শিকারি পাখি ফিরেছে স্বরুপে

ইয়র্কারে পায়ের আঙ্গুলে যেমন ভেঙে ফেলতে পারেন, তেমনি বাউন্সারে ব্যাটারের নাক থেঁতলে দেয়ার সামর্থ্যও আছে

ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ, জাসপ্রিত বুমরাহ দ্বিতীয় স্পেল করতে যখন বেলিংয়ে আসলেন ক্রিজে তখন মোহাম্মদ রিজওয়ান। এই সেট ব্যাটারকে গতির বৈচিত্র্য আর টার্নের সাহায্যে পরাস্ত করেন তিনি – সরাসরি বোল্ড। পরের ওভারে শাদাব খানকেও আবারো বোল্ড করেন, এবার বলটা মিডল স্ট্যাম্প বরাবর পিচ করে অফ স্ট্যাম্পে আঘাত করেছিল।

শুধু এই দুইটি ডেলিভারি নয়, পুরো ম্যাচ জুড়ে একের পর এক দুর্দান্ত বল করে গিয়েছেন এ পেসার। সাত ওভারের স্পেলে দুই উইকেট ঝুলিতে পুরেছিলেন তিনি, আর রান দিয়েছিলেন কেবল মাত্র ১৯; আর ৪২ বলের মধ্যে ডট আদায় করেছেন ৩৩টা। স্বাভাবিকভাবেই ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরষ্কার উঠেছে তাঁর হাতে।

এর আগে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও দুই উইকেট পেয়েছিলেন এই তারকা। সে ম্যাচে ১০ ওভার হাত ঘুরিয়ে মাত্র ৩৫ রান দিয়েছিলেন তিনি। আফগানিস্তানের বিপক্ষে আরো বিধ্বংসী ছিলেন, মাত্র ৩৯ রানের বিনিময়ে তুলে নিয়েছিলেন চারটি উইকেট – সবমিলিয়ে টুর্নামেন্টের সেরা বোলারও এখন তিনি।

জাসপ্রিত বুমরাহ আসলে এমনই, প্রতিটা বলই মোহিত করে দর্শকদের। অথচ যখন তিনি রানআপ নিতে শুরু করেন তখন মনে হয় বোলিং নয়, ওয়ার্ম আপ করছেন। একটু পরেই আইকনিক একটা মুহূর্তে পৌঁছে যান এই ডানহাতি, তাঁর একটা মুষ্টিবদ্ধ হাত সোজা সামনে প্রসারিত হয়, অন্যটি অ্যান্টেনার মতো উপরে উঠে নিক্ষেপ করে দুর্ধর্ষ সব ডেলিভারি।

বুমরাহ স্রেফ পিচের ওপর নয়, বাতাসেও বল ঘোরাতে পারেন। কখনো কখনো একই ডেলিভারিতেও সুইংয়ের বৈচিত্র্য সৃষ্টি করেন। ইয়র্কারে পায়ের আঙ্গুলে যেমন ভেঙে ফেলতে পারেন, তেমনি বাউন্সারে ব্যাটারের নাক থেঁতলে দেয়ার সামর্থ্যও আছে। এমনকি ক্রিকেটের ভিন্ন তিন সংস্করণেই সমান তালে পারফর্ম করে যাচ্ছেন এই তারকা।

পরিসংখ্যানও সেই কথা বলে; টেস্টে এই পেসারের উইকেট সংখ্যা ১২৮টি। বোলিং গড় মাত্র ২২, আর স্ট্রাইক রেট ৪৯। অন্যদিকে ওয়ানডেতে তাঁর উইকেট ১৩৭টি; গড় ২৩.৫৭ এবং স্ট্রাইক রেট ৩০ এর একটু বেশি। রান বন্যার সংস্করণ টি-টোয়েন্টিতে বড্ড কিপ্টেমির পরিচয় দিয়েছেন তিনি; ওভারপ্রতি মাত্র ৬.৫৬ রান খরচ করছেন তিনি – এছাড়া এখন পর্যন্ত ১৯.৬৬ গড়ে ৭৪ উইকেট শিকার করেছেন।

অথচ কিছুদিন আগেও ইনজুরির কারণে ব্যঙ্গ বিদ্রূপের শিকার হতে হয়েছিল বুমরাহকে। জাতীয় দলে খেলার সময় এলেই ইনজুরি, আইপিএল খেলার সময় ফিট হবে – এমন অপ্রত্যাশিত কথাও শুনতে হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু নিন্দুকের কথাকে উড়িয়ে দিয়েই আকাশী-নীল জার্সিতে ফিরেছেন তিনি; আর এই ফেরাটা হয়েছে একেবারে রাজার বেশেই।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...