বাংলাদেশের নাগরিকত্বের প্রস্তাব, উদ্ভট দাবি খুররম মঞ্জুরের

ক্রিকেটের পাড় ভক্ত না হলে, পাকিস্তানি ক্রিকেটার খুররাম মনজুরকে খুব একটা চেনার কথা নয়। পাকিস্তানের জার্সি গায়ে ক্যারিয়ারে মাত্র ২৬ টি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন এ ক্রিকেটার। তাই খুররাম মনজুরকে আলাদা করে মনে রাখার কোনো কারণ নেই। তবে পিলে চমকে যাওয়ার মতো খবর হলো, পাকিস্তানি এই ক্রিকেটারকে নাকি জাতীয়তা দিয়ে বাংলাদেশের হয়ে খেলার প্রস্তাব জানিয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।

সম্প্রতি এমন এক বিস্ফোরক বিবৃতিই দিয়েছেন পাকিস্তানের এ ক্রিকেটার। ক্রিকেট পাকিস্তান নামের এক গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে  তিনি এ নিয়ে বলেন, ‘২০০৯ সালে বাংলাদেশ আমাকে নাগরিকত্বের প্রস্তাব দিয়েছিল। তারা চেয়েছিল, আমি বাংলাদেশের হয়ে খেলি। কিন্তু আমি সব সময় পাকিস্তানের হয়ে খেলতে চেয়েছি। তাই তাদের সেই প্রস্তাব আমি সবিনয়ে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম।’

২০০৮ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখা খুররাম মঞ্জুর অবশ্য পাকিস্তানের হয়ে নিজেকে তেমন রাঙাতে পারেনি। পাকিস্তানের হয়ে অর্জন বলতে রয়েছে শুধু একটি টেস্ট সেঞ্চুরি। এ ছাড়া জাতীয় দলের হয়ে এ ক্রিকেটার না পেরেছেন ক্যারিয়ার সমৃদ্ধ করতে, না পেরেছেন দলে নিজের জায়গা সংহত করতে। তবে খুররাম মঞ্জুর অবশ্য এ ক্ষেত্রে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন পাকিস্তানের সে সময়ের দল নির্বাচনকে।

খুররম মঞ্জুরের কোনো দাবিকেই আসলে খুব জোরালো মনে করার কোনো সুযোগ নেই। কারণ, এ পর্যায়ে তিনি বিরাট কোহলির সাথে নিজের তুলনা দেন। বলেন, ‘লিস্ট এ ক্রিকেটে আমার পরিসংখ্যান বিরাট কোহলির চেয়েও ভাল। ও প্রতি ৬ ইনিংসের সেঞ্চুরি করেছে। আর আমি প্রতি ৫.৭ ইনিংসে সেঞ্চুরি করেছি। আমার আসলে ধারণা নেই, পারফর্ম করার পরও কেন আমাকে জাতীয় দলে ডাকা হতো না। শেষ ১০ বছরে লিস্ট এ ক্রিকেটে গড়ের দিক দিয়ে সেরা ৫ ব্যাটারের আমি একজন। শেষ ৪৮ ইনিংসে আমার ২৪ টা সেঞ্চুরি আছে। ঘরোয়া টি-টোয়েন্টিতেও আমার সর্বোচ্চ সেঞ্চুরি। তারপরও আমি জাতীয় দলে পর্যাপ্ত সুযোগ পাইনি।’

ক্রিকেট পাকিস্তানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে খুররাম মনজুরের ভাষ্যে উঠেছে এসেছে আরো অনেক তথ্য। ৩৬ বছর বয়সী এ ক্রিকেটারের মতে, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অধিনায়ক হিসেবে বাবর আজমের চেয়ে বেশি বিচক্ষণ সরফরাজ আহমেদ। এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘বাবর এখনো শেখার মাঝে আছে। তবে সরফরাজ একজন দারুণ অধিনায়ক। তাঁর নেতৃত্বে পাকিস্তান আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জিতেছে। এর আগে পাকিস্তান অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপও জিতেছিল তাঁর অধীনেই। তাঁর মধ্যে প্রকৃতি প্রদত্ত নেতৃত্বের কৌশল আছে। যা বাবরের মাঝে নেই।’

পাকিস্তানের কোচ হিসেবে দীর্ঘ এক সময় কাটিয়েছেন মিকি আর্থার। সেই মিকি আর্থারকে নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানান খুররাম মঞ্জুর। তিনি বলেন, ‘উনি ভাল কোচ। তবে ২০১৬ সালে যখন দলের দায়িত্ব নিলেন, তখন তিনি ৩০ জনের দলেও আমাকে রাখেননি। অথচ সেই সময় ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে ছিলাম আমি।’

আইপিল নাকি পিএসএল? খুররাজ মনজুরের দৃষ্টিতে কোনটি সেরা? এমন প্রশ্নে খুররাম মনজুর তুলনায় না গিয়ে বলেন, ‘আসলে এই দুটি লিগের মাঝে তুলনা করা ঠিক না। কারণ কোয়েটা গ্লাডিয়েটর্সের পুরো দলের মূল্যই যেখানে ৮ কোটি রূপি, সেখানে এবার স্যাম কারেনকে নিতে পাঞ্জাব কিংস খরচ করেছে ১৮.৫০ কোটি রূপি।’

তবে মানের দিক দিয়ে এ ক্রিকেটার আবার পিএসএলকেই এগিয়ে রেখেছেন। এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘পিএসএল অবশ্যই কিছুটা এগিয়ে। পিএসএলের প্রতিটা দলেই আপনি ৯০ মাইল গতিতে বল করা বোলার পাবেন। কিন্তু আইপিএলে সেটি পাবেন না। তাছাড়া, আইপিএলের চেয়ে পিএসএলের খেলায় বাউন্ডারি এরিয়া বড় থাকে। আইপিএলে তো ৬০ মিটার বাউন্ডারিতেও খেলা হয়।’

২০০৮ সালে ওয়ানডে অভিষেক হওয়া খুররাম মনজুর তাঁর শেষ ওডিআইটা খেলেন পরের বছরেই, ২০০৯ সালে। ৭ ম্যাচের ছোট ওয়ানডে ক্যারিয়ারে তাঁর নামের পাশে রয়েছে ৩ টি অর্ধ-শতক। আর ১৬ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে খুররাম সর্বশেষ টেস্ট খেলেন ২০১৪ সালে। টেস্ট আর ওয়ানডের পর পরবর্তীতে ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেও জায়গা মিলেছিল। কিন্তু মাত্র ৩ ম্যাচেই শেষ হয়ে যায় তাঁর পাকিস্তানের সাথে পথচলা।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link