আন্তর্জাতিক ক্রিকেটটা ক্রিকেট বিশ্বের সবচেয়ে বড় মঞ্চ। এখান পর্যন্ত আসতে একজন ক্রিকেটারকে পাড়ি দিতে হয় কঠিন পথ। সেই ছোটবেলা থেকে খেলাটার প্রতি ভালবাসা থেকে করে যান অক্লান্ত পরিশ্রম। সেই পরিশ্রম্যের মূল্য হিসেবে যারা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেদের উজার করে দিতে পারেন তাঁরাই তো বড় ক্রিকেটার। দর্শকদের ভালবাসায় প্রতিটা মুহূর্তে স্নিগ্ধ হন তাঁরা।
মুদ্রার উল্টো পিঠে এমন কয়েকজন ক্রিকেটারও আছেন যারা সময়ের আগেই ছেড়ে গেছেন। আসলে বিদায় নেয়ার সঠিক সময়ই বা কোনটা। বলা হয়, যখন সবাই বলবে ‘যেও না’ তখনই বিদায় নেয়ার সঠিক সময়। সে হিসেবে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটের কয়েকজন তারকা সঠিক সময়েই বিদায় নিয়েছেন। তাঁদের নিয়েই এই তালিকা।
- মাহেলা জয়াবর্ধনে
শ্রীলঙ্কা ও বিশ্বক্রিকেটের ইতিহাসে অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন মাহেলা জয়াবর্ধনে। ১৯৯৭ সালে শ্রীলঙ্কার জার্সিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষিক্ত হন। এরপর বিশ্বের বাঘা বাঘা সব বোলারদের সীমানা ছাড়া করেছেন। তিন ফরম্যাটের শ্রীলঙ্কার অন্যতম সফল ব্যাটসম্যান। টেস্ট ও ওয়ানডে দুই ফরম্যাটেই জয়াবর্ধনের ঝুলিতে আছে ১০ হাজারেরও বেশি রান। এছাড়া টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেও ১৪৯৩ রানের মালিক তিনি।
তবে ক্রিকেটে দারুণ সময় পাড় করা অবস্থাতেই সবাইকে অবাক করে বিদায়ের ঘোষণা দিয়েছিলেন এই ব্যাটসম্যান। ২০১৫ সালে একই দিনে তিন ফরম্যাটের ক্রিকেটকেই বিদায় জানান শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের এই মহাতারকা।
- শিহান জয়াসুরিয়া
এই তালিকার নতুন সংযোজন শিহান জয়াসুরিয়া। দেশটির এই ব্যাটিং অলরাউন্ডার ২০১৫ সালের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষিক্ত হন। মাত্র পাঁচ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে খেলেছেন ১২ টি ওয়ানডে ও ১৮ টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। এই ক্রিকেটারের ঝুলিতে সবমিলিয়ে ৪৩৬ রানের পাশাপাশি আছে ৬ টি উইকেটও।
তবে ২০২১ সালে সবাইকে অবাক করেই মাত্র ২৯ বছর বয়সে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট থেকে অবসর নেন। অবশ্য শোনা যায় তিনি স্বপরিবারে পাড়ি জমাবেন আমেরিকায়। সেখানে আমেরিকার হয়ে ক্রিকেট খেলারও কথা রয়েছে তাঁর।
- কুমার সাঙ্গাকারা
শ্রীলঙ্কা ও বিশ্বক্রিকেটের আরেক কিংবদন্তির নাম কুমার সাঙ্গাকারা। দেশটির এই ব্যাটসম্যান ক্রিকেট ইতিহাসেরই অন্যতম সফল। তাঁকে শ্রীলঙ্কার হয়ে তিন ফরম্যাটেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে দেখা গেছে। জয়াবর্ধনের মত এই ব্যাটসম্যানেরও টেস্ট ও ওয়ানডে ঝুলিতে আছে ১০ হাজারেরও বেশি রান। টেস্টে ৫৭ ও ওয়ানডেতে প্রায় ৪২ গড়ে রান করেছেন তিনি।
বন্ধু মাহেলা জয়াবর্ধনের সাথে একই দিনে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলেন তিনি। যদিও ক্রিকেট থেকে অবসর নেয়ার সময়ও দারুন ফর্মে ছিলেন তিনি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে টানা ছয়টি সেঞ্চুরি করেছেন সেই সময়ই। এছাড়া শেষ বিশ্বকাপেও তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ৫০০ এর বেশি রান। তবুও কোন এক অজানা কারণে ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছিলেন এই কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান।
- উপল থারাঙ্গা
উপল থারাঙ্গা ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন ২০১৯ সালে। তিনি শ্রীলঙ্কার হয়ে ১৫ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেললেও নিজের সেরা সময়েই ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছে। ওয়ানডে ক্রিকেটে দারুণ সময় পাড় করছিলেন তিনি। প্রায় ৭০০০ রানের কাছাকাছি এসে ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন এই ব্যাটসম্যান।
এছাড়া শ্রীলঙ্কার হয়ে ৩১ টেস্টেও তাঁর ঝুলিতে আছে ১৭৫৪ রান। ওদিকে ২৬ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে তাঁর ঝুলিতে আছে ৪০৭ রান। ফলে তাঁর বিদায়েও বড় সর ধাক্কা খেয়েছল লংকান ক্রিকেটের ভক্তরা।
- আসাঙ্কা গুরুসিনহা
শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের এক অনুল্লেখ্য নায়কের নাম আসাঙ্কা গুরুসিনহা। শ্রীলঙ্কার ১৯৯৬ বিশ্বকাপ জয়ের পিছনেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল এই ক্রিকেটারের। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছিলেন সময়ের আগেই।
১৯৯৬ বিশ্বকাপের ফাইনালেও অসাধারণ একটি হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। তবে বিশ্বকাপ জয়ের পরই তাঁকে ট্রেনিং এর জন্য মেলবোর্ন যেতে বলা হলে তা অস্বীকার করেন এই ব্যাটসম্যান। ফলে হঠাতই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানান তিনি।
- থিসারা পেরেরা
২০১৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ‘উইনিং শট’ আসে তাঁর ব্যাট থেকেই। ২০১১ সালের ফাইনালও খেলেছেন। তবে, এটা ঠিক যে যে সম্ভাবনা তাঁর মধ্যে ছিল – সেটা পরিপূর্ণতা পায়নি। ফিটনেস আর অফ ফর্মের কারণে শেষ সময়ে জাতীয় দলে যাওয়া আসার মধ্যে ছিলেন। তবে, ২০২১ সালেই অবসর নেওয়া এই লঙ্কান অলরাউন্ডারের বয়স তাঁর পক্ষে ছিল। ফলে, আরেকবার চেষ্টা করলেও পারতেন।
পেরারা শ্রীলঙ্কার হয়ে ছয়টি টেস্ট, ১৬৬ ওয়ানডে এবং ৮৪ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন। তাছাড়া নানা ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগেও নিয়মিত ক্রিকেট খেলতেন এই অলরাউন্ডার। তবে মাত্র ৩২ বছর বয়সেই সবাইকে অবাক করে অবসরের ঘোষণা দেন এই ক্রিকেটার।