ইনজুরির কাছে স্বপ্নের মৃত্যু। ক্রিকেট কিংবা যেকোনো খেলাতেই এই চিরায়ত বাক্যটি খুবই প্রাসঙ্গিক। এক ইনজুরির কবলে পড়ে কত খেলোয়াড় যে অসীম প্রতিভা থাকা স্বত্ত্বেও নিজেদের স্ফূরণ ঘটাতে পারেনি তার সংখ্যা গণনায় শেষ করা যাবে না। ফুল ফোটার আগেই ঝরে গিয়েছিল তাদের কলি।
কখনোই কোনো বিশ্বকাপ না খেলা শান মাসুদ পাকিস্তান দলে ফিরেছিলেন প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন নিয়ে। তবে স্বপ্নের পথে এখন বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে ইনজুরি। সবশেষ খবর হলো, মেলবোর্নে অনুশীলনের সময় একটি বল তাঁর মাথার ডানপাশে আঘাত করে।
আর এরপরই তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আঘাত গুরুতর কিনা তা এখনও নিশ্চিত না। তবে দু’দিন বাদেই ভারতের সাথে ম্যাচ। সেই ম্যাচে যে শান মাসুদ থাকছেন না তা প্রায় নিশ্চিতই। এমনই পুরো বিশ্বকাপ থেকেই ছিটকে যেতে পারেন তিনি।
ইনজুরির কারণে বিশ্বকাপের আগেই দল থেকে বাদ পড়েছিলেন রবীন্দ্র জাদেজা, জাসপ্রিত বুমরাহ, জোফরা আর্চারের মতো তারকারা। তবে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে থেকেও নতুন করে ইনজুরিতে পড়ছেন অনেকেই। কদিন আগেও যারা বিশ্বকাপ খেলার ভাবনায় নিমগ্ন ছিল তাদের এখন সময় কাটাতে হবে মাঠের বাইরে থেকে।
সীমিত ওভার ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের অন্যতম পেসার রিকি টপলি। সব ঠিকঠাক থাকলে তিনিই হতে পারতেন এ বিশ্বকাপে ইংলিশ পেস বোলিং লাইন আপের প্রধান অস্ত্র। ২০২২ সালে জুড়ে ছিলেন দুর্দান্ত ফর্মে। এ বছরে ইংল্যান্ডের হয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ১৭ টি উইকেট তিনিই নিয়েছিলেন।
তবে বিপত্তি বাঁধলো, ব্রিসবেনে অনুশীলন করার সময়। ফিল্ডিং ড্রিল করার সময় গোড়ালিতে আঘাত পান তিনি। আর এতেই বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন ফিকে হয়ে যায় টপলির। তাঁর বদলে স্কোয়াডে যুক্ত করা হয়েছে বাঁহাতি পেসার টাইমাল মিলসকে। যিনি ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দলেও ছিলেন। তবে তিনি বেশ ইনজুরিপ্রবণ। আগের বিশ্বকাপের পর ইনজুরির কারণেই দল থেকে ছিটকে পড়েন তিনি।
সুপার ১২ তে উঠার লড়াইয়ে আরব আমিরাতকে ৭৯ রানে হারানোর মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন দুশমন্থ চামিরা। ৩ ওভার ৫ বল করে মাত্র ১৫ রানের তিন উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। তবে নিজের শেষ ওভারে বল করতে গিয়ে পায়ের পেশিতে টান লাগে চামিরার।
পুরনো কাফ ইনজুরিতে আবারও আক্রান্ত হন তিনি। আর এখানেই বিশ্বকাপ শেষ হয়ে যায় শেষ হয়ে তাঁর। চামিরার পরিবর্তে দলে ডাকা হয়েছে রাজিথাকে। কিন্তু নতুন বলে বরাবরই ভাল শুরু এনে দিতেন চামিরা। তাঁর সেই সার্ভিস নিশ্চিতভাবেই মিস করবে লঙ্কানরা।
শ্রীলঙ্কার ইনজুরির সমস্যা এখানেই শেষ নয়। হ্যামস্ট্রিং ইনজুরির কারণে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়ায় চামিরার সঙ্গী হয়েছেন দানুস্কা গুনাথিলাকা। তাঁর জায়গায় স্কোয়াডে এসেছে আশেনা বান্দারা।
ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কার পর ইনজুরির মিছিলে যুক্ত হয়েছে এক অজি ক্রিকেটারও। ফুরফুরে মেজাজে সিডনিতে গলফ খেলতে গিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার উইকেট রক্ষক ব্যাটার জশ ইংলিশ। আর সেই গলফ খেলতে গিয়েই হাতে ব্যথা পান তিনি। আর এতেই বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়ে যান ইংলিশ। তাঁর বদলে স্কোয়াডে যোগ করা হয়েছে ক্যামেরন গ্রিনকে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিশ্বকাপ যাত্রা এরই মধ্যে শেষ। নামিবিয়াকে হারিয়ে তারা তাদের ইতিহাসে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচ জয়ের স্বাদ পেয়েছে। তারপরও পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে থেকেই বিশ্বকাপ অভিযান শেষ হয়েছে তাদের। তবে এই ছোট্ট মিশনেও ইনজুরির কবলে পড়েছিলেন জাওয়ার ফরিদ। তাঁর জায়গায় দলে ডাকা হয়েছিল ফাহাদ নওয়াজকে।
ইনজুরির মিছিলে এখনও নাম লেখায়নি বাংলাদেশ। তবে ওয়ার্ম ম্যাচে দেখা যায়নি লিটন দাসকে। ধারণা করা হয়, ছোট একটা ইনজুরির কারণে বিশ্রামে ছিলেন লিটন। তবে সেটি গুরুতর কিছু নয়, একদমই সাময়িক। টিম ম্যানেজম্যান্ট থেকে সেটিই জানানো হয়েছে৷
বিশ্বকাপের মূলপর্ব শুরু ২২ অক্টোবর থেকে। তবে এর মধ্যেই ইনজুরির মিছিলে লম্বা তালিকার ক্রমধারা শুরু হয়ে গিয়েছে। বিশ্বকাপের বাকিটা পথ খেলোয়াড়দের জন্য কতটা মসৃণ হবে সেটি সময়ই বলে দিবে। তবে বিশ্বকাপ শুরুর ৬ দিনেই ৬ ইনজুরি। বাকি দুই সপ্তাহর পথযাত্রায় তাই এ সংখ্যা বৃদ্ধির আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।