই বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান কেন উইলিয়ামসন। কিউইদের বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা জেতানোর পাশাপাশি ওডিয়াই এবং টি- টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে নিয়ে গিয়েছেন ধ্রুপদী এই ব্যাটসম্যান।
বরাবরই ঠাণ্ডা মেজাজের কেন ইতোমধ্যেই বিশ্বজুড়ে অনুকরণীয় এক ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন। পাওয়ারএড, রকিড, নিকোলসন অটো, অ্যাসিক্স, হোল্ডেন কলোরাডোর মতো ব্র্যান্ডের সাথে চুক্তি রয়েছে উইলিয়ামসনের। এছাড়া আইপিএলে তার দল সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ থেকে প্রতি মৌসুমে পান ১৪ কোটি রুপি। সব মিলিয়ে ব্ল্যাক ক্ল্যাপস অধিনায়কের বাৎসরিক আয় প্রায় ছয় মিলিয়ন ডলার, ভারতীয় রুপিতে যা গিয়ে দাঁড়ায় ৫১.৮ কোটি রুপিতে।
- জস বাটলার – ৭৯.৭ কোটি রুপি
সীমিত ওভারের ক্রিকেটের অন্যতম বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান জস বাটলার। ইয়ন মরগ্যানের অবসরের পর সাদা বলের ক্রিকেটে অধিনায়কের দায়িত্বটা তার কাঁধেই তুলে দিয়েছে ইংল্যান্ড। বাটলারের বাৎসরিক আয় প্রায় ১০ মিলিয়ন ডলার, ভারতীয় রুপিতে প্রায় ৭৯.৭ কোটি। মূলত বিশ্বজুড়ে ফ্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট এবং ব্র্যান্ডগুলোর সাথে চুক্তিই বাটলারের আয়ের উৎস।
আইপিএলের দল রাজস্থান রয়্যালস থেকে অরতি মৌসুমে তার আয় প্রায় ১০ কোটি রুপি। এছাড়া কোকাবুরা, ভিটালিটি, ক্যাস্ট্রো, ওপো, ড্রিম ১১ এর মত কোম্পানির সাথে চুক্তি রয়েছে বাটলারের।
- সাকিব আল হাসান – ১৭৫ কোটি রুপি
গত মাসেই টি- টোয়েন্টি ফরম্যাটে বাংলাদেশের অধিনায়ক নির্বাচিত হয়েছেন সাকিব আল হাসান। টি- টোয়েন্টি ইতিহাসের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী সাকিবের কাঁধেই আরও একবার বর্তেছে বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নেবার ভার।
কোনো সন্দেহ ছাড়াই বিশ্বক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম সুপারস্টার সাকিব আল হাসান। ৩৫ বছর বয়সী সাকিব বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিকেটারও বটে। ব্লুচিজ আউটফিটার্স, ওপো, লেনোভো, পেপসি, ক্যাস্ট্রোল, লাইফবয়ের মতো ব্র্যান্ডের সাথে চুক্তি রয়েছে সাকিবের। সাকিবের বাৎসরিক আয় আনুমানিক ২২ মিলিয়ন ডলার, ভারতীয় রুপিতে প্রায় ১৭৫ কোটি রুপি। এছাড়া রেস্টুরেন্টসহ নানা ব্যবসায় অংশীদারিত্ব রয়েছে সাকিবের।
- মোহাম্মদ নবি – ৯.৫৬ কোটি রুপি
বিগত কয়েক বছর আফগানিস্তানের অধিনায়কের চেয়ার বেশ কয়েকবারই পরিবর্তন হয়েছে। গুলবাদিন নাইব, আসগর আফগান, রশিদ খান হয়ে এবারের বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের অধিনায়কের দায়িত্বটা এসে বর্তেছে পুরনো সেনানী মোহাম্মদ নবির কাঁধে।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে ফ্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের নিয়মিত মুখ মোহাম্মদ নবি। ক্রিকেট বোর্ডের কেন্দ্রীয় চুক্তি ছাড়াও এসব টুর্নামেন্ট থেকে বড় অংকের অর্থ আয় করেন নবী। ৩৭ বছর বয়সী নবী আফগানিস্তানে ভীষণ জনপ্রিয় এবং আজিজি ব্যাংক ও ইতিসালাতের মত প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি রয়েছে তার। মোহাম্মদ নবীর বাৎসরিক আয় ১.২ মিলিয়ন ডলার, ভারতীয় রুপিতে যার মূল্যমান ৯.৫৬ কোটি রুপি।
- টেম্বা বাভুমা – ৩৯.৮ কোটি রুপি
হাশিম আমলা, এবি ডি ভিলিয়ার্স, জেপি ডুমিনি, ডেল স্টেইনদের বিদায়ের পর দক্ষিণ আফ্রিকা যখন তাদের ইতিহাসের ক্রান্তিকাল পার করছিল, ঠিক তখন অধিনায়কের দায়িত্ব পান টেম্বা বাভুমা। বাভুমাই প্রোটিয়াদের ইতিহাসের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ অধিনায়ক। এবারের বিশ্বকাপেও তার দিকে চেয়ে থাকবে পুরো দক্ষিণ আফ্রিকাবাসী।
বাভুমার আয়ের বেশিরভাগই আসে ক্রিকেট বোর্ড এবং ঘরোয়া ক্রিকেটের চুক্তি থেকে। এছাড়া বিখ্যাত জুতা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফুটওয়্যারের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর তিনি। বাভুমার বাৎসরিক আয় পাঁচ মিলিয়ন ডলার, ভারতীয় রুপিতে যা গিয়ে দাঁড়ায় ৩৯.৮ কোটি রুপিতে।
- রোহিত শর্মা – ১৯১ কোটি রুপি
টি-টিয়েন্টি ক্রিকেট ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান রোহিত শর্মা। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি রোহিতের ক্রিকেট মস্তিষ্কও দুর্দান্ত, আইপিএলের মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সকে শিরোপা এনে দিয়েছেন চারবার। অধিনায়কত্বের পাশাপাশি এবারের বিশ্বকাপে ভারতকে দারুণ শুরু এনে দেওয়ার দায়িত্বটা রোহিত শর্মার উপরই বর্তাবে।
রোহিত বিসিসিআইয়ের চুক্তি থেকে পান বাৎসরিক ৭ কোটি রুপি। আইপিএলে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স তাকে রিটেইন করার সুবাদে পেয়েছেন ১৬ কোটি রুপি। এছাড়া অ্যাডিডাস, ম্যাগি, নিসান, লেইস, ওপো, অ্যারিস্টোক্রাট, গ্লেনমার্ক, হাবলট, হাইল্যান্ডার্সের মতো প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি রয়েছে রোহিতের। সবমিলিয়ে তার বাৎসরিক আয় ২৪ মিলিয়ন ডলার, ভারতীয় রুপিতে যার মূল্যমান প্রায় ১৯১ কোটি রুপি।