টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সপ্তম আসর প্রায় শেষের দিকে। নিজেদের ধারাবাহিক জয়ে ইতোমধ্যে সেমিফাইনালের টিকেট নিশ্চিত করে ফেলেছে পাকিস্তান। তবে তাঁদের সতীর্থ হয়ে গ্রুপ-২ থেকে কোন দল যাবে তা নিয়ে রয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা এবং সমীকরণে সূক্ষ্ম মারপ্যাঁচ। নিউজিল্যান্ড, ভারত এবং আফগানিস্তান রয়েছে দ্বিতীয় দল হিসেবে সেমিফাইনালে যাবার দৌড়ে।
নিউজিল্যান্ড, ভারত ও আফগানিস্তান গ্রুপে যথাক্রমে এদের অবস্থান দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ। তবে এই তিন দলই সেমিফাইনালের যাবার স্বপ্নে বিভোর। আফগানিস্তানের সামনে রয়েছে সূবর্ণ সুযোগ প্রথমবারের মতো আইসিসির বৈশ্বিক কোন টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে যাবার সুযোগ। অন্যদিকে নিউজিল্যান্ডের হাতে রয়েছে সবচেয়ে সহজ সুযোগ।
ম্যাচ জয়ে মিলবে সেমিফানালের রুপালি টিকেট। কিন্তু একটা জায়গায় এসে সমীকরণ একটু জটিল হয়ে যায়। আর সেটা ভারতের সেমিফাইনাল সমীকরণ। ভারত নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচে যথাক্রমে হেরেছে পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে।
এতেই যেন সরল সমীকরণ ধারণ করেছে জটিল রুপ। ভারত, আফগানিস্তান ও নিউজিল্যান্ড এই তিন দলের ম্যাচ বাকি রয়েছে একটি করে। তবে নিজেদের শেষ ম্যাচ আফগানিস্তান ও নিউজিল্যান্ড মুখোমুখি হচ্ছে বলেই হয়ত ভারতকে থাকতে হচ্ছে বাড়তি টেনশনে।
সেমিফাইলের সমীকরণ নিয়ে ভারতীয় অলরাউন্ডার রবিন্দ্র জাদেজাকে প্রশ্ন করা হয় যে আফগানিস্তান যদি নিউজিল্যান্ডকে হারাতে না পারে তবে কি করবেন আপনারা? এমন প্রশ্নের জবাবে জাদেজা বলেন, ‘আমরা ব্যাগ গুছিয়ে বাড়ি চলে যাবো, আর কি!’ বিষয়টা ঠিক এভাবেও চিন্তা করলে পানির ন্যায় সরল।
তবে বেশকিছু যদি কিন্তু থেকে যায় ঘটনাটা যদি ঠিক তেমন না ঘটে। তাঁর আগে চলুন গ্রুপ-২ এর পয়েন্ট টেবিল থেকে একটু ঢু মেরে আসা যাক। যথারীতি পূর্ণ আট পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে রয়েছে পাকিস্তান ও চারটি ম্যাচ হেরে টেবিলের তলানিতে অবস্থান করছে স্কটল্যান্ড। স্কটিশদের হারিয়ে একটি মাত্র জয় নিয়ে নবাগত নামিবিয়ার পয়েন্ট দুই এবং অবস্থান পঞ্চম। সেমিফাইনালের হিসেব-নিকেশ থেকে এই তিন দল বাদ।
রইলো বাকি তিন দল। আফগানিস্তান এবং ভারতের পয়েন্ট সমান চার। কিন্তু রানরেটে এগিয়ে থেকে ভারতের অবস্থান তৃতীয় ও আফগানিস্তানের চতুর্থ। আর তিন ম্যাচ জিতে নিউজিল্যান্ড রয়েছে ছয় পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় পজিশনে।
এখন ভারতের সেমিফাইনালে যাবার রাস্তায় শর্ত মোটে দুইটা ভারতকে জিততে হবে হারতে হবে নিউজিল্যান্ডকে। অতীব সহজ! কিন্তু না। ঝামেলা হতে পারে আফগানিস্তানের বিশাল জয়। অসম্ভব কিছু না। ক্রিকেটে ছোটদল বড় দল বলতে কিছু নেই। নিজেদের দিনে যেকোন দলই ভয়ংকর ক্ষুধার্ত বাঘের মতো ভয়ংকর এবং হিংস্র।
অনেকের মনে হতে আফগানিস্তান নিতান্ত পুচকে দল। সবে মাত্র এলো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। তাঁরা কি আর নিউজিল্যান্ডকে হারাতে পারবে বড় ব্যবধানে? জ্বি জনাব আশা কিংবা সম্ভাবনা অসীম। ভারতের কাছে পাত্তা না পেলেও গোটা টুর্নামেন্ট জুড়েই আফগানিস্তান নিজেদের ভাল খেলা উপহার দিয়ে আসছে।
যেই পাকিস্তান রীতিমত উড়িয়ে দিয়েছিল ভারত ও নিউজিল্যান্ডকে সেই পাকিস্তানের বিপক্ষে আফগানরা হেরেছিল শেষ ওভারের আগের ওভারে। তাও আসিফ আলীর ব্যাটিং তাণ্ডবে। আর অন্যদিকে স্কটল্যান্ডকে নাকানিচুবানি খাইয়ে জয় তুলে নিয়েছিল ১৩০ রানের। নামিবিয়ার বিপক্ষেও তাঁদের জয় ৬২ রানের। অভিজ্ঞতার বিচারে আফগানিস্তান এই দুই ম্যাচ এগিয়ে থাকলেও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আফগানিস্তানের বিশাল জয়ের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া অসম্ভব।
সুতরাং ব্ল্যাককাপস এবং আফগানদের ম্যাচের ফলাফলের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে ভারতের সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। তাই এই ম্যাচের দিকে তাকিয়ে থাকবে ভারত জাতীয় ক্রিকেট দল থেকে শুরু করে সারা দুনিয়ার ক্রিকেট পাগল সমর্থকেরা। কেননা ভারত সেমিফাইনালে উঠলে ভারত-পাকিস্তানের মহাদ্বৈরথের সম্ভাবনা আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে।
ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলি তবে একটা জায়গা বেশ নির্ভার থাকতে পারবেন। সেটা হলো রানরেট। ওহ! তাঁর দলের সবাই যে নিজেদের ছন্দ খুঁজে পেয়েছে সে দিকটা তো বলাই হয়ে ওঠেনি। তাহলে এই দুই দিক থেকে ভারত কিছুটা নির্ভার হয়ে খেলতে নামতে পারবে। যেহেতু ভারত রানরেট বিবেচনায় নিউজিল্যান্ড ও আফগানিস্তানের থেকে এগিয়ে রয়েছে, সুতরাং শেষ ম্যাচে নামিবিয়ার বিপক্ষে জয় ভারতকে নিয়ে যেতে পারে সেমিফাইনালে।
কিন্তু ভারতের সেমিফাইনালে যাবার ঝুলন্ত ব্রিজ আটকে আছে আফগানিস্তান নামক এক দড়িতে ভর করে। আফগানিস্তানের হেরে যাওয়া মানে ব্রিজ কলাপ্স করা এবং তাঁর ফলশ্রুতিতে বিদায় নেবে প্রথম আসরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়নরা।