আর্শদ্বীপ প্রথমবারের মত লাইমলাইটে এসেছিলেন ২০১৯ সালের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) মাধ্যমে। তবে এই মুহুর্তে আর্শদ্বীপকে এক কথায় সহজ পরিচয় এশিয়া কাপে ক্যাচ মিস করে ম্যাচ মিস করা ভারতীয় খলনায়ক বনে যাওয়া সেই ফিল্ডার তিনি।
সুপার ফোরের খেলায় ভারত-পাকিস্তানের ম্যাচে রবি বিষ্ণয়ের বলে আসিফ আলীর সহজ ক্যাচটি হাতছাড়া করার পর গোটা ভারতের তোপের মুখে পড়েন এই ক্রিকেটার। আর্শদ্বীপ নিজেও সম্ভবত দলের ভাগ্য পোড়ানোর দায় মাথায় নিয়ে গোটা এশিয়া কাপের স্মৃতিটাই জীবন থেকে মুছে ফেলতে চাইবেন ওই একটা ঘটনার জন্য।
এশিয়া কাপের পরপর ভারতের অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি–টোয়েন্টি সিরিজটিতে ম্যানেজমেন্ট তাঁকে বিশ্রামে রেখেছিল। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টি–টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচটির মাধ্যমে দলে ফিরেছেন আর্শদ্বীপ। এসেই যেন আত্মগ্লানিটা ভুলতে চাইলেন এবং সবার কাছে খলনায়কের তকমাটা ঘুচাতে চাইলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বাঘা বাঘা খেলোয়াড় রাইলি রুশো, কুইন্টন ডি কক ও ডেভিড মিলারকে একাই সাজঘরে ফিরিয়েছেন এই পেসার।
৩২ রান খরচ করে তিন উইকেট নিয়ে হয়েছেন ম্যাচ সেরা খেলোয়াড়। এবার আর্শদ্বীপ যেন তাঁর গল্পটা এভাবে লিখলেন, ‘এলেন, খেললেন এবং মন জয় করলেন।’
আসলেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচের পর তিনি ভক্তদের মনে নতুন করে জায়গা করে নিয়েছেন। এদিকে তাঁর প্রশংসায় ভাসছেন সাবেক ক্রিকেটাররাও। এই তালিকায় আছেন পাকিস্তানের সাবেক উইকেটরক্ষক-ব্যাটার কামরান আকমলও। আর্শদীপের পারফরম্যান্সে মুগ্ধ আকমল তাঁকে ভারতের সাবেক বাঁ-হাতি পেস আইকন জহির খানের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
আকমল তাঁর ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করা একটি ভিডিওতে বলেছেন, ‘আর্শদ্বীপ সিং একজন অবিশ্বাস্য বোলার। আমি মনে করি ভারত তাদের দলে নতুন জহির খানকে খুঁজে পেয়েছে।’
তিনি ব্যাখ্যা করেন, ‘অর্শদীপের পেস এবং সুইং দুটোই আছে, এবং তাঁর বোলিং বুদ্ধি আছে। সে মানসিকভাবে শক্তিশালী। সে তাঁর ক্ষমতা জানে এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী সেগুলি ব্যবহার করতে পারে।’ আকমল আরও যোগ করেছেন যে তরুণ হওয়া সত্ত্বেও,অর্শদীপের বোলিং বুদ্ধিমত্তা এবং পরিপক্কতা রয়েছে, যা ভারতীয় দলের জন্য একটি বাড়তি পাওনা।
উইকেট প্রসঙ্গে কামরান আকমল বলেন, ‘আর্শদ্বীপ প্রথমে রাইলি রুশোকে ক্যাচ-বিহাইন্ড করেন এবং তারপরে ডি কককে দিয়ে ক্যাচ তুলিয়েছিল। কিন্তু তাঁর সেরা উইকেটটি ছিল ডেভিড মিলারের। কারণ তাঁকে আউট করার জন্য একটি ধারালো ইনসুইঙ্গার বল করার আগের ডেলিভারিগুলোতে বলটিকে কিছুটা দূরে সরিয়ে পাঠাতে থাকলো। সে দুর্দান্ত বোলিং করেন এবং বেশ পরিপক্ক। তাঁর গতি আছে এবং এখনও সে তরুণ। এটা ভারতীয় দলের জন্য একটি ভাল লক্ষণ। কারণ জহির খানের পরবর্তী যুগে তাদের একজন বাঁ-হাতি পেসারের প্রয়োজন ছিল।’
আইপিএলের মঞ্চেই পাঞ্জাব কিংসের হয়ে আর্শদ্বীপ ডেথ ওভারে সেরা বোলারদের একজন হয়ে উঠেছিল। পাওয়ারপ্লে ও ডেথ ওভার দুটোতেই ভালো বল করতে পারেন এই বাঁ-হাতি পেসার। আর্শদ্বীপ কতোটা শক্তিশালী বোলার সেই বিষয় বোঝাতে তাঁর কোচ রাই একবার বলেছিলেন, আর্শদ্বীপ ওভারের ছয়টি বলই ভিন্নতার সাথে ভাবতে ও করতে পারে।
এই সিরিজ শেষে আর্শদ্বীপের জন্য টি- টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মঞ্চ অপেক্ষা করছে। আসন্ন আসরে অস্ট্রেলিয়ায় আর্শদ্বীপকে দেখা যাবে ভুবনেশ্বর কুমার, হার্শাল প্যাটেলদের পাশাপাশি ভারতের পেস আক্রমণের প্রতিনিধিত্ব করতে। সেখানেও জহির খানের এই উত্তরসূরী কিভাবে নিজের গল্পটা লিখবেন, তা দেখতে মুখিয়ে থাকবে গোটা ক্রিকেটবিশ্ব।