ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এই সিরিজে ভারত একের পর এক নতুন তারকাকে মাঠে নামার সুযোগ দিচ্ছে। আর প্রত্যেকেই জ্বলে উঠছেন। ইশান কিষানের পর এবার জ্বলে উঠলেন সূর্যকুমার যাদব। নিজের দ্বিতীয় ম্যাচে এসে প্রথম ব্যাটিং করার সুযোগ পেয়েই ফিফটি করলেন এবং দলকে জেতালেন।
‘টস জয় ম্যাচ জয়’ – রীতিতে অবশেষে পরিবর্তন এলো। সিরিজের চতুর্থ টি-টোয়েন্টিতে ইংলিশ অধিনায়ক ইয়ন মরগান টসে জিতলেও ম্যাচ শেষে জয়ের হাসির রেখাটা ছিলো বিরাটের মুখেই! ইংলিশদের শেষ মূহুর্তের নাটকের পর ৮ রানে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজে সমতায় ফিরলো ভারত।
এদিনও টস ভাগ্য সহায় হয়নি বিরাটের! টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের প্রথম বলেই আদিল রশিদের বলে ছক্কা হাঁকান রোহিত শর্মা।
প্রথম ভারতীয় হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে ইনিংসের প্রথম বলে ছক্কা হাঁকানোর কৃর্তী গড়েন তিনি। ওপেনিং জুটিতে আসে ২১ রান, রোহিত শর্মাকে ফিরিয়ে ভারতীয় ইনিংসের প্রথম আঘাত হানেন জোফরা আর্চার! অভিষেক ম্যাচে ব্যাটিং না পেলেও অভিষেকের পর দ্বিতীয় ম্যাচে সুযোগ পেয়েই সূর্যকুমার করলেন বাজিমাত। ব্যাট করতে নেমেই নিজের প্রথম বলেই জোফরা আর্চারকে মারেন ছক্কা! তার দাপুটে ব্যাটিংয়ে ঝড় ওঠে মোতেরার মাটিতে। তবে বরাবরের মতো এদিনও ব্যর্থ লোকেশ রাহুল, আগের চার ইনিংসে ১ রান করলেও আজকে অবশ্য পেরিয়েছেন দুই অঙ্কের কোটা! ১৭ বল খেলে ১৪ রান করে ফিরেন তিনিও।
তৃতীয় উইকেট টা টিকলো বেশিদূর! মাত্র ১ রান করেই ফেরত যান অধিনায়ক বিরাট কোহলি। আগের ম্যাচের হিরো এই ম্যাচে ফিরলেন ব্যর্থতার খাতায় নাম লিখিয়ে। ম্যাচে অবশ্য একপ্রান্তে তখনো সূর্য ঝড় চলছে! তার সাথে যুক্ত হন রিশাব পান্ট।
এক প্রান্তে উইকেট পড়লে রানের চাকা সচল রাখেন সূর্যকুমার। তুলে নেন ক্যারিয়ারের মেইডেন ফিফটি। দলীয় ১১০ রান বিতর্কিত সিদ্ধান্তে মালানকে ক্যাচ দিয়ে ৩১ বলে ৬ চার ও ৩ ছয়ে ৫৭ রানে আউট হন সূর্যকুমার। স্পষ্ট, ক্যাচ ড্রপের ছায়া দেখা গেলেও ফিল্ড আম্পায়ারের সফট সিগন্যাল আউটের সাথে সম্মতি দিয়ে তৃতীয় আম্পায়ারও সূর্যকে আউট দেন! এ নিয়ে অবশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যপক সমালোচনার ঝড় তুলেছে ভারতীয় ক্রিকেট ভক্তরা।
১১০ রানে ৪ উইকেট, হাতে ৬ উইকেট আর ইনিংসের বাকি ৪০ বল। ব্যাট হাতে ঝড় তুলেন পান্ট-আইয়াররা। শেষ দিকে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পড়লেও পান্টের ২৩ বলে ৪ চারে ৩০ ও আইয়ারের ১৮ বলে ৩৭ রানের ঝড়ো ইনিংসে নির্ধারি ২০ ওভার শেষে ৮ উইকেটে ১৮৫ রানের বড় সংগ্রহ গড়ে ভারত। জোফরা আর্চার ৪ ওভারে ৩৩ রানে নেন সর্বোচ্চ ৪ উইকেট!
জবাবে বিশাল লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে শুরুতেই বিদায় নেন জস বাটলার। আগের ম্যাচে তার ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ইংলিশরা জয় পেলেও এদিন বিরাটের মতো তিনিও নাম লিখান ব্যর্থতার খাতায়। দলীয় ১৫ ও ব্যক্তিগত ৯ রানে ফিরেন বাটলার। তবে আগের দিনের ব্যর্থ হওয়া জেসন রয় এদিন ঝড় তুলে মোতেরায়! দ্বিতীয় উইকেটে মালানকে সাথে নিয়ে জুটি গড়েন ৪৫ রানের। মালান ১৭ বলে ১৪ রানের ধীর গতির ইনিংস খেলে বিদায় নিলে যুক্ত হন জনি বেয়ারস্টো। পরের ওভারেই ২৭ বলে ৪০ রান করে বিদায় নেন জেসন রয়ও! ৬৬ রানেই নেই তিন উইকেট।
চাপের মুখে ব্যাট করতে নামে বেন স্টোকস। চতুর্থ উইকেটে দু’জনের ৬৫ রানের জুটি আবারো জয়ের স্বপ্ন দেখায় ইংলিশদের। তবে আবারো তা ক্ষীন হয়ে যায় মাত্র ৯ রানের মাথায় বেয়ারস্টো, স্টোকস ও মরগানের উইকেটে। ১৩১ রানে বেয়ারস্টো, ১৪০ রানে পর পর দুই বলে স্টোকস ও মরগান ফিরলেও জয়ের স্বপ্ন অনেকটাই শেষ হয়ে যায় ইংলিশদের। স্টোকস ৪ চার ও ৩ ছয়ে ২৩ বলে করেন ৪৬ রান। স্টোকস-মরগানদের বিদায়ে বাকি ইনিংসটা যেনো নিছক হারের অপেক্ষা! স্যাম কুরানও বিদায় নেন কিছু সময় পর।
শেষ ওভারে প্রয়োজন ২৩ রান, উইকেটে জর্ডান-আর্চার। প্রথম বলেই সিংগেল নেন জর্ডান। ৫ বলে ২২ রান, স্ট্রাইক প্রান্তে আর্চার। দ্বিতীয় বলে চার আর তৃতীয় বলেই মারলেন ছক্কা! মূহুর্তেই পাল্টে গেলো ম্যাচের চিত্র। ৩ বলে দরকার ১২ রান। বেশ দূর্ভেদ্য, বেশ দুস্কর! শার্দুল ঠাকুরের লাইন লেন্থের ভুলে পর পর দু’বলেই ওয়াইড! ৩ বলে দরকার ১০ রান। তখন চিন্তার রেখা বিরাটের কপালে, টেনশনে ঠাকুরও! পরের বলে আর্চারের সিংগেল নেওয়ার সাথে সাথে যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলেন শার্দূল ঠাকুর। শেষ ২ বলে দরকার ছিলো ৯ রান, পঞ্চম বলে জর্ডানের উইকেট আর শেষ বল ডট! নাটকীয়তার জন্ম দিয়েও শেষ পর্যন্ত ৮ রানে জিতে নিলো ভারত।