স্টিভেন ফিন, উত্থান-পতনের ভিতর-বাহির

মাত্র ১৬ বছর বয়সে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক। সেখান থেকে তিন বছরের মাথায় জাতীয় দলে। ইংলিশ পেসার স্টিভেন ফিনের ক্যারিয়ারের শুরুটা হয়েছিল দুর্দান্ত। বাংলাদেশের বিপক্ষে অভিষেক সিরিজে লর্ডসে প্রথম ইনিংসে চার উইকেটের পর দ্বিতীয় ইনিংসে শিকার করেন পাঁচ উইকেট। সাদা পোশাকের সাথে সাথে ওয়ানডেতেও দ্রুতই বনে যান দলের নিয়মিত এখন মুখ। কিন্তু ইনজুরি আর অধারাবাহিকতায় সম্ভাবনাময়ী এক ক্যারিয়ার থমকে যায় অনেকটা তাড়াতাড়ি।

২০১০ সালে লর্ডসে ৮৭ রানের বিনিময়ে শিকার করেছিলেন পাঁচ উইকেট। গ্লেন ম্যাকগ্রার সাথেও অনেকেই তখন ফিনকে তুলনা করেছিলেন। পরের সাত বছরে দলে আসা যাওয়ার মাঝেই ছিলেন ফিন। ২০১৩-১৪ অস্ট্রেলিয়া সফরে তিনি একমাত্র খেলোয়াড় ছিলেন তিনি কোনো ম্যাচ না খেলেই বাড়ি ফিরেছিলেন।

ইংলিশ কোচ অ্যাশলে জাইলস তখন বলেছিলেন, ‘স্টিভকে নেওয়ার মতো অবস্থায় সে নেই।’ পরের বছর এজবাস্টনে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সুযোগ পেয়েই ৭৯ রানে শিকার করেন ৬ উইকেট। এবং সেই ম্যাচে ম্যাচ সেরাও নির্বাচিত হন তিনি। সেবার ইংল্যান্ডও অ্যাশেজ পুনরুদ্ধার করে।

এক সাক্ষাৎকারে ফিন বলেন, ‘আমি বাসায় খুব বেশি ক্রিকেটের স্মৃতি রাখিনি। এই জায়গাটা আরাম করার। আমি চিন্তা করেছি এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে নিজের কিছু সেরা স্মৃতি রাখা। তাই গুরুত্বপূর্ণ কিছু স্মৃতি আছে।’

ফিনের বাসার একটি তাঁকে ইংল্যান্ড ও মিডলসেক্সের টুপি রাখা। দুইটি মেডেলও রাখা আছে। এ ব্যাপারে ফিন বলেন, ‘ এই দুই মেডেল আমার খুব পছন্দের। ২০১৫ অ্যাশেজে ম্যাচ সেরা হবার মেডেল।’ মেডেলের পাশেই একটা টুপি রাখা! যেটি ইংল্যান্ডের বর্তমান টেস্ট অধিনায়ক জো রুট তাঁকে উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন। ফিন বলেন, ‘আমি জানি না এটা কি ছিল। এজবাস্টন টেস্টের পর তাঁকে কেউ এটা দিয়েছিল। হতে পারে তাঁর ব্যাটে শেষ জয়ের রান এসেছিল তাই। সে আমাকে বলেছিল যে তুমি যেহেতু ম্যাচ সেরা হয়েছো এটা তুমি রাখো।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই টুপি আর মেডেলগুলো খুব প্রিয় আমার। কারণ আমি যখন ছোট ছিলাম আমি গ্লেন ম্যাকগ্রাকে খুব পছন্দ করতাম। অস্ট্রেলিয়া ইংল্যান্ডকে যখনি হারিয়ে দিতো আমার বেশ খারাপ লাগতো। তাই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২০১০-১১, ২০১৩ ও ২০১৫ অ্যাশেজ জয় আমার জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। গেল কয়েক বছর ধরেই ক্যারিয়ারে আমার উত্থান-পতন আছে। এটা সবারই থাকে। আপনাকে যথাসম্ভব শান্ত থাকতে হবে, ধৈর্য্য ধরতে হবে। এবং খারাপ সময়গুলোতে শিক্ষা নিতে হবে যাতে ভাল সময়গুলো আর ভাল হয় যখন আপনি খেলতে নামবেন।’

ক্রিকেটের বাইরে নিজের বাড়ির দ্বিতীয় তলার কাজও করছেন ফিন। সেখানে নিজের প্রেমিকা রোজকে নিয়ে থাকেন এই ইংলিশ পেসার। ফিন বলেন, ‘আমি যখন এই রুমে প্রবেশ করি আমার কাছে মনে হয় এটাই আমার জন্য সঠিক জায়গা। আমি উঁচু সিলিং পছন্দ করি, বড় বড় খোলা জানালা, ছোট বারান্দা। আমি বেডরুমে সকাল বেলা সূর্য উপভোগ করতে পারি এবং বিকালটা বারান্দায় কাটাই। মেঝেটা কমলা রঙের মতো, একটু ভয়ংকর। আমরা এখানে কাঠের মেঝে করছি। এটার প্রকৃত রঙটাই রেখেছি। ছোট একটা আগুনের ঘর আছে যেখানে কাঠ জ্বালাবো।’

দুই বেডরুমের মেঝেটা কার্পেটে মোড়ানো। অবশ্য রান্নাঘরের কাজ এখনো তিনি ধরেননি। ফিন বলেন, ‘যেহেতু ক্রিকেটার হিসেবে সবসময়ই লম্বা পথ ভ্রমণ করা লাগে। তাই খুব কম সময়ই পাওয়া যায় রান্নার জন্য।’

লন্ডনের ওয়াটফোর্ডে জন্ম আর সেখানেই বেড়ে ওঠা ফিনের। ফিনের বাবাও ছিলেন এখন পেসার। ফিন বলেন, ‘মানুষ এখনও আমাকে এসে বলে তুমি বেশ গতিতে বল করতে পারো। কিন্তু তোমার বাবার মতো না।’

ফিন পেশাদার ক্রিকেট খেলবেন কিনা সেটা কখনো ভাবেননি। লাফবোরো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ক্রীড়া বিজ্ঞানে পড়াশোনা করেন তিনি। ফিন বলেন, ‘২০০৭ সালে মিডলসেক্সের হয়ে তিনটি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ম্যাচ খেলেছিলাম। এটা একটা সুযোগ ছিল যে আমার মধ্যে কতটুক ক্রিকেট আছে দেখার। যদি ব্যর্থ হতাম তাহলে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে যেতাম। কিন্ত আমি দেখলাম এটা আমার দ্বারা সম্ভব। তিন বছর বাদেই আমি জাতীয় দলের হয়ে টেস্ট খেলার সুযোগ পাই।’

বর্তমান সময়ে ছোটরা খেলার প্রতি কতটা আকৃষ্ট হবে সে নিয়েও বেশ চিন্তিত এই ইংলিশ পেসার। তিনি বলেন, ‘এখন আগের চেয়ে ছোটদের খেলার প্রতি আকর্ষণটা কম। কারণ আমরা যখন খেলেছি তখন ভিডিও গেমস বা ফোন বা অত্যাধুনিক এসব প্রযুক্তি ছিল না। আমাদের দায়িত্ব যে ছোটদেরকে খেলার প্রতি আকৃষ্ট করা। আমি যখন ছোট ছিলাম চ্যানেল ফোরে ক্রিকেট দেখাত। আমি অ্যাশেজ সিরিজ দেখতাম। সে সময় তো সব ম্যাচ দেখা যেত না। এখন স্যাটেলাইটের কারণে সব ম্যাচই উপভোগ করা যায়। এরপর টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট আসলো।’

পুরো ক্রিকেট বিশ্বেই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা এখন অনেক। ফিন বলেন, ‘যারাই ক্রিকেট খেলেছে বা বুঝে তাদের কাছে টেস্ট ক্রিকেটটা বড় চ্যালেঞ্জ। এখন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের মাধ্যমে দ্রুত নজরে আসা যায়। খেলার মধ্যে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট এখন বড় জায়গা জুড়ে আছে। এটা খেলতেও যেমন ভাল লাগে তেমনি বাইরে থেকে দেখতেও। আমার লক্ষ্য ইংল্যান্ডের হয়ে টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে নিয়মিত হওয়া। এটা আমি গত সাত বছর ধরেই বলে আসছি। আমার এই লক্ষ্য আমাকে আরও ভাল করতে সাহায্য করবে। এবং আমি ক্রিকেট খেলা চালিয়ে যাব।’

ফিনের কাছে বাসায় একটি কৌটা আছে যেখানে তিনি অনেকগুলো বল সংগ্রহে রেখেছেন। এই বলগুলো দিয়ে তিনি ক্যারিয়ারের বিভিন্ন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ উইকেট নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ক্যারিয়ারের উত্থান-পতনের মাঝেও অনেক কিছু উপভোগ করা যায়। তাই আমি যখনি পাঁচ উইকেট বা ৫০ উইকেট, ১০০ টেস্ট উইকেট, ১০০ ওয়ানডে উইকেট, ৫০০ প্রথম শ্রেণির উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেছি আমি সেই বলগুলো নিজের সংগ্রহে রেখেছি এই কৌটায়। এটা খুব সামান্য এক জিনিস। বেডরুমের এক কোনায় রাখা আছে। মাঝে মাঝে সেখান থেকে বলগুলো তুলে পুরনো স্মৃতি মনে করি।’

Share via
Copy link