আমি পারিনি ছুঁতে তোমায়!

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের কিংবদন্তিরা নানা সময়ে নানা অর্জনের সাক্ষী হয়েছেন। এর মধ্যে কারো কারো অর্জন তো এমন যে সেটা আজ অবধি কেউ ছুঁতে পারেনি। তবে রথী মহারথীদেরও আক্ষেপ থাকে, থাকে না ছুঁতে পারার বেদনা। ক্রিকেটের কিংবদন্তিদেরও আছে সেরকম কিছু আক্ষেপের গল্প! সেসব অবশ্য তাদের মাহাত্ম্যকে কমাতে পারেনি, তবে নক্ষত্রেরও তো কিছু না পাওয়া থাকে!

  • শচীন ও দুর্দান্ত একটি সিরিজ

সোনায় বাঁধানো ক্যারিয়ার বলতে যা বোঝায় শচীনের ঠিক তাই। শতকের শতক, সর্বোচ্চ রান – অর্জনের ঘট তাঁর এতটাই পূর্ণ যে গোটা ভূ-ভারতে তাকে বলা হয় ক্রিকেটের ঈশ্বর। তবে ক্রিকেটের এই কিংবদন্তীরও আছে না পাওয়া আক্ষেপ। একমাত্র টেস্টের সিরিজ বাদে তিনি তাঁর ক্যারিয়ারে টেস্ট সিরিজ খেলেছেন মোট ৬৭ টা আর কখনই কোন টেস্ট সিরিজে সব মিলিয়ে ৫০০ রানের মাইলফলক ছুঁতে পারেননি।

তবে এ মাইলফলকের সবচাইতে কাছাকাছি তিনি গিয়েছিলেন  ২০০৮ সালে, অস্ট্রেলিয়ার সাথে চার ম্যাচের টেস্ট সিরিজে তিনি করেছিলেন ৪৯৩ রান। এমনকি ২০১০ সালে একবার দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজেও তিনি করেছিলেন ৪০৩ রান! কিন্তু কখনই কোন সিরিজে তিনি ৫০০ রান কর‍তে পারেননি!

  • ওয়াসিম আকরাম, ব্রেট লি আর ছয়ের আক্ষেপ

পাকিস্তানের ওয়াসিম আকরাম আর অস্ট্রেলিয়ার ব্রেট লি’র ওয়ানডে ক্রিকেটে অন্যরকম এক আবেদন আছে। প্রথমজন এই ফরম্যাটে ৫০০ উইকেট পাওয়া প্রথম বোলার আর দ্বিতীয়জন তো ক্যারিয়ারই শেষ করেছেন অস্ট্রেলিয়ার ওয়ানডে ফরম্যাটের সর্বকালের সেরা বোলারের তকমা নিয়েই।

পুরো ক্যারিয়ারজুড়ে সাড়ে তিনশোর বেশি উইকেট নিলেও দুজনই এসে মিলে গেছেন একটি আক্ষেপে- কখনই যে ম্যাচে ছয় উইকেট পাওয়া হয়নি। আকরাম ছয়বার আর ব্রেট লি পাঁচবার ওয়ানডেতে ম্যাচে পাঁচ উইকেট পেয়েছেন কিন্তু কোনদিনই সেটাকে ছয়ে নিয়ে যেতে পারেননি। তবে আরেকটা পরিসংখ্যান দেখলে আকরামের একটু মন  খারাপ হতে পারে। ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি উইকেট পাওয়া বোলারদের মধ্যে চারজনেরই আছে এই কীর্তি, নেই শুধু ওয়াসিম আকরামের!

  • রিকি পন্টিং ও ভারত জয়

সাদা পোশাকে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ‘ব্যাটসম্যান’ রিকি পন্টিংয়ের মত ‘অধিনায়ক’ রিকি পন্টিংও সর্বকালের সেরাদেরই একজন। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে তিনি ৭৭ টেস্ট ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে ৪৮ ম্যাচেই মাঠ ছেড়েছেন জয় নিয়ে। তবে এত দুর্দান্ত এই অধিনায়কেরও আছে জয় না করা দেশ- ভারত!

নিজের অধিনায়কত্বের ক্যারিয়ারে কখনই ভারতের মাটিতে টেস্ট ম্যাচ জিততে পারেননি তিনি। তবে ২০০৪ সালে ভারতের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া ২-১ এ সিরিজ জিতেছিল, কিন্তু সে সময়ও তিনি ইনজুরি বাধিয়ে দলের বাইরে ছিলেন! পন্টিং নিশ্চয়ই সে দুঃস্মৃতি মনে করতে চাইবেন না।

  • সাঙ্গাকারা ও ক্যারিবিয়ান দ্বীপের শতক

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টেস্ট ওয়ানডে সব ফরম্যাট মিলিয়ে কুমার সাঙ্গাকারা এক অনন্য নাম। নিজের খেলা ৫৯৪ আন্তর্জাতিক ম্যাচে সাঙ্গাকারার নামের পাশে আছে ৬৩ সেঞ্চুরির রেকর্ড যেটা কিনা শচীনের একশো আর পন্টিংয়ের একাত্তর সেঞ্চুরির পর তৃতীয় সর্বোচ্চ। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের তৃতীয় সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির মালিক হয়েও কখনই ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে সেঞ্চুরি করতে পারেননি তিনি।

ওয়েস্ট ইন্ডিজে চার টেস্ট খেলে তিনি করেছেন তিন হাফ-সেঞ্চুরি আর ওয়ানডেতে এখানে ২২ ম্যাচ খেলে করেছেন ছয় হাফ-সেঞ্চুরি যার মধ্যে একটি আবার অপরাজিত ৯০ রানের ইনিংস। কিন্তু ক্যারিবিয়ান মাটিতে এই হাফ-সেঞ্চুরি গুলো কখনই পূর্ণতা পেতে পারেনি সাঙ্গাকারার ব্যাটে।

  • দ্রাবিড়, ভাস ও একটি সিরিজ সেরার আক্ষেপ

রাহুল দ্রাবিড় আর চামিন্দা ভাস দুজনেই ওয়ানডেতে দলে খেলেছেন যথাক্রমে শচীন টেন্ডুলকার আর মুত্তিয়া মুরালধরণের পাদপ্রদীপের সময়ে। তবে ফোকাসটা কম পেলেও পারফর্ম দুজনই করেছেন সমানতালে। রাহুল দ্রাবিড় যেমন ওয়ানডেতে করেছেন ১০,৮৮৯ রান, চামিন্দা ভাস তেমন নিয়েছেন চারশো উইকেট!

তবে এই দুজনেরও আক্ষেপ মিলে গেছে একটা জায়গাতে। নানা সময়ে ওয়ানডেতে ম্যাচসেরার পুরস্কার পেলেও কখনই ওয়ানডেতে সিরিজ সেরার পুরষ্কার পাওয়া হয়নি এই দুজনার। রাহুল দ্রাবিড় যেমন ১৪ বার ওয়ানডেতে ম্যাচসেরা হয়েছেন, ভাস এই এওয়ার্ড নিয়েছেন ১১ বার। কিন্তু গোটা একটা সিরিজ সেরার পুরষ্কার? কখনই না!

 

লেখক পরিচিতি

আদ্যোপান্ত স্টোরিটেলার!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link